দেবীপক্ষ শুরু হলেই বাড়ির অবিবাহিত মেয়েরাও হাতে শাঁখা পরেন। কারণ এই বাড়িতে দুর্গা পূজিতা ঘরের মেয়ে হিসেবে। পুরীর বিখ্যাত জিভেগজা ছাড়া এখানে তাঁর ভোগ অসম্পূর্ণ। বাংলার প্রাচীন বনেদি বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম হাওড়ার আন্দুলের দত্ত চৌধুরীদের বাড়ি।
বারোয়ারি পুজোর আধুনিকতা আর চাকচিক্য হয়তো নেই। কিন্তু ঐতিহ্য ও বাঙালিয়ানার মিশেলে শহরের বনেদি বাড়িগুলিতে শারদোৎসবের আমেজই আলাদা। তা যতটা রাজকীয়, ততটাই রীতি-নিয়মে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা।
এলোচুল, লালপাড় সাদা শাড়ি, কপালজুড়ে সিঁদুর, হাতে ও গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, পায়ে নূপুর। সে রূপ দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন বাড়িতে আসা নতুন জামাই। এরকম ঘটনা একটি নয়, এখনও মধ্যরাতে নূপুরের আওয়াজ শোনা যায় খড়দহের ক্ষেত্রপাল ঠাকুর বাড়িতে।
এখানে দুর্গার জগদ্ধাত্রী রূপ। তাঁর চার হাত। বয়স হল প্রায় ৩৫০ বছর। হরিপালের বন্দিপুর রায়বাড়ির এই দুর্গার সঙ্গে যোগ রয়েছে রাজস্থানের। 
মা তোমার পুজোর দিনগুলিতে নানা উপাচার আর জোগাড় করতে করতেই সময় চলে যায়। ভালো শাড়ি, গয়না পরার ফুরসত পাই না। দশমীর দিন মাকে বিদায় জানানোর আগে উমার কানে এ কথাই বলেছিলেন উদয়নারায়ণপুরের কুরচি গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারের গিন্নিরা।
ফলতার বঙ্গনগরের সরকার বাড়ির দুর্গার বয়স চারশো বছর। পুজোর সময় এলাকার বহু মানুষ দুর্গার কাছে মানত করেন। বিশ্বাস, সকলের ইচ্ছাপূরণ করেন দেবী। সরকারদের জমিদারি শুরুর নেপথ্যে দুর্গারই প্রভাব।
২৫১ বছরে পড়ল বসিরহাটের ইটিন্ডার দে বাড়ির দুর্গাপুজো। প্রতিবছর ধুমধাম করেই পুজো হয় এই দে বাড়িতে। কর্মসূত্রে দেশ-বিদেশে থাকা পরিবারের সদস্যরা এই সময় বাড়িতে আসেন। রীতি মেনে জন্মাষ্টমীর দিনে কাঠামো বেঁধে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়।
নবাবি আমলে শুরু হওয়া শ্যামনগরের ব্যানার্জি পাড়ার বড় বাড়ির পুজো ৩৩১ বছরে পড়ল। এই পূজোর সূচনা করেছিলেন বারো ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া নক্ষত্র রায়। কিছু দিন আগে পর্যন্ত ঠাকুর দালানে একচালায় প্রতিমা তৈরি হতো। পুজো হতো জাঁকজমক করে।
শেয়ার মেয়াদি সঞ্চয়সহ একাধিক ক্ষেত্র থেকে অর্থাগম যোগ। ব্যবসায় কেনাবেচা বাড়বে। ... বিশদ
স্বপন দাস, কাকদ্বীপ: দেবীকে পরানো হতো বিদেশি রেশমি শাড়ি। কয়েকবছর বাদে ১৯০৭-’০৮ সালে স্বদেশী আন্দোলন তুঙ্গে। দেশজুড়ে বিদেশি পণ্য বর্জন শুরু হল। আন্দোলনে নামল রামব্রহ্ম চক্রবর্তীর পরিবারও। তখন রেশমি শাড়ির পরিবর্তে দুর্গার গায়ে উঠল মাটির সাজ। সেই ট্র্যাডিশনই চলছে। ডায়মন্ড হারবারের নেতড়ার নন্দীপাড়ার প্রাচীনতম এই দুর্গোৎসব আজও সমান জনপ্রিয়। ১৮৮২ সালে শোভাবাজার রাজবাড়ির পুরোহিত রামব্রহ্ম চক্রবর্তী পুজো শুরু করেছিলেন। প্রথম দু’বছর ঘট স্থাপন করে এবং ১৮৮৪ সালে প্রতিমা তৈরি করে পুজো শুরু হল। সেই প্রাচীন কাঠামোতেই এখনও তৈরি হয় প্রতিমা। আদিকালে যে মন্ত্র উচ্চারণ করে পুজো হতো সেটিই এখনও চালু। মন্ত্রের পুঁথি লিখেছিলেন পুরোহিত রামব্রহ্ম চক্রবর্তীর পুত্র পণ্ডিত দীননাথ বিদ্যারত্ন। তালপাতায় লেখা সেই পুঁথি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে পরে তা সংস্কার হয়। বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁ রামব্রহ্ম চক্রবর্তীকে ৩০০ বিঘা জমি দান করেছিলেন। সেই জমির উপর শুরু হয়েছিল পুজো। তা জনপ্রিয় ছিল। চিকিৎসক নীলরতন সরকার, যোগীন্দ্রনাথ সরকার, হেমচন্দ্র সেন, যোগীন্দ্রনাথ বসুর মতো ব্যক্তি নন্দীপাড়ায় চক্রবর্তী বাড়ির পুজোয় আসতেন। এই পরিবারের পঞ্চম পুরুষ স্বপন চক্রবর্তী বলেন, ‘পারিবারিক ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়, প্রথম বছর পুজো করতে ৮৭৪ টাকা খরচ হয়েছিল। সপ্তমী থেকে নবমী মাছ ভাজা সহ প্রায় কুড়ি রকমের পদ ভোগ হিসেবে নিবেদন করার রীতি। এছাড়াও খিচুড়ি থাকে। গ্রামের হিন্দু ও মুসলমান পুজোয় অংশগ্রহণ করেন এবং খিচুড়ি ভোগ খেয়ে যান।’
