বিএনএ, বারাকপুর: কাঁচরাপাড়া, হালিশহরের পর এবার গাড়ুলিয়া পুরসভায় থাবা বসাল বিজেপি। বহুদিন ধরে যাঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা চলছিল। সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য নিয়ে এদিন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা গাড়ুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল সিং বিজেপিতে যোগদান করেন। ফলে, এই পুরসভাও এবার তৃণমূলের হাতছাড়া হয়ে গেল। তবে, এই বোর্ডে এখনও তৃণমূলের অনেক কাউন্সিলার রয়েছেন। তাঁদের অনেকের কাছে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আবেদন এসেছিল, তাঁরা ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এদিন পুরবোর্ড দখল হতেই দলীয় কর্মী, সমর্থকরা গাড়ুলিয়া পুরসভার সামনে আবির খেলায় মেতে ওঠেন। বাজিও ফাটানো হয়। তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ বলেন, তৃণমূলের জন্য কাউন্সিলার, চেয়ারম্যান, বিধায়ক হয়েছিলেন। তারপরও এই দল ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না। মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না।
এই পুরসভায় মোট ২১ জন কাউন্সিলার রয়েছেন। তার মধ্যে বিধায়ক তথা কাউন্সিলার সুনীল সিং সহ ১২ জন কাউন্সিলার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তার মধ্যে গৌতম বসু নামে একজন কংগ্রেস কাউন্সিলার রয়েছেন। তিনি বিধানসভা উপ নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনিও এদিন গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেন। আর তৃণমূলের এখনও ৮ জন কাউন্সিলার এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের একজন কাউন্সিলার রয়েছেন।
পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার পার্থ দত্তের কাছেও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আবেদন এসেছিল। কিন্তু, তিনি সেই আবেদনে সাড়া দেননি। পার্থবাবু বলেন, আমার দল প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। হয়তো কিছু খামতির জন্য আমাদের ভোট কমেছে। অনেক জায়গায় আমরা হেরেছি। আগামীদিনে আমাদের খামতি পূরণ করার চেষ্টা করব। সেটা সম্ভবও হবে। কিন্তু, দলের এই সময়ে নিজের দলকে ছেড়ে অন্য দলে চলে যাব এটা কাম্য নয়। তাই আমার কাছে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আবেদন আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। আমাকে সারাজীবন কাউন্সিলার থাকতে হবে, এমন তো নয়। প্রয়োজনে কাউন্সিলার পদ ছেড়ে দেব। তবে, আমি দল বদল করার পক্ষে নয়। এখনও আমাদের সঙ্গে ৮ জন কাউন্সিলার রয়েছেন। ওরা বোর্ড গঠন করেছে। আমরা বিরোধী থাকব।
বিধায়ক সুনীল সিংয়ের ছেলে আদিত্য সিং লোকসভা নির্বাচনের আগেই অর্জুন সিংয়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করেন। সংসদ সদস্য অর্জুন সিংয়ের আত্মীয় হচ্ছেন সুনীল সিং। ফলে, অর্জুন সিং বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থে঩কেই তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু, সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, দলনেত্রীর উপর তাঁর আস্থা রয়েছে। তিনি তৃণমূলে থাকবেন। সামান্য হলেও নোয়াপাড়া বিধানসভায় এবার তৃণমূল লিডও পেয়েছিল। গত ১৪ তারিখ কাঁচরাপাড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর মিটিংয়ে হাজির ছিলেন সুনীল। সেখানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেন। এরপরই এদিন দিল্লিতে তিনি ১২ জন কাউন্সিলার নিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেন।
এছাড়া ভাটপাড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সোমনাথ তালুকদারও এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগদান করেন। দিল্লি থেকে ফোন তিনি বলেন, বারাকপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ও একজন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য এদিন যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে, সুনীল সিংয়ের ছেলে আদিত্য সিং বলেন, গাড়ুলিয়া পুরসভাও এবার আমরা দখল করলাম। এখানকার মানুষ খুবই খুশি। এদিন পুরসভার সামনে আবির খেলা হয়েছে। বাজি পোড়ানো হয়েছে। অনেক জায়গায় ফ্লেক্স, ফেস্টুনও টাঙানো শুরু হয়ে গিয়েছে। মানিকতলায় সুনীল সিংকে স্বাগত জানিয়ে ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে।