পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
মাঝবয়সি ব্যক্তির নাম রেজাউল শেখ। বাড়ি মিনাখাঁর জয়গ্রামে। রীতিমতো কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, আমার মেয়ে আসমা খাতুন সকালে বন্ধুর বাড়ি থেকে অটোয় ফিরছিল। একটি গোরু এসে অটোয় ধাক্কা দেয়। অটো থেকে পড়ে গিয়ে আসমিনার বাঁ পায়ের হাড় ভেঙে যায়। মিনাখাঁয় স্থানীয় হাসপাতালে দেখিয়ে এক্স-রে করাই। সেখান থেকেই কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। তারপর থেকে শুধুই চক্কর কেটে চলেছি। প্রথমে গিয়েছিলাম এনআরএস হাসপাতালে। গিয়ে জানতে পারি, হাসপাতালের মূল গেটে তালা পড়েছিল আগেই। দুপুরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় শিয়ালদহ উড়ালপুলের দিকের গেটেও। সেখান থেকে মেয়েকে নিয়ে ছুটলাম চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও একই অবস্থা। আমাকে প্রায় ঢুকতে দিচ্ছিল না কেউ। কতবার বললাম, মেয়ের পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে। এভাবে ফিরিয়ে দিলে মেয়েকে পা খোয়াতে হবে। কিন্তু আমার কথা তো কানেই তুললেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। ফিরিয়ে দিলেন ওঁরা। নিয়ে চলে এলাম কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে আমার মেয়ে এভাবে রোদের মধ্যে পড়ে রয়েছে। কেউ ন্যূনতম সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। এই বলে কাঁদতে কাঁদতে আবারও ছুটলেন ওই ব্যক্তি। যাওয়ার সময় মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে গেলেন, খুব যন্ত্রণা হচ্ছে, না! আর একটু ধৈর্য ধর, আমি সুপারের ঘর থেকে আসছি। মাটিতে শুয়ে থাকা আসমা তখন আর কিছু বলার অবস্থায় নেই। শুধু যন্ত্রণায় কেঁদেই চলেছেন।
আসমার থেকে কিছুটা দূরেই বসেছিলেন চাঁচলের বাসিন্দা সামসুল শেখ। তাঁর শাশুড়ি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি। প্রতিদিনই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধপত্রের প্রয়োজন হয় তাঁর। হাসপাতালের খাবার খেতে দেওয়া হয় না তাঁকে। চিকিৎসার কারণেই শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে রয়েছেন সামসুল। বাড়ি থেকে শাশুড়ির জন্য খাবার নিয়ে আসেন তিনি। এদিনও বাড়ির খাবার নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন তিনি। কিন্তু সেই খাবার নিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা-আড়াই ঘণ্টা তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বললেন, জুনিয়র চিকিৎসকরা সকাল থেকে একবারও যাননি। এখন খাবার দিতে গিয়ে শুনি, ওষুধও পড়েনি। একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে কি এভাবে ফেলে রাখা যায়? যদিও কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া দু’-একজন জুনিয়র চিকিৎসক বললেন, আমাদের উপর বারবার হামলা হচ্ছে। কঠোর আইন আনা হচ্ছে না। দিনের পর দিন কি আমরা এভাবেই মার খেয়ে যাব? এবারও সরকারের টনক না নড়লে আমরা আন্দোলন চালিয়েই যাব।