অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি, প্রিয়জনের বিপথগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা, সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
গতবার করোনা পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাল দেখা দেয়। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আরামবাগের ব্যবসায়ীরা নিজেরাই এগিয়ে আসেন। বাঁকুড়া, বর্ধমান থেকে মাল নিয়ে এসে বাজারের জোগান ও চাহিদার ভারসাম্য রাখেন। তারজন্য প্রশাসনের কাছে প্রশংসাও পান। এবারও আরামবাগ মহাকুমায় করোনা সংক্রমণ বাড়তেই আরামবাগের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা কালোবাজারি বন্ধের আশ্বাস দিচ্ছেন নিজেরাই।আরামবাগ এসডিপিও অভিষেক মণ্ডল বলেন, প্রথমবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার অনেক সতর্ক আমরা। গতবছর কালোবাজারির বিক্ষিপ্ত কিছু অভিযোগ উঠেছিল। এবারও বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটলেও কালোবাজারি নিয়ে সেরকম কোনও অভিযোগ নেই। তবে প্রশাসন নজর রাখছে। নিয়ম ভাঙলে প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
যদিও বাজারে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্ৰী থেকে জীবনদায়ী ওষুধ ও অক্সিজেন বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ অল্প হলেও আসছে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। আর পেলেও চড়া দামে অক্সিজেন কিনতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ বাড়ছে।
খানাকুল থানার বাসিন্দা রাজকুমার চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা গত রবিবার থেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রথমত, অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছিল না। আর পেলেও অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছিল। একই অভিজ্ঞতা কমবেশি বিভিন্ন রোগীর পরিবারের লোকজনদের। আরামবাগে একটি ওষুধ কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানেজার দেবাশিস দাস বলেন, জীবনদায়ী অ্যান্টি ভাইরাল ড্রাগস ও অক্সিজেন সিলিন্ডার না পাওয়ার মূল কারণ হঠাৎ করে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া। উৎপাদনের তুলনায় ওষুধ ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা অনেক বেশি। ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় পরিমাণ ওষুধ জোগান দিতে পারছে না। ফলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু থার্ড পার্টি যেটুকু জোগান আছে তাঁরা কালোবাজারি করার চেষ্টা করছে হয়তো। কিন্তু সর্বোপরি আরামবাগের বিভিন্ন ওষুধের দোকানগুলোতে যথাসম্ভব ওষুধ সাপ্লাই আমরা করছি। ওষুধের দোকানগুলিও রোগীর পরিজনদের হাতে সবরকমভাবে ওষুধ তুলে দিচ্ছেন।
আরামবাগ মহাকুমার পুরসভা অঞ্চলটুকু বাদ দিলে বেশিরভাগই গ্ৰামীণ অঞ্চল। এইসব অঞ্চলের মধ্যে বাতানল, কয়াপাট, নতিবপুর, পারুলের মতো অঞ্চলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠছে। এসডিপিওকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এই বিষয়ে এখনও কোনও অভিযোগ নেই। তবে সেইরকম খবর পেলে অভিযান চালানো হবে। আমরা সতর্ক আছি। আরামবাগ পুরসভার প্রশাসনিক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী এদিন বলেন, কালোবাজারি বা বেআইনি মজুত যাতে না হয় প্রশাসন তারজন্য সতর্ক আছে। মাঝে মাঝে রেইডও হচ্ছে। তবে আমি বলব, আরামবাগের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি মানুষের স্বার্থে প্রথমবার করোনা সঙ্কটের সময় এগিয়ে এসেছিলেন। এবারও এগিয়ে আসছেন। তাদের আমরা অনুরোধ করব, সমাজবন্ধুর মতো আপনারা হাত বাড়িয়ে দিন।
আরামবাগ শহর কল্যাণ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দেব রঞ্জন কবিরাজ এদিন বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে এই বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। গতবার করোনা সময়কালে নিজেরাই বাজারে যাতে জোগানের অভাব না হয় তার ব্যবস্থা করেছিলাম। জোগান না থাকায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছিল। প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আমরা সেই সমস্যার মোকাবিলায় উদ্যোগী হই। আমাদের অধিকাংশ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বর্ধমান, বাঁকুড়া থেকে আনতে হয়। আরামবাগে এইসব উৎপাদনের ব্যবস্থা নেই। এবারও আমরা সতর্ক আছি। কালোবাজারি হলে প্রশাসনকে আমরা নিজেরাই বলব। এই কঠিন সময়ে সবার মতো আরামবাগের ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরাও চান, সাধারণ মানুষ যেন কোনও অসুবিধার মধ্যে না পড়েন।