সিমলা: মুখ্যমন্ত্রীর সিঙাড়া ‘চুরি’! তাও খোদ সিআইডির সদর দপ্তর থেকে। সেই সিঙাড়া আবার যেমন তেমন দোকানের নয়, একেবারে পাঁচতারা হোটেল থেকে আনা। কে খেল বাক্সভর্তি সেই সিঙাড়া? এই প্রশ্নেই এখন তোলপাড় হিমাচল প্রদেশ। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। এমনকী কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে এক মহিলা ইনসপেক্টর সহ পাঁচ পুলিস আধিকারিকের বিরুদ্ধে শো-কজ নোটিস পর্যন্ত জারি করা হয়েছে। আইজি সিআইডির কাছে এই নিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন ডিএসপি বিক্রম চৌহান। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আনা তিন বাক্স সিঙাড়া হারিয়ে যাওয়া ‘সরকার বিরোধী কার্যকলাপ’ বলেই দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। সেই খবর সামনে আসতেই কংগ্রেস শাসিত এই পাহাড়ি রাজ্যের রাজনীতি এখন ‘সিঙাড়াময়’। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু অবশ্য এমন কোনও তদন্তের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর সাফ কথা, বিজেপি বিষয়টি নিয়ে অহেতুক জলঘোলা করছে। এর মধ্যেই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র। ওই সূত্রটির দাবি, স্বাস্থ্যজনিত কারণে সুখু আর সিঙাড়া, পকোড়া সহ কোনও ভাজাভুজিই এখন খান না। প্রতিটি সরকারি দপ্তরকেই এই তথ্য দেওয়া রয়েছে!
সিঙাড়া রহস্যের সূত্রপাত ২১ অক্টোবর। ওইদিন সাইবার উইং স্টেশনের উদ্বোধন করতে সিমলায় সিআইডির সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু। তাঁর জলখাবারের জন্য এক সাব-ইনসপেক্টরকে (এসআই) লক্কড় বাজারের একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে তিন বাক্স সিঙাড়া ও কেক আনার নির্দেশ দেন আইজি পদমর্যাদার এক আধিকারিক। ডিএসপি বিক্রম চৌহান তদন্ত রিপোর্টে জানিয়েছেন, ওই এসআই আবার সেকাজে পাঠান এক এএসআই ও হেড কনস্টেবলকে। তাঁরা তিন বাক্স সিঙাড়া ও কেক এনে ওই এসআইকে খবর দেন। তারপর তা তুলে দেওয়া হয় এক মহিলা ইনসপেক্টরের হাতে। তার আগে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর খাবারের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দেন, সিঙাড়ার বিষয়ে কিছু জানেন না। এরপর কাউকে জিজ্ঞাসা না করেই ওই তিনটি বাক্স সিআইডির মেকানিক্যাল ট্রান্সপোর্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেন ওই মহিলা ইনসপেক্টর। তারও পরে বেশ কয়েক হাত ঘুরে সেই সিঙাড়া পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা পুলিসকর্মীদের কাছে। সম্ভবত তাঁরাই সেগুলি খেয়ে নিয়েছেন। হিমাচল প্রদেশ পুলিসের ডিজি অতুল ভার্মার ইঙ্গিত অন্তত তেমনটাই।
সিঙাড়া কাণ্ডে সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে, এই খবর জানাজানি হতেই মাঠে নামে বিজেপি। শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক তরজা। আর তারপরেই গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, সিঙাড়া উধাও হওয়া নিয়ে কোনও তদন্ত হচ্ছে না। কয়েকজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি নিয়ে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান চলছে। যদিও বিজেপির মুখপাত্র রণধীর শর্মার দাবি, বর্তমান কংগ্রেস সরকারের রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। তারা শুধু মুখ্যমন্ত্রীর সিঙাড়া নিয়েই চিন্তিত। সিআইডির ডিজি সঞ্জীবরঞ্জন ওঝা অবশ্য জানিয়েছেন, এটা খুব সাধারণ ঘটনা। কোনও তদন্ত হচ্ছে না। শুধু ওই সিঙাড়ার বাক্সগুলি কোথায় গেল তার খোঁজ করা হয়েছে। এটা পুরোটাই সিআইডির অভ্যন্তরীণ বিষয়।