শেয়ার মেয়াদি সঞ্চয়সহ একাধিক ক্ষেত্র থেকে অর্থাগম যোগ। ব্যবসায় কেনাবেচা বাড়বে। ... বিশদ
রবিবারের সকাল বলে ছুটি, তাই সুশীল খোট্টা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা পাড়ে বসেছিলেন। বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বুঝে দৌড়ে আসেন। উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে গড়াতে থাকা গাড়ির বনেটে ঠেস দিয়ে দাঁড়ান। ততক্ষণে চলে আসেন আসেন আরও তিন যুবক। তাঁরাও দাঁড়িয়ে পড়েন। গাড়িটির গতি কমে যায়। সুশীল গাড়ি ছেড়ে পিছনে এসে সামনের দিকের বাঁদিকের দরজা খুলে কিশোরটিকে টেনে বের করেন। তখন হাঁফ ধরে গিয়েছিল সবার। গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। লাফিয়ে সরে যান। পরক্ষণেই হুড়মুড়িয়ে গঙ্গায় গিয়ে পড়ে সাদা গাড়িটি। বগবগ শব্দে জল ঢুকতে থাকে। গঙ্গায় তখন ভরা জোয়ার। দেখতে দেখতে ডুবে গেল আস্ত একটা অ্যাপ ক্যাব।
উত্তর বন্দর থানা এলাকার নিমতলা ঘাটের এই ঘটনা কিছুক্ষণের মধ্যে শহরের আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকাল সাতটা নাগাদ গাড়ি থেকে নেমে মন্দিরে পুজো দিতে যান কিশোরটির বাবা ও মা। ক্যাব চালকও বলেন, আমিও দেব পুজো। বলে গাড়ির গিয়ার নিউট্রাল’এ রেখে হ্যান্ডব্রেক আটকে সকলে চলে যান পুণ্য অর্জনে। গাড়িতেই থেকে যায় ১১ বছরের শিশুটি। সে গাড়ির সামনের আসনে বসেছিল। খেলার ছলে সম্ভবত সে একসময় হ্যান্ডব্রেক নামিয়ে দেয়। ভিতরে লাফালাফিও করছিল। তখনই গাড়ি গড়াতে শুরু করে। নিমতলা ঘাটের ঢালের ধারে ছিল দাঁড় করানো। গড়িয়ে ঢালে পড়তেই গাড়ির গতি বেড়ে যায়। তারপর বরাতজোরে রক্ষা পেল একটি শিশুর প্রাণ। রুদ্ধশ্বাস ঘটনাটি ঘটতে কয়েক মিনিট সময় লেগেছে। কিন্তু সুশীলের বক্তব্য, ‘মনে হচ্ছিল কয়েকঘণ্টা ঘরে যুদ্ধ করেছি। ঘামে ভিজে সপসপে হয়ে গিয়েছিল শরীর।’ ততক্ষণে গঙ্গার পাড়ে ভিড় জমে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় উত্তর বন্দর থানার পুলিস।
কয়েকজন মোটবাহকের সহায়তায় গাড়িতে দড়ি বেঁধে উদ্ধারের চেষ্টা চলে। কিন্তু সে চেষ্টা কাজে দেয়নি। এরপর পুলিস খবর দেয় রিভার ট্রাফিক পুলিস ও বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগে। জোয়ার থাকায় প্রায় তিন ঘণ্টা পাড়ের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয় গাড়ি। জোয়ারের জল কমার পর ক্রেনের সাহায্যে সেটিকে টেনে তোলা হয়। প্রসঙ্গত মাস চারেক আগে ঠিক এভাবে নিমতলা ঘাটের ঢালে গড়াতে শুরু করেছিল একটি গাড়ি। সেই সময় ভাটা ছিল। জল ছিল পাড়ের থেকে দূরে। ফলে সেটি থামানো গিয়েছিল। রবিবার তা হয়নি। এই ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে এই পরিবার। পুলিসের উচিত ওঁদের সাবধান করা। আর চালককেও কড়া ভাষায় সতর্ক করা উচিত। এমনকী পুলিসেরও দাবি, কাচ বন্ধ অবস্থায় কিশোরকে একা গাড়ির ভিতর রাখা কোনওভাবেই উচিত হয়নি পরিবারটির।