উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
এমন সময়ে সুর কাটল। ভিড়ের ভিতর থেকে চোখা প্রশ্ন উড়ে এল কনীনিকাদেবী এবং সিপিএম সমর্থকদের দিকে। যে প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক মহলে অনেকেরই মুখে ঘুরেফিরে আসে— ‘দিদি, বামেরা কি আদৌ আছে?’ পিছনে ঘুরে তাকালেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা। প্রশ্নকর্তাকে খুঁজে পেলেন না। ক্ষণিকের হতভম্ব ভাব সামলে ভিড়েই ছুঁড়ে দিলেন পাল্টা জবাব— অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হতে দিন। হিসেব মিলিয়ে নেবেন। তারপর এই প্রশ্নও আর কোনও দিন করবেন না। এটুকু বলে ফের হাসিমুখে নমস্কার করে এগিয়ে চললেন নতুন গলিপথে।
প্রচার মিছিল ঢুকে পড়ল কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্কীর্ণ গলিপথ সতীন সেন সরণীতে। বাজার শেষ হতেই শুরু হয়ে গিয়েছে বস্তি অঞ্চল। ঠাসাঠাসি করে হাজার হাজার মানুষের ঘর-গেরস্থালি। ভোটবাজারে লাল-সবুজ-গেরুয়া পতাকার ছড়াছড়ি। টালির চাল থেকে বের করা বাখারিতে ঝুলছে নানা দলের নানা বর্ণের ঝান্ডা। গৃহকর্মে ব্যস্ত কোনও মহিলা স্রেফ মুখ ঘুরিয়ে মৃদু্ হেসেছেন প্রার্থীর নমস্কারের প্রত্যুত্তরে। কেউ আবার সপরিবারে বেরিয়ে এসেছেন দরজার কাছে। প্রচার মিছিলের সামনে হেঁটে যাওয়া সিপিএম কর্মী হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন লিফলেট। হাতে নেওয়ার সময় অবশ্য অনেককেই সতর্ক হতে দেখা গেল। সরাসরি মুখ ফেরালেন কেউ কেউ। অনেকে আবার চারপাশে একটু দেখে নিয়ে লিফলেট মুড়ে পকেটে ঢোকালেন জলদি।
সতীন সেন সরণী হয়ে প্রচার মিছিল ঢুকে পড়ে বাগমারি রোডে। বসবাসকারীদের বড় অংশই নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষজন। মোড়ে মোড়ে শনি ও কালীর মন্দির। এমনই একটি মন্দিরের পূজারী বেরিয়ে এলেন প্রচার মিছিলের আগে আগে যাওয়া মাইকের ঘোষণা শুনে। বাগমারি রোড তুলনায় কিছুটা প্রশস্ত হওয়ায় তখন ট্যাবলোর মতো করে সাজানো ম্যাটাডর ভ্যানে সওয়ারি হয়েছেন কনীনিকা।
পূজারি এগিয়ে এসে বলে গেলেন, দিদি, আমাদের এখানে পানীয় জলের খুব সমস্যা। সামান্য যেটুকু আসে, তাও মাঝে মাঝে খাওয়ার মতো অবস্থায় থাকে না। তাঁকে আশ্বস্ত করে ভোট দিতে আবেদন করলেন প্রার্থী। এদিকে, ততক্ষণে ভ্যাপসা গরমে জেরবার কয়েকজন কর্মী প্রচারের সঙ্গ ছেড়েছেন। বিপ্লবী বারীণ ঘোষ সরণীতে ঢোকার মুখে আবার কিছু তরুণ মুখ জুড়েছে মিছিলের সঙ্গে।
ক্ষুদিরাম পল্লি, জজবাগান, মুরারিপুকুর রোড ধরে চলল প্রচার মিছিল। সব গলিতে না ঢুকলেও ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে বললেন কনীনিকা। ঘরের ভিতর থেকে, দোতলা বাড়ির বারান্দা থেকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সামনে আসছে বাসিন্দাদের মুখ। অনেকে শুভেচ্ছা জানালেন, সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন। অনেকে একঝলক দেখে বারান্দার পর্দা টেনে দিলেন।
বিআরএস-১১ কেআইটি আবাসনে কয়েক হাজার মানুষের বাস। সেখানে ম্যাটাডরে দাঁড়িয়েই করলেন ছোট্ট বক্তৃতা। গ্যাসের দাম নিয়ে বিঁধলেন বিজেপিকে। বেলাগাম সিন্ডিকেট, দুষ্কৃতীরাজ নিয়ে আক্রমণ করলেন তৃণমূলকে। দুপুরের প্রচার এখানেই শেষ করেন তিনি। যাওয়ার সময় জানাতে ভুললেন না, প্রচারে বেরিয়ে মানুষের সাড়াই তাঁকে জয়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করছে।
তাঁর প্রচারে শামিল হওয়া এক অটোচালক বললেন, খেয়াল করে দেখুন, এবার মানুষ কিন্তু একেবারে চুপচাপ। একদিকে একটা ভয়ের আবহ যেমন রয়েছে, তেমনি মানুষ কিছুতেই বুঝতে দিচ্ছে না, তার ভোটটি ঠিক কোথায় পড়বে। এই ‘চুপচাপ’ মানুষই রাজনৈতিক পাশা উল্টে দিতে পারে ২৩ শে— বিদায় না নেওয়ার আগে জোরদার দাবি করে গেলেন বাম প্রার্থী।