কর্মক্ষেত্রে অশান্তি সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কারও শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার— ... বিশদ
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন, স্যাকরাপাড়া লেন এবং গৌর দে লেন। এই গলিগুলির বহু বাড়ি ধসে গিয়েছে, বসে গিয়েছে। অনেক বাড়ি বাইরে থেকে মোটামুটি ঠিকঠাক দেখালেও ঘরের মধ্যে ভেঙে ভেঙে পড়েছে ছাদ, দোতলার মেঝে। এমনই অবস্থা ১০/২, স্যাকরাপাড়া লেনের বাসিন্দা, পেশায় হোটেল ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্মী উমাদেবীর। তিনি ও তাঁর বাবা রাধাপদ দেবনাথ এই বাড়িতে থাকতেন। বিপর্যয়ের খবর পেয়ে যখন কর্মস্থল দার্জলিং থেকে কোনওরকমে এসেছিলেন বাস্তব অবস্থা দেখতে, তখন নিজের সাজানো-গোছানো বাড়ির হাল দেখে সেখানেই সংজ্ঞা হারান তিনি। মেট্রো নির্মাণকারী কেএমআরসিএল-এর তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। আপাতাত তাঁদের পরিবারের ঠাঁই হয়েছে চাঁদনি চক অঞ্চলের একটি হোটেলে।
গোয়েঙ্কা কলেজে কেএমআরসিএল-এর কন্ট্রোল রুমের সামনে দাঁড়িয়ে উমাদেবী বলছিলেন, তিনটি লেনের অনেক বাসিন্দাই বাড়ি থেকে অনেক জিনিসপত্র বের করে নিয়ে যেতে পারলেন। কিছুই বের করতে পারলাম না শুধু আমরাই মনে হয়। তাঁরই প্রতিবেশী কিশোরকুমার গুপ্তার বাবা প্রসাদ গুপ্তা এই বিপর্যয়কালীন সময়েই মারা গিয়েছেন। উমাদেবী অসুস্থ থাকায় তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অকুস্থলে তাঁকে আসতেই দিচ্ছিলেন না এতদিন। তবুও সাধের বাড়িকে চোখের দেখা দেখতে একপ্রকার জেদ ধরেই এদিন এসেছিলেন স্যাকরাপাড়া লেনের মুখে। পুলিসকে বলে কাছাকাছি যাওয়ার অনুমতি পেয়ে গলিতে ঢুকে নিজের বাড়ি খুঁজে পাননি তিনি। দিশেহারা অবস্থায় তিনি বলেন, আমাদের বাড়ির চারপাশে অবস্থিত লাহাবাড়ি, শীলবাড়ি, জয়সওয়ালদের বাড়ি ভেঙে ভেঙে পড়েছে আমাদের বাড়ির উপর। ফলে আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
এমনই অসহায় অবস্থা অসীম বড়ালের। তিনিও এই লেনেরই বাসিন্দা। গানবাজনা, যন্ত্রাণুষঙ্গ করা তাঁর একমাত্র জীবিকা। কিন্তু দামি সিন্থেসাইজার, হারমোনিয়াম, তবলা সবই রয়ে গিয়েছে বাড়ির মধ্যে। যেভাবে ঘরের ভিতর সব ভেঙে ভেঙে পড়েছে, তাতে আর কিছু আস্ত পাওয়া যাবে বলে আশা নেই তাঁদের। কাঁদতে কাঁদতে অসীমবাবুর দিদি বলেন, আমরা অনেকবার ঢুকতে চেয়েছিলাম। পুলিস অনুমতিই দিল না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। যাঁরা গানবাজনার জগতকেই পেশা করেন, পুজোর সময় থেকে পরবর্তী সময়টা তাঁদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে নানা জায়গায় অনুষ্ঠান করে তাঁরা উপার্জন করেন। মনমরা অসীমবাবু বলেন, এখন বন্ধুবান্ধবদের কাছে বাজনার যন্ত্রপাতি ধার চাইব। তাঁরা যদি সাহায্য করেন, তাহলে পুজোর সময় এবং তারপরের অনুষ্ঠানগুলিতে বাজাতে পারব।
বউবাজারের এই বিপর্যয়স্থল নিয়ে বেশ কয়েকদিনে মানুষের কৌতূহল অনেকটাই কমে এসেছে। কেএমআরসিএল ধীরে-সুস্থে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এই ধ্বংসভূমি থেকে মাঝেমাঝেই উঠে আসছে সব হারানোর কান্না, এতদিনের পরিচিত রোজনামচার জায়গায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভ্রুকুটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে এভাবেই তাড়া করছে।