চারুপমা

মেকআপের দিনবদল

এসে গেল বিয়ের মরশুম। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা বদলে গিয়েছে ব্রাইডাল মেকআপ? লিখেছেন অন্বেষা দত্ত।

একটা সময় বাঙালি কনে বলতে বাঁধাধরা ছবি আঁকা থাকত সবার মনে। এখনও পুরনো অ্যালবাম নেড়েচেড়ে অতীত ঘেঁটে মা-কাকিমাদের বিয়ের ছবি দেখলেই বোঝা যায় সেটা। সে সাজ গতে বাঁধা হলেও তা ছিল ভারি মনছোঁয়া, আবেগভরা। পোলকা ডটে টুকটুকে লাল বেনারসি, কপালভরা কনেচন্দন। সিঁথির মাঝে টায়রা টিকলি, নাকে নথ। হাতে কানে গলায় গয়নার পাশাপাশি একটা মাঝারি মাপের রজনীগন্ধার মালা, মাথায় শোলার মুকুট। ‘সাত পাকে বাঁধা’-য় সুচিত্রা সেন কিংবা ‘তিন কন্যা’-র সমাপ্তিতে অপর্ণা সেনের মুখখানা মনে করুন। ঘরে ঘরে বাঙালি কন্যেরা তো সেজে এসেছেন এভাবেই। 
তারপর সময়ের দাবি মেনে সেই সাধারণ অথচ অভিজাত সাজের ছোঁয়ায় লাগল আধুনিকতার পরশ। সাজের ক্ষেত্রে খাঁটি বাঙালিয়ানা কোথাও যেন একটু কোণঠাসাও হল। কিন্তু যুগের হাওয়া এমনই যে তখনকার মেয়েদের সাজে সেটাই হয়ে উঠল ধারা। মেকআপের প্রাবল্য বাড়ল। রংচাপা মেয়েকে বেশ ফরসা দেখাতেই হবে, এমন একটা প্রবণতাও প্রায় নিয়মে পরিণত হল। বহু ক্ষেত্রে কনের মুখ চড়া মেকআপে হল প্রায় সাদা অথচ হাত রইল যেমনকে তেমন। চোখে লাগলেও কনেদের ফরসা মুখ চাই-ই চাই-এর চাপে এ সাজের ধারা টিকে রইল বহাল তবিয়তে।     
এরপর ব্রাইডাল মেকআপ অতীতের তুলনায় আবার বদলেছে। এই বদলকে বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন এযুগের মেয়েরা। দিনে দিনে বিয়ের কনের লুক হয়েছে আরও পরিশীলিত। বলা ভালো, ফেলে আসা সেই রেট্রো জমানার সাধারণ অথচ অভিজাত লুক ফিরে পেতে চাইছেন অনেকেই। ভরসা রাখছেন বাংলার ঐতিহ্যে। তার মানে সাম্প্রতিক অতীতে যা যা হচ্ছিল, তার সবটাই কি খারাপ ছিল? তা কিন্তু বলা হচ্ছে না। কিন্তু সময়ের দাবি মেনে বাজারে এসেছে মেকআপ সংক্রান্ত বহু আধুনিক সামগ্রী। তাতেই মেকআপ আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় বদলটা ঘটে গিয়েছে কনের মনের অন্দরে। কনেরা এখন সদর্পে বলছে, ‘আমি যেমন, আমাকে যেন তেমনই দেখতে লাগে। আমাকে যেন অন্য কেউ মনে না হয়।’ সাজের ক্ষেত্রে এটা এখন স্লোগান হয়ে উঠেছে প্রায়। আর সেটাই তুরুপের তাস হিসেবে কাজ করছে এই গোটা পরিবর্তনের খেলায়।
