বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
আমরা মেয়েরা

চেহারা নিয়ে কটূক্তি, কী করবেন?

বডি শেমিং হলে আইনের দ্বারস্থ হওয়া যায়? জানালেন আইনজীবী রুমানিয়া বাগচী ঘোষ।
 
‘কালো তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ’— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন নিজের উপলব্ধির কথা। তার সঙ্গে সকলে আত্মস্থ হতে পারে কি? সহজ উত্তর ‘না’। সে কারণেই আজও কোথাও পাত্রীর গায়ের রং বিচার্য। কোথাও বা পাত্রের স্থূল চেহারা বা মাথাজোড়া টাক নিয়ে আলোচনা হয়। কালো, ফর্সা, রোগা, মোটা, বেঁটে, লম্বা— এই মাপকাঠিতে মানুষকে মাপতে অভ্যস্ত সমাজ। কটূভাবে তা বলতেও অনেকের দ্বিধাবোধ হয় না। তাতে যে উল্টোদিকের মানুষটিকে অপমান করা হয়, তার খারাপ লাগে, তা গ্রাহ্য করেন না বক্তা। নিজেকে মোটা, রোগা, কালো, বেঁটে শুনতে শুনতে হীনমন্যতাবোধ তৈরি হওয়াও আশ্চর্যের নয়। এই ধরনের বিশেষণে দেগে দেওয়ার একটা পোশাকি নাম রয়েছে, ‘বডি শেমিং’। যে কোনও বয়সের মানুষ এর শিকার। শুধু যে মুখের উপর কেউ আপনার চেহারা, উচ্চতা, রং নিয়ে কটূ মন্তব্য করলে তাকে ‘বডি শেমিং’ বলা হয়, তা নয়। এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে আসতে পারে ভার্চুয়ালিও। এর প্রতিকার কী? যে কোনও বয়সের মানুষ ‘বডি শেমিং’-এর শিকার হলে তার কোনও আইনি সমাধান রয়েছে কি? সহজ করে বুঝিয়ে দিলেন আইনজীবি রুমানিয়া বাগচী ঘোষ।
আলোচনার শুরুতেই রুমানিয়া জানালেন, ‘বডি শেমিং’ শব্দটা নতুন। অতীতে কি এই ধরনের হেনস্থা হয়নি? নিশ্চয়ই হয়েছে। কিন্তু তখন মানুষ এখনকার থেকে কম সচেতন ছিলেন। ফলে এ নিয়ে প্রতিবাদ কম হতো। তিনি বলেন, ‘বডি শেমিংয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় সংবিধানে এখনও পর্যন্ত কোনও আইন নেই। কিন্তু মানুষ সচেতন হচ্ছেন। ফলে ভবিষ্যতে আইন হতেই পারে। অনেকেই বডি শেমিংয়ের শিকার হচ্ছে। বাচ্চারা ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। অ্যাংজাইটিতে ভুগছে। তার থেকে আত্মহননের চেষ্টাও করছেন অনেকে। বিভিন্ন অসুখের শিকার হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে এ নিয়ে আইন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।’
বডি শেমিংয়ের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও আইন না থাকলেও এমন কিছু আইন রয়েছে যা আপনাকে বডি শেমিংয়ের থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। রুমানিয়া বললেন, ‘ভারতীয় সংবিধানে ‘আর্টিকেল ১৪’-এ বলা হচ্ছে প্রতিটি নাগরিক তাদের শারীরিক গঠন এবং লিঙ্গ বাদ দিয়ে আইনের চোখে সমান। কালো, মোটা, রোগা, লম্বা, স্ত্রী, পুরুষ— সকলেই আইনের চোখে সমান।’ ‘কনট্র্যাক্ট অ্যাক্ট’-এর সন্ধান দিলেন আইনজীবী। এই আইন অনুযায়ী কোনও মানুষকে অতিরিক্ত মোটা বা রোগা বলে তাকে কোনও চুক্তি থেকে বাতিল করা যাবে না। 
