বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিকিকিনি

জঙ্গলমহলের ডুয়ার্স

সপ্তাহান্তের ভ্রমণের জন্য দুয়ারসিনির জঙ্গল আদর্শ। বর্ণনায় অমর নন্দী।

সত্যিই খুব দূরে নয়, কলকাতা থেকে মাত্র তিন ঘণ্টা দশ মিনিটে ইস্পাত এক্সপ্রেস যখন ঘাটশিলা নামিয়ে দিয়ে গেল ঘড়িতে তখন পৌনে দশটা। দলমা পাহাড় আর সাতগুরুং নদীর ধারে পুরুলিয়ার দুয়ারসিনি পৌঁছতে লাগল আরও ঘণ্টাখানেক। আগে অনেক এক্সপ্রেস ট্রেনই গালুডিতে থামত। তখন যাওয়াটা আরও সহজ ছিল। গালুডি থেকে অটো করেই দুয়ারসিনি পৌঁছানো যেত। আপাতত ঘাটশিলা থেকেই টাটাসুমো ভাড়া করেছি আমরা।
গালুডি পার হয়েছি অনেকক্ষণ। অরণ্য পাহাড় ভেদ করে পিচ রাস্তায় চড়াই উতরাই পার হয়ে চলেছি। এই সবুজ যাত্রাপথে আমাদের সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে সদ্যযৌবনা চঞ্চলা আদিবাসী কন্যার মতো উচ্ছল সাতগুরুং নদী চলেছে পাশে পাশে। আমাদের সারথি অর্থাৎ ড্রাইভার কৃষ্ণদা বললেন ‘এই নদীর নাম সাতগুরুং কেন জানেন? সাতবার পাক খেয়ে নদীটি দুয়ারসিনি এসেছে।’ এখন অবশ্য ছোট কয়েকটা সেতু দুয়ারসিনির দূরত্বকে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। চলতে চলতে গালুডি থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার যাত্রা শেষে পৌঁছলাম দুয়ারসিনি। সদ্য বর্ষা শেষে শাল, পিয়াল, গামহার, কেন্দুপাতার ঘন সবুজ রং, মনের অন্তরে আনন্দ ভৈরবীর সুর তুলে চলেছে একটানা। অবশেষে দুয়ারসিনির সেই বনবাংলোয়। অরণ্যের ক্যানভাসে আসমানি নীলে বর্ণময় তিনটি গোলাকৃতি কটেজ শিল্পীর আঁকা ছবির মতো। সামনে বিস্তৃত লন। টেবিলে চেয়ার পাতা। পিছন দিকে দলমার পাহাড়। অখণ্ড অবসর কাটানোর নিশ্চিন্ত ঠিকানা।
শনিবার দুয়ারসিনির হাট। হাটে যাওয়ার পথেই মন্দির। তার মধ্যে কালো পাথরের মূর্তিকে পাহাড়ের মা বা মা দুর্গা হিসেবে পুজো করে আদিবাসীরা। মন্দিরে দেখা পূজারি ভবানী সিং লায়ার সঙ্গে। বললেন, বংশপরম্পরায় ভূমিজ আদিবাসী শ্রেণির মানুষই পূজারির দায়িত্ব পান। বাদল সিং ছিলেন প্রথম পূজারি। আশপাশের জেলা লাগোয়া ঝাড়খণ্ড, এমনকী কলকাতার মানুষও এখানে মানত করে যান। মূল মন্দির নানা রঙে রঞ্জিত বর্ণময় চূড়াবিশিষ্ট। মন্দিরের পিছনে জঙ্গলে সুড়িপথ চলে গিয়েছে সাতগুরুং নদীর ধারে। যাওয়ার পথে দুয়ারসিনির থান। বলির কাঠ। বর্ষা সবে শেষ। সাতগুরুং সমস্ত শক্তি নিয়ে নীচের পাথরে ঝরনার মতো আছড়ে বয়ে যাচ্ছে পুবের ঘন জঙ্গলে। মকর সংক্রান্তিতে এখানে বসে বিরাট মেলা। স্থানীয় আদিবাসী মহিলারা সে সময় সাতগুরুংয়ের জলে চান করে দণ্ডি কেটে মন্দিরে পূজা দেন। শনিবারে হাটের পসরা নিয়ে চলে এসেছে হাটুরেরা। পাহাড়ের ঠিক কোলে নদীর ধারে হাট। টাটকা সব্জি, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, প্রসাধনী, তেলেভাজা মিষ্টির দোকান বসেছে সার দিয়ে। আঞ্চলিক লোকের ভিড় তো বটেই এমনকী আশপাশের গাঁ গঞ্জ থেকেও প্রতি শনিবার লোকজনের ভিড় লাগে হাটে। ওদের নিস্তরঙ্গ, খেটে খাওয়া জীবনে দুয়ারসিনির