বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: খোদ কলকাতায় বড়সড় সাফল্য পেতে চলেছে আয়কর বিভাগ। দুই অবাঙালি ভাইয়ের হীরের দু’টি আলাদা ব্যবসা থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট। গত বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার আয়কর হানা চলছে ওই দুই ভাইয়ের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। ইনভেস্টিগেশন উইং ওই আয়কর হানা চালাচ্ছে। কালো টাকার সন্ধানে ইনকাম ট্যাক্স অফিসাররা একই সঙ্গে তদন্ত শুরু করেছেন মুম্বইতেও। সূত্রের খবর, শুধু কলকাতাতেই আয়কর দপ্তরের ১২ জন আইআরএস অফিসার ওই হানায় অংশ নিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন অন্যান্য কর্তারা। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে আজ, সোমবারও ওই আয়কর হানা চলার কথা। দপ্তরের কর্তারা বলছেন, শনিবার পর্যন্ত দেড় হাজার কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের হদিশ তো তাঁরা পেয়েছেনই। যেসব তথ্য মিলছে, তাতে কালো সম্পত্তি ও লেনদেনের অঙ্কের পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন অফিসাররা। সূত্রের খবর, এর আগেও ওই দুই ভাইয়ের হীরের কারবারে হানা দিয়েছিল আয়কর বিভাগ। কিন্তু তার চেয়ে এই হানা বহরে যেমন আরও বড়, তেমনই বেআইনি লেনদেনের হিসেবেও আগেরবারের সঙ্গে এর কোনও তুলনাই চলে না, বলছেন কর্তারা।
প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদি পরপর দু’টি প্রকল্প এনেছিলেন, যাতে কালো টাকা সাদা করার পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। এরপর পাশ করা হয় বেনামি লেনদেন আইন, যা দিয়ে কালো টাকা উদ্ধারের সুযোগ আরও বাড়ানো হয়। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সেই ব্ল্যাক মানি উদ্ধারের লক্ষ্য থেকে যে একচুল নড়বে না কেন্দ্র, তা স্পষ্ট করা হয় আয়কর কর্তাদের কাছে। ফলে ইনভেস্টিগেশন উইংকে আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয় সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস বা সিবিডিটি। বলা হয়, সার্চ ও সিজার, এককথায় নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আয়কর হানা বাড়াতে হবে সর্বত্র। পশ্চিমবঙ্গেও আসে সেই নির্দেশ।
গত বৃহস্পতিবার আচমকা হানা দেওয়া হয় দুই ভাইয়ের বিডন স্ট্রিট ও ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে। দুই ভাই-ই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর পদে রয়েছেন। সূত্রের খবর, এঁদের মধ্যে এক ভাই আয়কর হানা শুরু হওয়ার পরই প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেহিসেবি সম্পত্তির কথা জানিয়ে দেন। তাঁর সংস্থার হানা প্রায় শেষের পথে। কিন্তু অন্য ভাইয়ের বেআইনি কারবারের বহর আরও বড়। সেখানে ১০০ কোটি টাকার হীরের স্টক থাকার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। অবশ্য সেই হীরের অস্তিত্ব অফিসে নেই। অফিসাররা মনে করছেন, সেই হীরে ইতিমধ্যেই বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা জানতে পেরেছেন, ওই ব্যবসায়ীরা হীরে ব্যবসার আড়ালে নগদ টাকায় ধার দিতেন ‘গ্রে মার্কেট’-এ। চোরাই বাজারে সেই টাকা খাটত ব্রোকারদের হাত ধরে। সেখান থেকে যে আয় হতো, সেই টাকার একটি অংশ দিয়ে কালোবাজার থেকেই কেনা হতো হীরে। তার অধিকাংশই বিক্রি করা হতো কালোবাজারে।