দক্ষিণবঙ্গ

নেতাজির আহ্বানেই সুঠাম চেহারা নিয়ে দেশের কাজে ঝাঁপিয়েছিলেন শ্রীধর ও পটল

দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: ‘এত সুঠাম চেহারা তোমাদের। এটাকে তো দেশের কাজে লাগাতে পারো।’ রানাঘাটে একটি জিমের উদ্বোধনে এসে বিশালদেহী শ্রীধর মুখোপাধ্যায় এবং পটল মুস্তাফিকে বলেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজির সেই আহ্বান উপেক্ষা করতে পারেননি দুই যুবক। পরে তারাও জড়িয়ে পড়েন স্বাধীনতার আন্দোলনে। পরাধীন ভারতে রানাঘাটের মাটিতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতাকা ‘ইউনিয়ন জ্যক’ নামিয়ে প্রথম জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন কেশবচন্দ্র মিত্র। এটাই ছিল রানাঘাটের মাটিতে প্রথম কোনও সরকারি ভবনে ভারতীয় পতাকা উত্তোলনের ঘটনা। এই প্রজন্মের অনেকেই সেই ঘটনা সম্পর্কে অবগত নয়। তবে ১৫ আগস্ট, দেশ স্বাধীনের দিনে এই বিশেষ ঘটনাকেও স্মরণ করার দিন।
দেশজুড়ে তখন চলছে পরাধীনতার বেড়ি ভেঙে বেরিয়ে আসার লড়াই। বাংলা থেকে পাঞ্জাব, আন্দামানের কালাপানি থেকে দিল্লির রাজপথে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে স্বাধীনতার ডাক। কোথাও সশস্ত্র, কোথাও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশ শাসন উৎপাটিত করতে দলে দলে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে দেশের যুব সমাজ। এমন পরিস্থিতিতে নদীয়া জেলার রানাঘাটের মাটিতে পা দিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তখন কলকাতার মহানাগরিক। দেশে ব্রিটিশ বিরোধী মুখগুলির অন্যতম জনপ্রিয় এবং প্রথম সারির প্রতিষ্ঠিত নেতা। রানাঘাট স্পোর্টিং ক্লাবের একটি জিম উদ্বোধন করতে এসে মঞ্চে দেখেছিলেন শ্রীধর এবং পটলকে। দু’জনের মুগুর ভাঁজা চেহারা মুগ্ধ করে নেতাজিকে। স্বাধীনতার আন্দোলনে তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান করেন তিনি। 'নেতাজি'র মতো ব্যক্তিত্বের অমোঘ সেই ডাক কি উপেক্ষা করা যায়? শ্রীধর এবং পটল যোগ দেন আন্দোলনে।
এবার কাট টু ১৯৪২। গান্ধীজি ডাক দিয়েছেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের। দেশের বিভিন্ন জায়গার মতন রানাঘাটেও চলছে আন্দোলন, মিছিল, প্রতিবাদ সভা। স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা স্বাধীন ভারতে রানাঘাটের প্রথম বিধায়ক কেশবচন্দ্র মিত্রের নেতৃত্বে রানাঘাট থানা দখল অভিযান শুরু হয়। সেই দলের সদস্য ছিলেন মহ হাবিবুল্লা, কালু শেখ, নেপাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেই শ্রীধর মুখোপাধ্যায় ও পটল মুস্তাফি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় বিপ্লবীরা দখল করে নেন ব্রিটিশ সরকারের অধীনস্থ রানাঘাট থানা। আর তারপর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। থানার উপর থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় ব্রিটিশ পতাকা। তার জায়গায় উড়িয়ে দেওয়া হয় ভারতের পতাকা। শেষ নয় এখানেই, আন্দোলনের অভিমুখ পৌঁছায় রানাঘাট স্টেশন পর্যন্ত। বেশকিছু জায়গায় রেললাইন উৎপাঠিত করা হয়। একইভাবে স্টেশনের যে পুরোনো বাড়িটা, তার মাথাতেও জাতীয় পতাকা তোলা হয়। যদিও তারপর ব্রিটিশ পুলিসের হাতে গ্রেপ্তার হন তাঁরা। ৬ মাস জেল খেটে তবে মুক্তি পান। সময়ের সঙ্গে ক্রমশ এই ইতিহাস রানাঘাটের মাটিতে ধূসর হয়ে গেলেও, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই ঘটনা। তাই ১৫ আগস্ট বা ১৮ আগস্ট, নদীয়ার মাটিতে যতটা প্রাসঙ্গিক ঠিক ততটাই প্রাসঙ্গিক এই ঘটনাও।
নদীয়ার ঐতিহাসিক তথা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের অন্যতম সাক্ষী তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গোটা দেশের মতো রানাঘাটের মানুষও গর্জে উঠেছিলেন পরাধীনতার বিরুদ্ধে। দেশের স্বাধীনতা আনতে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আন্দোলনে। কেশবচন্দ্র মিত্রের নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় রানাঘাট থানা এবং স্টেশনে ভারতীয় পতাকা তোলার সেই ঘটনাই প্রথম এখানকার মাটিতে থাকা কোনও সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা তোলার ঘটনা। এই কাজের জন্য তাদের জেল খাটতে হয়েছে। অত্যাচার হয়েছে তাদের উপর। তবুও তারা স্বাধীন দেশের লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছেন বারবার। একইসঙ্গে তপনবাবুর কথায়, অদ্ভুতভাবে, হাবিবুল্লাহ, কালু শেখ, নেপাল বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীধর মুখোপাধ্যায় এবং পটল মুস্তাফিরা কেউই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য যে পুরস্কার তার জন্য আবেদনই করেননি। তাঁদের মতে, পুরস্কার লাভ আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। দেশের স্বাধীনতার কাজে নেমেছিলাম আমরা। তাই আজ হয়তো অনেকেই এঁদের নাম জানেন না। কিন্তু নদীয়া তথা দেশের গর্ব এঁরাও।
 
27d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও ব্যবসায়িক কর্মে অতিরিক্ত অর্থলাভের প্রবল সম্ভাবনা। শিল্পীদের পক্ষে শুভদিন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৪ টাকা৮৪.৮৮ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৩ টাকা১১১.৭৮ টাকা
ইউরো৯১.১৫ টাকা৯৪.৩৪ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা