জমি, গৃহাদি বা যানবাহনাদি ক্রয়-বিক্রয়ে লাভ ভালো হবে। কাজকর্মে সুনাম। আর্থিকভাব শুভ। ... বিশদ
জেলবন্দি সেই অর্ণব অতীত ভুলে গবেষণা করতে চান। পিএইচডি’র জন্য বুধবার হুগলি সংশোধনাগার থেকে তিনি পুলিসি নিরাপত্তায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলেন। তাঁর উত্তর শুনে মুগ্ধ অধ্যাপক ও অধ্যাপিকারা। এক অধ্যাপক বলেন, এমন তীক্ষ্ণ বুদ্ধি খুব কমজনেরই দেখেছি। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে দিয়েছেন। তবে তাঁর পিএইচডির ইন্টারভিউ দেওয়া নিয়ে জল অনেকদূর পর্যন্ত গড়িয়ে ছিল। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা টালবাহনার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু ওই বন্দি তাঁর অনড় অবস্থানে থাকেন। জেল সূত্রের খবর, সম্প্রতি তিনি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে তিনি অনশনে বসবেন। বিষয়টি নিয়ে একটি মানবাধিকার সংগঠনের তরফে জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে ওই বন্দির ইন্টারভিউ নিয়ে কথা বলেন। জেল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা বিষয়টি নিয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবে। উপর মহল থেকে ‘সবুজ’ সঙ্কেত মেলার পর পুরো বিষয়টির জট খোলে। অবশেষে ওই মাওবাদী নেতা এদিন পিএইচডি’র ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ পান। মানবাধিকার সংগঠনের কর্তাদের কথায়, ‘এটি আমাদের জয় বলেই মনে করছি।’
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন বলেন, পিএইচডি করার জন্য ২৫০জন ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। তারমধ্যে তিনি একজন। অন্যান্য ছাত্রের মতোই তাঁকে দেখি। ইন্টারভিউয়ে সফল হলে তিনি গবেষণা করার সুযোগ পাবেন। আর এক অধ্যাপক বলেন, উনি হুগলি সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন। পিএইচডি করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় দিতে হবে। আইন মেনে কীভাবে তা সম্ভব, তা কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই দেখবে। তবে তাঁর মেধা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা অর্ণব ছোট থেকেই মেধাবী। বাবা প্রাক্তন বিচারক, এখন প্রয়াত। খড়্গপুর আইআইটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনটি সেমেস্টারের পর সেখান থেকে পালিয়ে ’৯৮ সালে যোগ দেন মাওবাদী সংগঠনে। সংগঠনে যোগ দিয়ে শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া বা বাঁকুড়ার জঙ্গলই নয়, ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমের বিস্তীর্ণ অংশ তাঁর অবাধ বিচরণক্ষেত্রে হয়ে ওঠে। মাওবাদী সংগঠনের মিলিটারি কমান্ডের সদস্য হয়েছিলেন। তাঁকে পাকড়াও করার জন্য পুলিস আদাজল খেয়ে ময়দানে নামে। কিন্তু তাঁর টিকি ছুঁতে পারেনি। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১২ সালে তিনি আসানসোল থেকে গ্রেপ্তার হন। তারপর থেকে জেলেই ছিলেন। মাঝে জামিন পেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন নিজের বাড়িতে। এরপর শিলদা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফের জেলে ফিরে যান তিনি। একসময় একে-৪৭ বন্দুক বয়ে বেড়ানো হাতে তিনি বই-কলম তুলে নেন। সংশোধনাগারেই পড়াশোনা শুরু করেন। গবেষণা করার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সেট পরীক্ষা দেন। পাশ করে যান। এবার তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করার টার্গেট নিয়েছেন।