সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা: জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র না মেলায় বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে কল্যাণী হাইওয়ের মধ্যে সংযোগকারী উড়ালপুলের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। যদিও প্রকল্পের টেন্ডার ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। এদিকে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত না হওয়ায় পথচলতি মানুষকে খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়। বিরাটি মোড় থেকে মাঝেরহাটি পাড়া দিয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে সব ধরনের গাড়িকে। সে কারণেই প্রায় দেড় কিমি দৈর্ঘ্যের একটি উড়ালপুল করার পরিকল্পনা করে পূর্ত দপ্তর। যার জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। উড়ালপুলটি তৈরির বরাত পেয়েছে ‘গ্যামন’ নামে একটি সংস্থা। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া) ছাড়পত্র না দেওয়ায় এখনও তারা কাজ শুরু করতে পারেনি। তবে এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। কোন এলাকা দিয়ে সেটি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি বলে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির কর্তা আর পি সিং জানিয়েছেন।
কল্যাণী হাইওয়ে অনেকদিন আগে তৈরি হলেও, জমি অধিগ্রহণের সমস্যায় সেটি আর বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি। বিরাটি মাঝেরহাটি এলাকায় জমি অধিগ্রহণের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয় নবান্ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৎকালীন পূর্তসচিব ইন্দিবর পাণ্ডে, তৎকালীন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বছর দুয়েক আগে জমি অধিগ্রহণে উদ্যোগী হন। উত্তর দমদম তৃণমূল সভাপতি বিধান বিশ্বাসের সহযোগিতায় জমির অনেক বেশি দাম দিয়ে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়। বাম আমলে যে দাম ঠিক হয়েছে, তার থেকে কাঠা প্রতি অনেক বেশি দাম দেওয়া হয়। সেই দামে রাজি হন স্থানীয় অধিকাংশ বাসিন্দা। সেই সমস্যার জট খুলে গেলেও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন না আসায় এখনও উড়ালপুলের কাজ শুরু হয়নি। তবে সয়েল টেস্টের কাজ ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে।
অত্যন্ত ব্যস্ত বি টি রোডকে যানযন্ত্রণা থেকে মুক্ত করতে কল্যাণী হাইওয়ে তৈরির পরিকল্পনা করেছিল কেএমডিএ। প্রথমে তা ছিল সোদপুরের কাছে মুড়াগাছা থেকে কাঁচরাপাড়া পর্যন্ত। পরে তা দীর্ঘায়িত করে বিরাটির এম বি রোড পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১১ সালের আগে রাস্তাটি তৈরি হলেও তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ছিল। কয়েক জায়গায় রাস্তায় খানাখন্দ দেখা দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে সেটিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলতে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে কেএমডিএ’র হাত থেকে রাস্তাটি পূর্ত দপ্তরকে দিয়ে দেওয়া হয়। পূর্ত দপ্তর দুটি ভাগে রাস্তাটি তৈরির পরিকল্পনা করেছে।
পূর্ত দপ্তরের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মুড়াগাছা পর্যন্ত রাস্তাটি নতুন করে তৈরি হবে। তার মধ্যে থাকবে উড়ালপুলটি। দ্বিতীয় দফায় মুড়াগাছা থেকে কল্যাণী পর্যন্ত চার লেনের সুন্দর রাস্তা হবে। কোনও কোনও জায়গায় নতুন করে করা হবে। এই কাজের জন্য টেন্ডার চূড়ান্ত হয়ে গেলেও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এখনও অনুমতি না দেওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। অবশ্য তারা উড়ালপুলটির নকশা পরীক্ষা করছে বলে এখনও ছাড়পত্র দিতে পারেনি বলে জানিয়েছে। এই উড়ালপুল হয়ে গেলে উত্তর কলকাতা, উত্তর শহরতলি ও উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যান চলাচল অনেক স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দমদম, বেলঘরিয়া, বিরাটি, সোদপুর, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, কল্যাণী যাওয়া অনেক সুবিধা হয়ে যাবে।