বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবনচন্দ্রজিউ মঠের মহন্ত মহারাজ স্বামী গোবিন্দানন্দ পুরী বলেন, কথিত আছে লক্ষ্মীর সঙ্গে মন কষাকষি হওয়ায় জগন্নাথ লুকিয়ে মাসির বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। সেখানে ভালো ভালো খাবার পেয়ে জগন্নাথ মাসির বাড়িতেই আস্তানা গাড়েন। অন্যদিকে, লক্ষ্মীর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে যে, স্বামী বোধহয় পরকীয়ার টানে কোথাও চলে গিয়েছেন। পরে তিনি বৃন্দাবনের কাছে জানতে পারেন যে জগন্নাথ মাসির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তারপরেই স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে লক্ষ্মী লুকিয়ে গিয়ে মাসির বাড়িতে সর্ষেপোড়া ছিটিয়ে আসেন। কিন্তু, তাতেও কোনও কাজ না হওয়ায় বৃন্দাবন ও কৃষ্ণচন্দ্র লোকজন নিয়ে মাসির বাড়িতে হাজির হন। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন যে ঘরের তিনটি দরজাই বন্ধ। তাই লক্ষ্মীর অনুরোধে তাঁর স্বামীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরজা ভেঙে বৃন্দাবন ও কৃষ্ণচন্দ্ররা ভেতরে ঢোকেন। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেই তাঁরা দেখতে পান মালসায় করে রকমারি পদের খাবার সাজানো রয়েছে। ভালো ভালো খাবার চোখের সামনে দেখে তাঁরা সেই সমস্ত মালসা লুট করে নেন। যা ভাণ্ডার লুট নামে সকলের কাছে পরিচিত।
আবার আরেকটি অংশের দাবি, বৃন্দাবনচন্দ্রের প্রচুর ধনসম্পত্তি ছিল। রাজা তাঁর রাজ্যের শক্তিমানদের চিহ্নিত করার জন্য এই ভাণ্ডার লুটের আয়োজন করতেন। যে সমস্ত মানুষ বেশি সংখ্যায় ভাণ্ডার লুট করতেন তাঁদেরই বৃন্দাবনচন্দ্র তাঁর মন্দির পাহারার দায়িত্বে নিয়োগ করতেন। তবে প্রথা চালুর কারণ নিয়ে দ্বিমত থাকলেও প্রাচীন সেই রীতি মেনে এখনও প্রতিবছর উল্টোরথের আগের দিন মাসির বাড়ির মন্দিরের তিনটি দরজা একসঙ্গে খোলা হয়। ঘরের ভেতরে রকমারি খাবারের পদ মালসায় করে সাজানো থাকে। দরজা খোলর পর এই প্রসাদ নেওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। এই মালসাভোগ পাওয়ার জন্য কয়েক হাজার মানুষ উল্টো রথের আগের দিন প্রসাদ পাওয়ার জন্য গুপ্তিপাড়ায় হাজির হন।
গুপ্তিপাড়া পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, প্রতি বছরের মতোই এবারও ভাণ্ডার লুটের জন্য ফ্রায়েড রাইস, পনির, মালপোয়া, পায়েস, সন্দেশ, খিচুড়ি ও রাবড়ি সহ মোট ৫২ টি পদের খাবার সহ প্রায় ৫৫০ টি মালসা তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি মালসায় প্রায় ৫ থেকে ৮ কেজি করে খাবার রাখা হয়েছিল। রথযাত্রা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকাল থেকে দশ জন রাঁধুনি ও দশ জন জোগাড়ে সহ মোট ২০ জন রান্নার কাজ করবেন। নিয়ম মেনে দুপুর দুটোর আগেই সমস্ত খাবার তৈরি করে মালসায় সাজিয়ে মাসির বাড়িতে রাখা হয়। বিকাল ৩টায় মাসির বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর প্রতি বছরের মতো বিকাল সাড়ে ৫ টায় একসঙ্গে মাসির বাড়ির তিনটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। এরপরেই জগন্নাথের প্রসাদ পেতে ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়।