দক্ষিণবঙ্গ

ঘোড়ায় টানা ফিটন গাড়ির পিছনে দড়ি বেঁধে অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তীকে পুকুরে ফেলেছিল ইংরেজরা

সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: মানভূম তথা পুরুলিয়া জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন কর্মী ও দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সাঁতুড়ি ব্লকের রামচন্দ্রপুর গ্রামের অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী। পরবর্তী সময়ে তিনি স্বামী অসীমানন্দ সরস্বতী নামে পরিচিত হন। দেশ স্বাধীনতার পর নিজের প্রচেষ্টায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুপ্রেরণায় অন্ধদের আলো দিতে তিনি গড়ে তুলেছিলেন রামচন্দ্রপুর চক্ষু হাসপাতাল।
জানা গিয়েছে, ১৯০৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সাঁতুড়ি ব্লকের রামচন্দ্রপুর গ্রামে অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের বাসিন্দা। তাঁরা পুরুলিয়ার পঞ্চকোট রাজ পরিবারের পুরোহিত হয়ে এসেছিলেন। শিশু বয়স থেকে অন্নদাপ্রসাদের অন্তরে বিপ্লবী চেতনা প্রকাশ পায়। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ১২ ডিসেম্বর পঞ্চম জর্জের আগমনে বিদ্যালয়ে ‘দরবার উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ‘জয় জয়তু পঞ্চম জর্জ, জয় হে ভারত ভূপতি’ গান গাওয়ার জন্য বলা হয়। অন্নদাপ্রসাদ তাতে অস্বীকার করেন। তার জন্য তিনি শাস্তিও পেয়েছিলেন। প্রতিবাদে তিনি তীব্র ধিক্কার জানিয়ে ‘যারা তাঁতির কাটল আঙুল, তাদের দেব জয়, জীবন থাকতে নয়’ কবিতা লেখেন।
তারপর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর বিপ্লবী কার্যকলাপ শুরু হয়। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবীদের গোপন সংস্থা আর্য আশ্রম গড়ে তোলেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে মানভূম থেকে বর্ধমান পর্যন্ত তার বিস্তার লাভ করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসে রামচন্দ্রপুরে এক কর্মিসভার আয়োজন করেন। সুভাষচন্দ্র বসুর নির্দেশে সেই কর্মিসভায় তিনি অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি হন। দু’দিনের কর্মিসভায় বাংলার স্বদেশীরা যোগ দেন। সেখানে সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু। সভায় জন্ম নেই ‘মানভূম কর্মী সংসদ’ নামের এক নতুন সংগঠন। তাতে সুভাষচন্দ্র বসু সভাপতি এবং অন্নদাপ্রসাদ সম্পাদক হন। সেই সভা ব্রিটিশদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। তারপর তরুণ শক্তি নামের পত্রিকার সম্পাদক করার জন্য ব্রিটিশ শাসক তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী ঘোষণা করে। কারারুদ্ধ করে রাখেন। প্রায় দেড় বছর কারারুদ্ধ থাকার পর তিনি মুক্তি পান। আর কারামুক্ত হয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে দেশ ও দশের কাজে লিপ্ত হন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন সংগঠিত করেন। যার জন্য ব্রিটিশ শাসক তাঁর উপর অত্যাচার চালায়। গাছে বেঁধে প্রহার করা হয়। জ্ঞান হারালে ঘোড়ায় টানা ফিটন গাড়ির পিছনে দড়ি বেঁধে দূরে পুকুরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। শেষে অনুগামী ও পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীদের পরিচর্যায় তিনি অনেকটা সুস্থ হন। হাজারিবাগ কলেজের এক অধ্যাপকের সহায়তায় চিকিৎসা পেয়ে তিনি সুস্থ হন।
১৯৩২ সালের ৬ জুন তিনি পারিবারিক জীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসু অন্নদাপ্রসাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। শীতের রাতে সুভাষচন্দ্র বসু অন্নদাপ্রসাদকে সঙ্গে নিয়ে আদ্রা রেল স্টেশনে ট্রেন ধরার জন্য যাচ্ছিলেন। তখন এক দৃষ্টিহীন দরিদ্র মানুষ তাঁদের গাড়ির সামনে এসে পড়েন। সুভাষচন্দ্র বসু সেই দৃশ্য দেখে অন্নদাপ্রসাদকে নিপীড়ন মানুষজনের জন্য এক দাতব্য চক্ষু হাসপাতাল গড়ার অনুরোধ করেছিলেন। সুভাষচন্দ্রের মৃত্যুর খবরে তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। তাই কাশীর শ্রী শ্রী বিজয় কৃষ্ণ মঠের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী কিরণচাঁদ দরবেশের কাছে দীক্ষা নেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ধর্মগুরুর নির্দেশে সন্ন্যাস নেন। তাঁর নতুন নাম হয় স্বামী অসীমানন্দ সরস্বতী। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে কুলগুরু বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর নামে শ্রী শ্রী বিজয় কৃষ্ণ রিলিফ সোসাইটি গঠন করেছিলেন। তারই মাধ্যমে তিনি প্রথম দিকে দরিদ্র দৃষ্টিহীনদের চিকিৎসা শুরু করেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ২৩ জানুয়ারি রামচন্দ্রপুরে নেতাজি আই হসপিটাল গড়ে তুলেন‌। বর্তমানে যে হাসপাতালে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ এখনো বিনামূল্যে চিকিৎসা করান। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ১৩ আগস্ট তিনি পরলোক গমন করেন।
 
27d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা