অমিত চৌধুরী, তারকেশ্বর: পাটে রং দিয়ে গ্রামের বাড়িতে কুটির শিল্প হিসেবে তৈরি হয় প্রতিমার চুল। জিএসটির নামে পাটের চুল থেকে শাড়ি, রং— সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে। কিন্তু কারিগরের মজুরি ও পুজো উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় বরাত না মেলায় দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা। তারকেশ্বরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড, চাঁপাডাঙা, মির্জাপুর, সাহাপুর এলাকায় তৈরি হয় প্রতিমা। বিশ্বকর্মা পুজো থেকে সরস্বতী পুজো অথবা অসময়ের কালীপুজো, মনসা পুজো সহ একাধিক প্রতিমা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন কয়েকশো প্রতিমাশিল্পী। স্টুডিওর ভাড়া, বিদ্যুৎ খরচ ও উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন ভাবনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হিমসিম খেতে হচ্ছে প্রতিমা শিল্পীদের। অন্যদিকে এই বছর কমেছে প্রতিমার বরাত। তারকেশ্বর চাউলপট্টি এলাকার সত্তরোর্ধ্ব প্রতিমা শিল্পী প্রশান্ত কুণ্ডু বলেন, বংশ পরম্পরায় ঠাকুর তৈরি করছি। বাবার কাছ থেকে ঠাকুর তৈরির হাতেখড়ি। পড়াশোনার ফাঁকে ঠাকুর তৈরি করে প্রাইভেট টিউশনের বেতন দিতাম। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদাও বদলাতে শুরু করেছে। সাবেকি প্রতিমার পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে থিমের পুজোর। গত বছরের তুলনায় এই বছর প্রতিমার চাহিদা অনেকটাই কম। গত বছর ২৪টি দুর্গা প্রতিমা আমি তৈরি করেছিলাম। এই বছর তা কমে হয়েছে ১৭টি। এখনো তিনটি প্রতিমার বায়না হয়নি। ১২ জন কর্মী কাজ করছে। সর্বাধিক ৬০হাজার টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকায় প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। এই সমস্ত এলাকায় এর থেকে বেশি বাজেটের পুজোর বরাত আমরা পাই না। সেই প্রতিমার বরাত চলে যায় কলকাতার কুমোরটুলি, শ্রীরামপুর অথবা কৃষ্ণনগরে। কর্মীদের মজুরি যেমন বেড়েছে, তেমনি জিএসটির নামে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী আমাদের থেকে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করছে। জিএসটিতে কাঁচামালের দাম কমবে শুনেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি সেটা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কুটির শিল্প হিসেবে পাট দিয়ে ঠাকুরের চুল তৈরি হলেও ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে তার ওপরেও জিএসটি বসিয়ে টাকা নিচ্ছে। অন্যদিকে উদ্যোক্তারা দিনদিন পুজোর বাজেট কমানোর চেষ্টা করছে। প্রয়োজন অনুযায়ী চাঁদা তুলতে পারছে না পুজো উদ্যোক্তারা। প্রতিমা ছাড়াও আলো,প্যান্ডেল সহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়েছে উদ্যোক্তাদের। পুজোর সময় ৪-৫ মাস কাজ করে কোনওক্রমে সংসার চলে। অন্যান্য সময় সিমেন্ট ও ফাইবারের ওপর মূর্তি তৈরির কাজ করি। তারকেশ্বর লোকনাথের পুজো উদ্যোক্তা জীবন মণ্ডল বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা থাকায় ঠিকমতো চাঁদা তুলতে পারছি না। অন্যদিকে প্রতিমা, আলো, প্যান্ডেল সহ সমস্ত জিনিসের দাম বেড়েছে। আগামী দিন আমাদের মত মফঃস্বল এলাকায় ছোট ছোট পুজো উদ্যোক্তারা কীভাবে পুজো করবে সে বিষয়ে আমরা চিন্তিত।