নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে এবার নাম জড়াল মেদিনীপুর পুরসভার। ইতিমধ্যেই ইডির স্ক্যানারে এসেছে এই পুরসভা। সূত্রের খবর, পুরসভায় বিভিন্ন পদে এমন ১৭ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে, যাঁদের নিয়োগের ‘বৈধতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ, মেদিনীপুর পুরসভায় এসেছিলেন খোদ নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত অয়ন শীল। তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নাকি ইন্টারভিউও নিয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের। আর সেই চাকরি ‘বিক্রি’ হয়েছে সাত থেকে আট লক্ষ টাকায়!
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে কয়েক মাস আগেই ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন হুগলির প্রোমোটার অয়ন শীল। তদন্তে তাঁর ফ্ল্যাট ও অফিসে তল্লাশি চালিয়ে পুর-নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য হাতে এসেছিল ইডির হাতে। তদন্তের প্রেক্ষিতে মেদিনীপুর পুরসভায় থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় পুরদপ্তরের ডিরেক্টরেট অব লোকাল বডিজ। জানতে চাওয়া হয়, ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মেদিনীপুর পুরসভায় কতজন কর্মী নিয়োগ হয়েছিলেন, পরীক্ষা কোথায় হয়েছিল, কী পদ্ধতিতে নিয়োগ হয়েছিল প্রভৃতি। এ ছাড়াও জানতে চাওয়া হয়েছিল, ওই সময় পুরসভার চেয়ারম্যান কে ছিলেন, এক্সিকিউটিভ অফিসার কে ছিলেন, কোনও সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ হয়ে থাকলে, সেই সংস্থার নাম ও ঠিকানা। রিপোর্ট আকারে সব তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছিল।
সম্প্রতি সেই রিপোর্ট তৈরি করে পাঠিয়েছে পুরকর্তৃপক্ষ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের এক বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে ২০১৬ সালে পুরসভায় মোট ১৭ জন নিয়োগ করা হয়। সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে (ইলেকট্রিক্যাল ও সিভিল) দু’জন, ড্রাইভার তিনজন, লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক একজন এবং গ্রুপ ডি পদে মোট ১১ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। গ্রুপ ডি পদের চাকরি ‘বিক্রি’ হয়েছিল প্রায় সাত থেকে আট লক্ষ টাকায়, ইঞ্জিনিয়ার পদের রেট আরও বেশি। এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘ঐশী ম্যানেজমেন্ট সলিউশন, কলকাতা নামক একটি সংস্থার মাধ্যমে এই নিয়োগ হয়। নিয়োগের সময় খোদ অয়ন শীল এসেছিলেন মেদিনীপুর পুরসভায়।’
এনিয়ে মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খাঁ বলেন, ‘আমাদের থেকে যা যা জানতে চাওয়া হয়েছিল, সবই আমরা পাঠিয়েছি। সেই সময় আমি কোনও পদে ছিলাম না।’ সেই সময় চেয়ারম্যান ছিলেন প্রণব বসু। তিনি মারা গিয়েছেন। পুরকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটি দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করেছিলেন তৃণমূলের এক যুব নেতা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলার। এখন তাঁর চোখ ধাঁধানো বৈভব-প্রতিপত্তি। ইডির অনুমান, পুরসভায় এক হাজারের বেশি চাকরি দিয়ে ৪০ কোটির বেশি টাকা তুলেছেন অয়ন। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা কী পৌঁছেছে মেদিনীপুরের ওই প্রাক্তন কাউন্সিলারের কাছেও? তাছাড়া, পুরসভায় কর্মী নিয়োগের যে পরীক্ষা হয়েছিল তার ওএমআর শিট, মেধা তালিকা সবকিছুই তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই নেই পুরসভার তথ্য ভাণ্ডারে। প্রশ্ন উঠেছে, অয়ন শীলের অফিস কিংবা ফ্ল্যাট থেকে যে সব ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছিল, সে সবের মধ্যেই কী ছিল মেদিনীপুর পুরসভায় নিয়োগ হওয়া ১৭ জনের নথি? ফাইল চিত্র