সুকান্ত বসু, কলকাতা: আজ মহাসপ্তমী। পূর্ব যাদবপুরের নয়াবাদে যাদবপুর কো অপারেটিভ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো এবারও ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে। এখানকার প্রতিমা সাবেকি এবং একচালার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল রবীন্দ্রনাথ সামন্ত। উপস্থিত ছিলেন স্বামী হীতেশানন্দ, স্থানীয় কাউন্সিলার অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। পুজো উপলক্ষে প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পংক্তি ভোজন। ৬৭ তম বর্ষে পা দিল উত্তর বেলঘরিয়া দেশপ্রিয় নগর মোড়ের চৌরঙ্গি বন্ধুবৃন্দ পরিচালিত পুজো ‘অকাল বোধন’। পুজো কমিটি তরফে হাবুল দে জানান, এই পুজো বারোয়ারি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। ভোগ, আরতি, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ছাড়াও মিষ্টিমুখ, দেবীবরণ এসব তো থাকছেই। নদীয়ার রানাঘাটে কুমার ষাটপুর সর্বজনীন দুর্গাপুজোর এবার সুবর্ণ জয়ন্তীবর্ষ। প্রবীণ আইনজীবী তথা দায়রা বিশেষজ্ঞ জগদীশচন্দ্র মজুমদারের মা প্রিয়বালা মজুমদারের অনুপ্রেরণায় এক সময় শুরু হয়েছিল এই পুজোর আয়োজন। এখন ফি বছর এই পুজো অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পুজোর কয়েক দিন চলে পংক্তিভোজ। সন্ধ্যায় হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। বিজয়ার দিনে সন্ধ্যায় দেবীকে বরণের পর গ্রামের বড় জলাশয়ে হয় নিরঞ্জন। জগদীশবাবু জানান, আগে মণ্ডপেই প্রতিমা গড়তেন পাড়ার মৃৎশিল্পীরা। এখন স্থানীয় কুমোরপাড়া থেকে বায়না দিয়ে প্রতিমা আনা হয়। শহরতলির অতুলকৃষ্ণ ব্যানার্জি লেনে ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো বহু পুরনো। ওই পরিবারের সদস্য পাঁচুগোপাল ভট্টাচার্য ও তাপস ভট্টাচার্য বলেন, এখানকার প্রতিমা হল একচালার। নিষ্ঠার সঙ্গেই পুজোপাঠ হয়। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো ও দশমীর দিন সিঁদুর খেলায় অংশ নেন বহু মহিলা। কসবার ‘ক্যানভাস’ আবাসনের পুজো এবারও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালিত হচ্ছে। আবাসনের সকলেই এতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। পুজোর কয়েকটি দিন পংক্তিভোজের পাশপাশি থাকে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলে দেদার আড্ডা। এছাড়াও সমাজের অবহেলিত ও অসহায় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা, যাঁদের স্থান হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে, এমন কিছু মানুষ ও অসহায় কিছু শিশুকে নতুন পোশাক দেওয়া হয়। অষ্টমীর দিনে তাঁদের পুজো প্যান্ডেলেই ভোগ খাওয়ানো হয়। পার্ক সার্কাসে এবার উদ্দীপনীর ক্লাবের থিম নেপথ্য ভাবনা। এবছর তাদের পুজোর ৭৯ তম বর্ষ। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, পুজোর নেপথ্যে যাঁরা থাকেন, তাঁদেরই থিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এখানকার পুজোর বৈশিষ্ট্য হল হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, জৈন সব অংশের মানুষকে নিয়েই দেবী আরাধনা হয়। শিবরামপুর অশ্বথতলা সর্বজনীন পুজো কমিটির এবারের থিম অন্তর মম বিকশিত কর। রজতজয়ন্তী বর্ষে তাদের মণ্ডপ সেজে উঠেছে বাঁশ, টিস্যু পেপার, লোহা, প্যারিস, পুটিং ইত্যাদি দিয়ে। মানুষ খারাপ হোক বা ভালো, প্রতিটি মানুষের মনেই এক সুন্দর সত্ত্বা আছে, উমার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সেই সত্ত্বার বিকাশ ঘটুক, সেই ধারণাকেই তুলে ধরেছে এই পুজো কমিটি। শোভাবাজার বেনিয়াটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোয় গ্রামবাংলার হস্তশিল্পকে তুলে ধরা হয়েছে। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ ও নানা রংয়ের ছোঁয়া দিতে হস্তশিল্পের বিভিন্ন রূপকে এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ৭৫ তম বর্ষে তাদের মূল ভাবনা নতুনভাবে রঙিন আভাসে সেজে উঠুক বাংলার হস্তশিল্প। সাবেকিয়ানায় এখানে পুরোপুরি বিদ্যমান। থিম শিল্পী সুতনু মাইতি।
উত্তর শহরতলির পি কে সাহা লেনে পল্লিবাসীবৃন্দ এর পুজো এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। পুজোয় সন্ধ্যায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও ধুনুচি নাচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বরানগর কামারপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো এবার প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানকার প্রতিমা সাবেকি। এবার এই পুজো পড়ল ৯৩ তম বর্ষে। কসবার জগন্নাথ ঘোষ রোডে হ্যাপি হোম আবাসনের পুজো এবারও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিমা একচালার। পুজোর ক’দিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আবাসিকরা নিজেরাই এই অনুষ্ঠান করে থাকেন। রয়েছে অঙ্কন প্রযিোগিতার আসর। সঙ্গে মহাষষ্ঠী থেকে দশমীর রাত পর্যন্ত দু’বেলাই চলে পংক্তিভোজ।
ভবানীপুর নর্দান পার্কের বাইশের পল্লির পুজোয় এবারের থিম স্বর্ণমন্দির। স্বর্ণমন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। সেখানকার দেওয়াল ও ছাদে সোনার পাত দিয়ে যে কারুকাজ করা রয়েছে, তার হুবহু তুলে ধরা হয়েছে এই মণ্ডপে। স্বর্ণমন্দিরে যে ঝাড়বাতি ঝোলানো থাকে, তারও দেখা মিলবে এখআনে। প্রতিমা শিল্পী হলেন প্রদীপ রুদ্রপাল। মূল ভাবনা দীপক ঘোষের। বাগমারি রোডে জর্জবাগান স্বামী বিবেকান্দ স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো এবার ২৮ তম বর্ষে পড়ল। তাদের এবারের ভাবনা ‘গর্ভধারিণী’। সৃজনে আছেন পিকু সিং ও তনুশ্রী দাস। পুজো উদ্যোক্তাদের আশা, অন্য বছরের তুলনায় এবার তাদের মণ্ডপে ভিড় উপচে পড়বে। শহরতলির পাঠবাড়ি লেনে আশা আর্ট স্কুল প্রাঙ্গণে পুজো উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে ‘দুর্গা’ বিষয়ক প্রদর্শনীর। সংস্থার অধ্যক্ষ শৈলেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বলেন, এখানে স্থান পেয়েছে শতাধিক কচিকাঁচার আঁকা মা দুর্গার নানা ছবি। দশমী পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। বরানগর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমে (কাচের মন্দির) মা সারদাদেবীকে দুর্গারূপে পুজো করা হয়। আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী সত্যানন্দদেব এই পুজোর আয়োজন করেছিলেন। পুজো উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন। এখানে দশমীর দিন ঘট নিরঞ্জন হয়। দুপুরে লাঠিখেলা, তলোয়ার সহ ধুনুচি নাচ ও নানা অনুষ্ঠান হয়। ওঙ্কারনাথদেব প্রতিষ্ঠিত ডানলপ মহামিলন মঠেও এবার সাড়ম্বরে দুর্গাপুজো পালিত হবে।