শেয়ার মেয়াদি সঞ্চয়সহ একাধিক ক্ষেত্র থেকে অর্থাগম যোগ। ব্যবসায় কেনাবেচা বাড়বে। ... বিশদ
মল্লরাজ পরিবারের সদস্য জ্যোতিপ্রকাশ সিংহঠাকুর বলেন, ‘আমাদের পূর্ব পুরুষদের প্রথম রাজধানী ছিল জয়পুরের পদ্যুঘ্নগড়। ২৯ তম মল্লরাজা জগত মল্ল বিষ্ণুপুরে শিকারে এসে গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। শিকারে গেলে তিনি পোষা বাজপাখিকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। বিশ্রামের সময় আকাশে একটি বক দেখতে পেয়ে বাজপাখি উড়ে গিয়ে সেটিকে ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে বাজপাখিটি মাটিতে পড়ে যায়। ওইদিন রাতেই মা মৃণ্ময়ী রাজাকে স্বপ্নাদেশ দেন, আমি এখানকার মাটিতে রয়েছি। আমাকে প্রতিষ্ঠা কর। তারপর ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজা সেখানেই দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন। গঙ্গামাটির সেই বিগ্রহ আজও অক্ষত। সেই দেবী মূর্তিকেই পুজো করা হয়। তবে, স্বপ্নাদেশ পেলে মাঝে মাঝে অঙ্গরাগ হয়। তখন দেবীর মূর্তিতে নতুন রং করা হয়। পুজোর আচার অনুষ্ঠান একেবারে তিথি নক্ষত্র মেনে পালন করা হয়। এখানে দেবী দূর্গা তিনটি রূপে পুজিতা হন—বড়ঠাকুরানি মা কালী, মেজো ঠাকুরানি সরস্বতী রূপে এবং ছোট ঠাকুরানি লক্ষ্মীরূপে। পটের বড়ো ঠাকুরানি বৃহস্পতিবার মূল মৃন্ময়ী মন্দিরে প্রবেশ করেন। মহালায়ার পরের দিন মেজো ঠাকুরানি একইভাবে পুজো ও শুদ্ধাচারের পর মন্দিরে প্রবেশ করবেন। এবং ষষ্ঠীতে দেবী ছোট ঠাকুরানি প্রবেশ করবেন। জ্যোতিপ্রকাশবাবু বলছিলেন, আমাদের পুজোর আরও একটি বিশেষত্ব রয়েছে। তা হল, তৎকালীন সময়ে কলেরা মহামারী রূপে দেখা যেত। তাই আরোগ্য কামনায় নবমীর রাতে অন্ধকারের মধ্যে খচ্চরবাহিনীর পুজো হয়।
রাজবাড়ির পুরোহিত তরুণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, মল্ল রাজবাড়ির পুজো হয় নিজস্ব পদ্ধতিতে। সেই সময়ের হাতে লেখা পুঁথি আজও অমলিন। যা পাঠ করেই সম্পূর্ণ করা হয় মল্ল রাজপরিবারের পুজো। প্রথা অনুযায়ী জিতাষ্টমীর দিন বিকেলে বিল্লবরণ অনুষ্ঠান হয়েছে। ওইদিন দেবী সারারাত বেলগাছে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় গোপালসায়রে স্নান করানোর পর পটের দেবী বড়ঠাকুরানিকে মন্ত্রের মাধ্যমে শুদ্ধাচারের পর মৃন্ময়ী মন্দিরে প্রবেশ করানো হয়।
রাজবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাচীনকালে ঘটে ও পটে পুজো হত। তখনও মূর্তিপুজো প্রচলন হয়নি। তৎকালীন মল্লরাজাদের প্রধান সেনাবাহিনীর মধ্যে একজন ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করতেন। তাঁর আঁকা ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে রাজপরিবারের পুজোয় তাঁকে পট আঁকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে তাঁর বংশধররা একইভাবে রাজবাড়ির পুজোয় পটের দেবী আঁকেন। এবং মূল প্রতিমা ছাড়াও রাজবাড়ির পুজোর অন্যতম আকর্ষণ পটে আঁকা বড়ো, মেজো ও ছোট ঠাকুরানির পুজো। দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর সন্ধি পুজো উপলক্ষে তোপধ্বনি দেখতে স্থানীয় মূর্চার পাহাড়ে হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমান। এছাড়াও রাজবাড়ির পুজোর আরও একটি বিশেষত্ব হল, আগে মল্লরাজা অষ্টমীর দিনে সন্ধিপুজোয় রাজবাড়িতে থাকা অষ্টধাতু দিয়ে তৈরি বিশালাক্ষ্মী উগ্রচণ্ডা মূর্তির পুজোয় স্বর্ণচাপা ফুল দিয়ে অঞ্জলি দিতেন। তা সম্পূর্ণ হওয়ার পরে অন্যান্যরা অঞ্জলি দিতে পারতেন। সেই পরম্পরা মেনে বর্তমান রাজপরিবারের সদস্যরা প্রতি বছর একইভাবে অঞ্জলি দেন। দশমীর দিন ঘট বিসর্জনের পর নীলকন্ঠ পাখি উড়িয়ে এবং দইয়ের মধ্যে চ্যাং মাছ ছেড়ে পুজো সমাপ্তি করা হয়। নিজস্ব চিত্র