সপরিবারে নিকট ভ্রমণের পরিকল্পনা। সহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে শত্রুতা করতে পারে। নতুন কোনও কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মক্ষেত্রে বদলির ... বিশদ
রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রসূতির নাম রুমি খাতুন দাস। বছর বাইশের ওই তরুণী আনুলিয়ার লোকনাথ নগরের বাসিন্দা। আটমাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলার টানা বেশ কয়েক কয়েক সপ্তাহ ধরেই জরায়ু থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। বিষয়টি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছতেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দ্বিতীয়বার অন্তসত্ত্বা হওয়া ওই যুবতীর ইউএসজি পরীক্ষায় দেখা যায়, জরায়ুর জটিল সমস্যায় জর্জরিত তিনি। তার জেরেই রক্তক্ষরণ। কী সেই সমস্যা? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, প্রসূতি মায়েদের সন্তান (ফিটাস) জরায়ুতে থাকার সময় দু’ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া এবং দ্বিতীয়, প্লাসেন্টা অ্যাক্রিটা। অর্থাৎ সন্তানের সঙ্গে উম্বিলিকিয়াল কর্ডের যোগ থাকা প্লাসেন্টা (চলতি ভাষায় ফুল) কখনও জরায়ুর নীচে অবস্থানের কারণে সন্তান প্রসবের সমস্যা হয়। যাকে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলে, আবার অ্যাক্রিটায় ওই ফুল বা প্লাসেন্টা জুড়ে যায় জরায়ুর মাংসপেশির সঙ্গে। উভয়ক্ষেত্রেই জোর করে সেই ফুল অংশটি বের করতে গেলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সন্তান অথবা প্রসূতির মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় রুমির ক্ষেত্রে একই জরায়ুতে উভয় সমস্যাই ছিল। ফলে অপারেশনটি যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের কাছে। বিশেষ করে স্বল্প পরিকাঠামোয় এত জটিল অস্ত্রোপচার এর আগে হয়নি মহকুমা হাসপাতালটিতে। তবে ‘রেফার’ করার পরিবর্তে সেই চ্যালেঞ্জ নেন গাইনোকোলজির চিকিৎসক কৌশিক সরকার। কারণ এই অবস্থায় প্রসূতিকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করলে মৃত্যুর সম্ভাবনা আরও বাড়ে। গত রবিবার প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সফল অস্ত্রপ্রচার হয় রুমির। ডাঃ কৌশিক সরকার বলেন, এই ধরনের অস্ত্রোপচারে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমি জীবনে প্রথম এই ধরনের অপারেশন করার সুযোগ পেলাম। এছাড়াও ওই প্রসূতি মায়ের হিমোগ্লোবিন কম এবং জ্বর ছিল। সেইসঙ্গে ধমনী খুঁজে না পাওয়ার কারণে হাতে চ্যানেল পর্যন্ত করা যায়নি। পরিবর্তে ঘাড়ে চ্যানেল করতে হয়েছে আমাদের। এই ধরনের কেসে ডেলিভারির আগে অল্প অল্প রক্তক্ষরণ হলেও, সন্তান প্রসব করানোর পর রক্তক্ষরণের পরিমাণ এত বেড়ে যায় যে মৃত্যু অনিবার্য। ফলে প্রসব করানোর পরে বাকি কাজ করতে হয় অনধিক তিন চার মিনিটের মধ্যে। তাই সেই সময়ের মধ্যেই জরায়ু কেটে বাদ দিতে হয়। সফলভাবে আমরা সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরেছি। বর্তমানে মা এবং সন্তান দুজনেই সুস্থ আছে। বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট হাসপাতালের সুপার প্রহ্লাদ অধিকারী বলেন, রানাঘাটের মতো মহকুমা হাসপাতাল থেকে এই ধরনের অস্রোপচার করা বিরল। কিছুদিন আগে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ওই ধরনের অপারেশন হয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি। সাধারণত অনেক বড় পরিকাঠামোর মধ্যে দিয়েই অপারেশন করতে হয়। কিন্তু আমাদের চিকিৎসক কৌশিকবাবু এবং যিনি ইনাস্টিসিয়া করেছেন সেই ডাঃ সুজয় তালুকদার এক ধরনের অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। এই ধরনের অস্ত্রোপচার সরকারি হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়াবে। সেই সঙ্গে ভালো কাজ করার মানসিকতা জোগাবে আমাদের। - নিজস্ব চিত্র