অজান্তেই বডি শেমিংয়ের কুপ্রভাব অনেক সময় শিশুদের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এতে ছোটদের মানসিক গঠনে সমস্যা হয়। রুমানিয়া জানালেন, স্কুলের মধ্যে শিশুকে শারীরিক বা মানসিক হেনস্থা করা হলে ‘রাইট অব চিলড্রেন টু ফ্রি অ্যান্ড কম্পালসারি এডুকেশন অ্যাক্ট’ রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘এই আইন ২০০৯-এ পাশ হয়েছে। শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই আইন তৈরি হয়েছে। সেকশন ১৭ শিশুর শারীরিক এবং মানসিক হেনস্থার বিরুদ্ধে কথা বলে। শিশুর যে কোনও ধরনের শারীরিক বা মানসিক হেনস্থা হলে এই আইনের আওতায় সে সুবিধে পাবে। যদি শিশুর শারীরিক এবং মানসিক হেনস্থার অভিযোগ প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত ১৭ (১) (২)-এর আওতায় শাস্তি পাবে। ৬-১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য।’ এর মধ্যে বডি শেমিং থাকলে তা নিয়েও আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ কালো, ফর্সা, রোগা, মোটা, বেঁটে, লম্বা— হওয়ার কারণে যদি শিশু শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যেতে পারে। বডি শেমিং থেকে সুরক্ষা পেতে ১৭ (১) ধারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উদাহারণ হিসেবে সাম্প্রতিক অতীতে ঘটে যাওয়া কেরলের একটি ঘটনার কথা তিনি উল্লেখ করলেন। ‘কেরলের একটি স্কুল তাদের পড়ুয়াদের মারধর করত। পরীক্ষায় নম্বর কেটে নেওয়া হবে বলে তাদের ভয় দেখাত। মানসিক হেনস্থা করত। শিশুদের অভিভাবকরা যখন আদালতের দ্বারস্থ হন, এই আইনের আওতাতেই অভিযুক্তদের শাস্তি হয়’, বললেন রুমানিয়া। 
বডি শেমিং নিঃসন্দেহে মানহানিকর। ফলে বডি শেমিংয়ের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও আইন না থাকলেও বডি শেমিংয়ের কারণে যদি কোনও ব্যক্তির মানহানি হয়, অবমাননা হয়, তার আইন রয়েছে। ফলে বডি শেমিংয়ের শিকার হলে মানহানির মামলা করা যেতে পারে। বডি শেমিং থেকে যৌন হেনস্থার ঘটনাও ঘটতে পারে। রুমানিয়া জানালেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ নম্বর ধারার আওতায় যৌন হেনস্থার বিচার হয়। হেনস্থা শুধু সামাজিক নয়। সাইবার বুলিইংয়ের শিকারও হতে পারেন যে কোনও বয়সের মানুষ। সেই ঘটনা মানসিক হেনস্থার আওতায় এনে আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন। আবার সাইবার ক্রাইম বিভাগেও অভিযোগ জানাতে পারেন। 
রুমানিয়ার পরামর্শ, ‘শুধু আইন দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। শিশুদের ক্ষেত্রে অভিভাবক, স্কুল শিক্ষক, অ্যাডভাইসারি কমিটির সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদেরও মানসিকতার বদল খুব জরুরি। কথা বলার সময় আমাদের শব্দচয়নের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কাউকে ‘মোটা’ না বলে স্বাস্থ্যবান বললে অথবা ‘কালো’ না বলে শ্যামবর্ণ বললে হয়তো যাঁকে বলছেন, তাঁর ততটা খারাপ লাগবে না।’ 
স্বরলিপি ভট্টাচার্য
7Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পেশাদারি উচ্চশিক্ষায় দ্রুত অগ্রগতি ও সেই সূত্রে কর্মপ্রাপ্তির  সুবর্ণ সুযোগ আসতে পারে। মিত্রবেশী শত্রু দ্বারা...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.৬৮ টাকা৮৮.৪২ টাকা
পাউন্ড১০৭.৫০ টাকা১১১.২৬ টাকা
ইউরো৮৯.৩০ টাকা৯২.৬৯ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা