সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: যত বেশি রাজ্যে বিরোধী সরকার, তত কমবে কেন্দ্রীয় একচ্ছত্র শাসনের সম্ভাবনা। আজ, রবিবার চার রাজ্যের ফলপ্রকাশের আগে বিজেপির অন্দরে এই শঙ্কার চোরাস্রোতই বইছে।
মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা— এই চার রাজ্যের ফল প্রকাশ হবে আজ। বুথফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত মিলেছে, চার রাজ্যেই ব্যাকফুটে মোদি। আর বাস্তবে চারটিই যদি হাতছাড়া হয়, তাহলে নরেন্দ্র মোদির তথা বিজেপির অধীনে থাকবে মাত্র ৮টি রাজ্য। মোদি-শাহের কাছে যা চরম উদ্বেগের। কারণ, কেন্দ্র যতই আইন প্রণয়ন করুক, প্রকল্প গ্রহণ করুক বা নানাবিধ নির্দেশিকা জারি করুক— ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় চলে। অর্থাৎ, সিংহভাগ প্রশাসনিক কাজ হয় রাজ্যগুলির মাধ্যমে। সুতরাং ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদি যদি আবার জয়ীও হন, তাঁর সরকার হবে দুর্বল। সঙ্গে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাঁর ইমেজও। কারণ, তাঁকে পোস্টার বয় করে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে দেশ গেরুয়াকরণের যে স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি, তা মুখ থুবড়ে পড়বে। সর্বোপরি ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, রাজস্থানে মোদি মাটি কামড়ে পড়ে থেকে বিধানসভা ভোটের প্রচার করেছেন। আর তাই জিততে না পারার অর্থ মোদি ম্যাজিক ভ্যানিশ। যে বার্তা লোকসভা ভোটের মাত্র কয়েকমাস আগে বিজেপির কাছে প্রবল আশঙ্কার।
এই পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য তারা যে মরিয়া চেষ্টা চালাবে, তা নিয়ে নিঃসংশয় রাজনৈতিক মহল। যদি কোনও রাজ্য ত্রিশঙ্কু হয় অথবা পরস্পরের মার্জিন হয় নামমাত্র, তাহলেই শুরু হয়ে যাবে চেনা খেলা। বিধায়ক কেনাবেচা। প্রধান বিপক্ষ, নির্দল এবং ছোট আঞ্চলিক দলের জয়ী বিধায়কদের কাছে টাকার অপারেশন। যে খেলায় চ্যাম্পিয়ন বিজেপি। শোনা যাচ্ছে, যেহেতু সরকার গড়তে দু’পক্ষই মরিয়া, তাই বিধায়কপিছু দর পৌঁছতে পারে ১০০ কোটি টাকাতেও। কিন্তু সেই ‘অপারেশন লোটাস’ নিয়েও এবার খুব একটা স্বস্তিতে নেই বিজেপি। কারণ, কংগ্রেসের ক্রাইসিস ম্যানেজাররাও তৈরি হয়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যে। আর সেই ‘অপারেশন পাঞ্জা’র নেতৃত্বে রয়েছেন স্বয়ং কর্ণাটকের উপ মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার। চলতি বছরেই যিনি বিজেপির ঘুরপথে কর্ণাটক দখলের ছক ভেস্তে দিয়েছেন একার হাতে। হাইকমান্ডের নির্দেশ মেনে নমনীয় হয়েছেন, সিদ্ধারামাইয়ার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সরকার গড়েছেন দক্ষিণের এই রাজ্যে। কিন্তু ভাঙতে দেননি হাত শিবিরকে।
কিন্তু সব হিসেব উল্টে দিয়ে আজ চার রাজ্যেই বিজেপি যদি ম্যাজিক দেখিয়ে সাফল্য পায়, তাহলে একা কংগ্রেস নয়, ধাক্কা খাবে ইন্ডিয়া জোট। ফের তলানিতে পৌঁছবে গান্ধী পরিবারের গ্রহণযোগ্যতা। কিন্তু যদি কংগ্রেসের সাফল্য বেশি হয়, অর্থাৎ তিন রাজ্যও কংগ্রেস দখল করে নেয়, তাহলে বড়সড় প্রভাব পড়বে লোকসভা ভোটে। কারণ, এই চার রাজ্যের সম্মিলিত লোকসভা আসনের সংখ্যা ৮২। ৮২ লোকসভা আসনের ভোটার যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহলে মোদি যে গরিষ্ঠতা পাবেন না, সেটা নিশ্চিত। মোদির ব্যক্তিগত প্রেস্টিজ ফাইটই বটে!
দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তর শুনশান। -নিজস্ব চিত্র