হাট খোলা জানালার মতো উৎসবের আলো নিয়ে আসে। যুবতী মেয়েরা সাজে চুলে কৌরঞ্জের তেল আর বনফুলে। একধারে কেন্দুগাছের ছায়ায় কিছু মহিলা বসেছে মহুয়া আর হাঁড়িয়া নিয়ে। কয়েকজন বিক্রি করছে বাখর। জানলাম বিভিন্ন গাছের শিকড়বাকড়ের নির্যাস দিয়ে তৈরি বড়ির মতো দেখতে এই বাখর নাকি মহুয়ায় মিশিয়ে খেলে নেশা বাড়ে কয়েকগুণ। হাটের ঠিক মাঝে বিক্রি হচ্ছে তেজিয়াল কিছু মোরগ। শুনলাম মোরগ লড়াইয়ের জন্য অনেক দামে বিকোয় এই মোরগ। মোরগ লড়াই এই অঞ্চলের এক জনপ্রিয় খেলা। গোধূলির সূর্য দলমা পাহাড়ের আড়ালে অস্ত যাওয়ার সঙ্গেই হাটুরেরা বেচাকেনা চুকিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ি ফেরার পথ ধরছে। আমরাও আদিবাসীদের হাতে তৈরি বাঁশের কিছু শৌখিন জিনিসপত্র কিনে আর তেলেভাজা সহযোগে চা খেয়ে ধীরে ধীরে বাংলোর দিকে এগলাম।
জঙ্গলমহলের ডুয়ার্স বলে খ্যাত দুয়ারসিনি প্রকৃতি ভ্রমণকেন্দ্রের দেখভালের দায়িত্বে পুরুলিয়ার আসনপানি যৌথ বন পরিচালন কমিটি। দুয়ারসিনি ঘিরে আগামী দিনে বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বনদপ্তরের। কটেজগুলির পিছনেই আছে একটি পাহাড়। এই পাহাড়ে ট্রেকিং রুট খোলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই ক্যাম্পাসে বসানো হবে আরও দুটি টেন্ট। পিয়াল, মহুয়া, বহেড়া, কুসুমের মতো গভীর অরণ্যে এখানে নানান পাখির কলতানে ঘুম ভাঙে। কপাল ভালো হলে দেখা মিলতে পারে বুনো হাতির। এই জঙ্গলে রয়েছে চিতল হরিণ, বুনো শুয়োর। এমনকী নেকড়ের মুখোমুখি হয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। তাই ট্রেকিং-এর অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা নেওয়া হবে। দুয়ারসিনির প্রায় ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের গালুডি ড্যাম আর ঘাটশিলা ঘুরে আসা যায়। নাগরিক কোলাহল আর ক্লান্তি কাটাতে আপনার গন্তব্য হতেই পারে ‘জঙ্গলমহলের ডুয়ার্স’ দুয়ারসিনি।
কীভাবে যাবেন: হাওড়া স্টেশন থেকে বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস, তিতলাগড় ইস্পাত এক্সপ্রেস, রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে ঘাটশিলা নেমে সড়ক পথে গালুডি হয়ে দুয়ারসিনি যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে সড়কপথে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান হয়ে দুয়ারসিনি পৌঁছানো যায়। থাকার জন্য দলমা পাহাড়ের গায়ে বনদপ্তরের অধীনে তিনটি বন বাংলো রয়েছে।
ছবি: বিমল কর্মকার
 
9Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পরিবারের কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির স্বাস্থ্য সমস্যায় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। পেশাদারি কাজকর্মে হঠাৎ বাধা আসতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৮৬ টাকা৮৭.৬০ টাকা
পাউন্ড১০৭.৩১ টাকা১১১.০৭ টাকা
ইউরো৮৯.৩৪ টাকা৯২.৭৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা