বিএনএ, বারাকপুর: ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণ এখন দু’নৌকায়। অর্জুন সিং ভাটপাড়া বিধানসভার বিধায়কের পাশাপাশি ওই পুরসভার চেয়ারম্যানও। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লিতে তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর গোটা শিল্পাঞ্চলের রাজনীতির চিত্রটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এদিন ভাটপাড়া পুরসভার কাউন্সিলারদের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। একপক্ষ দাবি করছেন, অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে অধিকাংশ কাউন্সিলার রয়েছেন। অন্যপক্ষের দাবি, তৃণমূলের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যক কাউন্সিলার রয়েছেন। অর্জুন সিংকে ফোন করা হলে তিনি ফোন না ধরায় এই বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
নোয়াপাড়া বিধানসভার বিধায়ক সুনীল সিং শিল্পাঞ্চলে অর্জুন সিংয়ের অনুগামী হিসাবে পরিচিত। পাশাপাশি অর্জুনবাবু তাঁর আত্মীয় হন। বুধবার বিকালের পর অর্জুন দল ছাড়ছেন তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগাম আঁচ করেছিলেন। তাই আগেভাগে তাঁর আত্মীয়-বিধায়কের রাজনৈতিক অবস্থানের মনোভাব জানতে তিনি সুনীল সিংকে ফোনও করেছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকাল পাঁচটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ফোন করেছিলেন। সুনীল সিং সে কথা স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেন, দিদি আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তৃণমূলের হয়ে কাজ করব বলে দিদিকে জানিয়েছি। আমি অন্য কোনও দলে যাচ্ছি না। অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর আমি ঘনিষ্ঠ অনুগামী একথা বলা ঠিক নয়। কারণ, অর্জুন সিং প্রথম দিন থেকে তৃণমূল দল করেছেন। তখন আমি কংগ্রেস করতাম। ২০০৯ সালে আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। যদি আমি তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামী হতাম তাহলে জন্মলগ্ন থেকে আমি তাঁর সঙ্গে দলটা করতাম। তা আমি করিনি। আর তৃণমূলের আসার পর আমি দুবার গাড়ুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান, নোয়াপাড়ার বিধায়ক হয়েছি। তাই অর্জুন সিং যাওয়ার জন্য আমি অন্য দলে যাচ্ছি না। বৃহস্পতিবার দুপুরে দলীয় কাউন্সিলারদের নিয়ে বৈঠক করেছি। অধিকাংশ কাউন্সিলার তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
ভাটপাড়া পুরসভাই অর্জুনের খাসতালুক। এই পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। তার মধ্যে একজন কাউন্সিলার মারা গিয়েছেন। একটি ওয়ার্ড সিপিএমের দখলে রয়েছে। বাকি ৩৩টি ওয়ার্ড তৃণমূলের। এখানেও কাউন্সিলারদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এদিন দুপুরে পুরসভায় বেশ কয়েকজন দলীয় কাউন্সিলার হাজির হন। অর্জুন সিং বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই কাউন্সিলাররা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। তৃণমূল নেত্রীর ছবিও পুরসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার শম্পা দে, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সোহমপ্রসাদ চৌধুরি বলেন, অর্জুন সিং আমাদের প্রিয় নেতা। তিনি সব সময় মানুষের পাশে থাকেন। তিনি যে দলে যাবেন আমরাও সেই দলে যাব। আমাদের সঙ্গে ২৮ জন কাউন্সিলার রয়েছেন। এদিন পুরসভায় ২২ জন কাউন্সিলারকে তাঁরা হাজির করতে পেরেছিলেন। অন্যদিকে, পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সোমনাথ তালুকদার বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের নেত্রী। আমরা পুরসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলার তৃণমূলে রয়েছি। এদিন জেলার বৈঠকেও সংখ্যাগরিষ্ঠের বেশি কাউন্সিলার হাজির ছিল। আমাদের সঙ্গে ২৫ জন রয়েছেন। বাকি যারা আসেননি। স্থির বিশ্বাস, খুব শীঘ্রই তাঁরা ফিরে আসবেন।
হালিশহর পুরসভার ১১ জন কাউন্সিলার অর্জুন অনুগামী হিসাবে এতদিন শিল্পাঞ্চলে পরিচিত ছিলেন। তাঁরাও বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন বলে এলাকায় জল্পনা তৈরি হয়। প্রণব লৌহ হালিশহর পুরসভায় অর্জুন ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলারদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, আমরা অর্জুন সিংকে দেখে দলটা করি না। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যতদিন তিনি তৃণমূল করতেন, আমরা দলে তাঁর অনুগামী ছিলাম। এখন তিনি অন্য দলে নাম লিখিয়েছেন। এখন আর তাঁর সঙ্গে আমাদের ১১ জন কাউন্সিলারের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা তৃণমূলে ছিলাম। তৃণমূলে রয়েছি। হালিশহর, কাঁচরাপাড়া এলাকার অর্জুন ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা প্রবীর সরকারও বলেন, তৃণমূল নেত্রী আমাদের আদর্শ। তাঁকে দেখে দলটা করি। ফলে, অন্য দলে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।