রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায় মালদহ: মুর্শিদাবাদের পর এবার মালদহ। গত সপ্তাহে মুর্শিদাবাদ থেকে আল কায়েদা জঙ্গি সন্দেহে ৬ জন গ্রেপ্তারের পর এবার এনআইএ’র জালে ধরা পড়ল মালদহের কুখ্যাত দুষ্কৃতী, জেলায় গুলতি বোমা তৈরির ‘জনক’ বলে পরিচিত সিদ্ধার্থ মণ্ডল। বুধবার রাতে মালদহে গোপন ডেরা থেকে তাকে পাকড়াও করেছে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনআইএ) টিম। বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে এনআইএ’র বিশেষ আদালতে তাকে তোলা হয়। এনআইএ’র সরকারি আইনজীবী দেবাশিস মল্লিকচৌধুরী জানান, ধৃতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসভঙ্গ সহ একাধিক ধারা দেওয়া হয়েছে। বিচারক তাকে ৭ দিনের জন্য এনআইএ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। গত জানুয়ারিতে মানিকচকের মথুরাপুর সিংপাড়ায় গভীর রাতে হঠাৎ এক বিষ্ফোরণের বিকট শব্দে আতঙ্ক ছড়ায়। এলাকার বাসিন্দারা বাড়ির বাইরে এসে দেখতে পান, গ্রামের প্রান্তে থাকা আমবাগান থেকে ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে উপরে উঠছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা দু’জনকে জখম অবস্থায় কাতরাতে দেখেন। খবর পাঠানো হয় মানিকচক থানায়। পুলিস গিয়ে ওই দুই দুষ্কৃতীকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তখনই বাগানের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট বোমা এবং একাধিক গুলতি পুলিস আধিকারিকদের নজরে আসে। ওই প্রথম এত ছোট বোমা তাঁরা দেখেন বলে তদন্তকারী আধিকারিকরা জানান। পুলিসকর্মীরা তা সংগ্রহ করে থানায় নিয়ে যান। পুলিস সূত্রের খবর, সেই বোমা তৈরির মূল মাথা ভূতনির বাসিন্দা সিদ্ধার্থই। ‘অপারেশনে’ বিপক্ষকে ঘায়েল করতে গুলতি বোমার ব্যবহার তখন থেকেই শুরু করে মালদহের দুষ্কৃতীরা। আকারে ছোট হওয়ায় তা মার্বেল বোমা নামেও দুষ্কৃতী মহলে পরিচিতি পায়। সিদ্ধার্থ মানিকচক বোমা বিষ্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত। তখন থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল সে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে,সিদ্ধার্থ বাংলাদেশ থেকে এই বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তার সঙ্গে জঙ্গি যোগ থাকতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। মালদহের পুলিস সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, আগের তুলনায় মালদহে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য অনেক কমেছে। জেলায় যাতে দুষ্কৃতীরা মাথাচাড়া দিতে না পারে, তারজন্য পুলিসি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বড় আকারের সুতলি বোমা ফাটলে বিকট শব্দ ও প্রচুর ধোঁয়া হয়। তা দুষ্কৃতীরা মূলত ভয় দেখানোর জন্য ফাটায়। কিন্তু গুলতি বোমা সরাসরি মানুষের উপর হামলার জন্য বানানো হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের অভিমত। আধিকারিকদের মতে, গুলতির সাহায্যে ওই বোমা দিয়ে দুষ্কৃতীরা লক্ষ্যে আঘাত হানে। জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে ময়দানে তা তৈরি করা হয়। গুলতি বোমায় ছোট আলপিন এবং কাচের টুকরো সপ্লিন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই বোমা অনেকটা দূর থেকে ছোঁড়া যায়। ফলে দুষ্কৃতীরা নজরে আসার আগেই বোমা শরীরে এসে লাগে। বোমার আঘাতে পথচারী বা বাইক আরোহীরা গুরুতম জখম হওয়ার পর তাদের সর্বস্ব লুট করা হয়। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষেও দুষ্কৃতীরা গুলতি বোমা ব্যবহার করছে বলে পুলিস জানতে পেরেছে।
জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, গুলতি বোমা সহজেই বহন করা যায়। বড় ব্যাগ লাগে না। জামা-প্যান্টের পকেটে মার্বেলের সাইজের একাধিক বোমা একসঙ্গে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যায়। সিদ্ধার্থই ওই বোমা তৈরির মূল কারিগর বলে পুলিসের অনুমান। এই গুলতি বোমাই এখন মালদহ সহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মারণ অস্ত্র হওয়ায় চিন্তা বাড়ছে পুলিসের। প্রতীকী চিত্র