বলরাম দত্তবণিক ,রামপুরহাট : শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার রাস্তা বেহাল। যাতায়াত করতে হয় কার্যত প্রাণ হাতে। বুধবার ষষ্ঠী করতে এসে স্বেচ্ছাশ্রমে সেই রাস্তা মাটি ফেলে চলাচলের উপযোগী করতে হাত লাগালেন খোদ জামাইরা। এমন নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইল ময়ূরেশ্বর-১ নম্বর ব্লকের বিজেপি পরিচালিত মুরারই-১ নম্বর পঞ্চায়েতের গোয়ালা গ্রাম। গোয়ালা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে রাস্তাটি শুরু হয়ে ঘোড়ামারা কাঁদর পেরিয়ে রামপুরহাটের তেলডা গ্রামের পাকা রাস্তায় মিশেছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রাস্তা এতটাই খারাপ যে একটু বৃষ্টি হলেই গ্রামে ঢোকা যায় না। এই অবস্থায় রাস্তাটি কংক্রিটের করতে বারবার পঞ্চায়েতে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু ফল হয়নি। গ্রামের বাসিন্দা চন্দন রুইদাস, দীপঙ্কর রুইদাসরা জানান, বছর পাঁচেক আগে পঞ্চায়েত একবার মাটি ফেলেছিল। কিন্তু মোরাম ফেলা হয়নি। পাকা নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষায় রাস্তার উপরেই জল দাঁড়িয়ে যায়। তাই সব সময়েই কাদা জমে থাকে। গ্রামবাসীরা জানান, শুধু গোয়ালা নয়, লাগোয়া সোঁয়াসা, মথুরাপুর, মৌরপুর, বেজাপাড়া সহ বহু গ্রামের মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করেন। সবাইকে জুতো হাতে যাতায়াত করতে হয়। অথবা এক কিলোমিটার পথঘুরে আসতে হয়। কেউ অসুস্থ হলে রামপুরহাট মেডিক্যালে নিয়ে যেতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। গ্রামের অনেক মেয়েরই ভিনগায়ে বিয়ে হয়েছে। এদিন জামাই ষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়ি আসতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে জামাইদেরও। বাইক অন্যগ্রামে রেখে কাদা রাস্তায় সস্ত্রীক গলদঘর্ম হয়ে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছেছেন তাঁরা। তাই ষষ্ঠী সেরেই কয়েকজন জামাই লাগোয়া জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তায় ফেলে চলাচল উপযোগী করার কাজে হাত লাগান। তা দেখে এগিয়ে আসেন গ্রামের যুবকরাও। জামাই জিতেন মুখোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ দাস, মিঠুন দাস, সাধন মণ্ডল বলেন, ঘুরপথে শ্বশুরবাড়ি আসতে রেলগেটে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর এই রাস্তা এতটাই বেহাল যে বাইক তো দূর, হেঁটেই যাওয়া যায় না। তাই আমরা জামাইরা মিলে রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করতে মাটি ফেলছি। এখানে পঞ্চায়েত যে কী জন্য আছে, তা বোধগম্য হয় না। অত্যন্তপক্ষে রাস্তটিতে মোরাম তো ফেলা যায়।
গ্রামবাসীরা বলেন, রাস্তাটি সংস্কার করে কাঁদরের উপর একটি কালভার্ট তৈরি করে দিলে আমাদের যাতায়াত সমস্যা অনেকাংশেই মিটবে। রাস্তার বেহাল দশার জন্য নিজেদের দোষ ঢাকতে আত্মশাসনকে দায়ী করেছেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সমীর লোহার। তিনি বলেন, ভোটের ফল প্রকাশের প্রায় পরপরই রাজ্যে আত্মশাসন জারি হয়। রাস্তাটিতে যে মোরাম ফেলব, তার উপায় নেই। রাস্তাটিতে আপাতত পাথরের গুঁড়ো ফেলে চলাচল উপযোগী করা হবে। তাঁর দাবি, রাস্তাটি জেলা পরিষদের। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বহু আগে এব্যাপারে লিখিতভাবে বিডিওকে জানান। কিন্তু ওরা কোনও উদ্যোগ নেয়নি।
বিডিও গোরাচাঁদ বর্মণ বলেন, পথশ্রী প্রকল্পে বহু রাস্তার সংস্কার হয়েছে। পঞ্চায়েতের উচিত ছিল বিষয়টি আমাদের জানানো। তাহলে এতদিন রাস্তাটি হয়ে যেত। তাছাড়া, পঞ্চায়েতের নিজস্ব ফাণ্ড থেকে ওই রাস্তায় মোরাম ফেলতে বা জেলা পরিষদকে জানাতে পারত। আর সময়মতো কোনও আবেদন জমা পড়েনি। তিনি আরও বলেন, ওই এলাকায় আধিকারিক যাবেন।