আগে বিয়ের লুকে চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনে ভাবা হতো লাল বেনারসি, কনেচন্দন, লাল চেলি আর সোনার গয়না। এখন বিয়ে ঠিক হওয়া থেকে ওই বিশেষ দিনটি নিয়ে ভাবতে শুরু করেন আধুনিকারা। নিজেকে কীভাবে ওই দিনে তিনি সাজিয়ে তুলতে চান, সে বিষয়ে তার একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে যায় তার।  কী চাইছি আর কী চাইছি না, সেটা নিয়ে হবু কনের স্পষ্ট মতামত থাকে। তাকে যোগ্য সঙ্গত করেন এসময়ের রূপটান শিল্পীরা। দুইয়ে মিলে প্রথা বা ঐতিহ্য না ভেঙেও ব্রাইডাল লুক হয় মানানসই।
এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মেকআপ আর্টিস্ট অভিজিৎ পালের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘মেকআপ সবসময়ই পাল্টাচ্ছে। কোনও না কোনও ট্রেন্ড চলতেই থাকে। হবু কনেরাও সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। আর এখন ওয়েডিং-এর সময়টা নিয়েও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। অনেকে সকালটা বেছে নিচ্ছেন, অনেকে শেষ বিকেল বা  সন্ধের ঠিক মুখে মুখে বিয়ে করতে চাইছেন। তাই দিনের আলো বা বিকেলের আলো বুঝে আমাদের মেকআপ করতে হয়। দিনের মেকআপ হালকা করতে হয়। আবার সন্ধের দিকে একটু উজ্জ্বল মেকআপ করা যায়। কিন্তু সেটা কখনওই লাউড বা অতিরিক্ত লাগবে না। কারণ এযুগের  ব্রাইড কখনওই ‘লাউড মেকআপ’ চাইছেন না— এটা খুব পরিষ্কার একটা ট্রেন্ড। এখন প্রোডাক্টও খুব ভালো হয়েছে। খুব বেশি দিতেও হয় না।’ অভিজিতের মতে, ‘এখনকার কনেরা শুধুমাত্র মেকআপ নিয়ে কথা বলেন না। তাঁদের চিন্তা থাকে গোটা লুকটা নিয়ে। অর্থাৎ শাড়ির রঙের সঙ্গে মেকআপ-এর সাযুজ্য চাই। তারা বেনারসিই হয়তো পরে, তবে নানা রঙের। বা অন্য কোনও ট্রেন্ডি বেনারসি। তার সঙ্গে ম্যাচ করার মতো ব্লাউজ ও ভেল বা ওড়না চাই। কেউ ম্যাচ করে কনস্ট্রাস্ট চায়, কেউ আবার টোন অন টোন চায়। এগুলো এখন খুব ভেবেচিন্তে করা হয়। পনেরো বছর আগে যে ধরনের ওড়না কনের জন্য ব্যবহার হতো, এখন কিন্তু সেটা একেবারেই হয় না। এর সঙ্গে সোনার গয়না চিরন্তন। যে যার সামর্থ্য ও পছন্দমতো পরতে পারে।’ অভিজিতের কথায়, ‘আমরা গাইড করে দিই টিকলি টায়রা বা নথ ইত্যাদি নিয়ে। যাতে পুরো বিষয়টা সুন্দর হয়। এছাড়া মেকআপে আর একটা বড় দিক, চন্দনের ব্যবহার। সেটাও একালে ‘মিনিমাল’ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ ভ্রু বরাবর কপালজুড়ে এবং দু’গাল ভরে একসময় যেমন চন্দনের নকশা থাকত, তা এখন আর কেউ ভাবতেই পারে না। মূলত সামান্য কপালের টিপে চন্দনের ছোঁয়াটুকু রাখাই এখনকার ধারা।’  
মাথায় রাখা ভালো, মুখের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল চোখ। বিশেষ দিনে চোখদু’টি যদি সুন্দর না দেখায়, সাজটাই মাটি। চোখের সজ্জার ক্ষেত্রে অভিজিৎ বললেন, ‘এখন মেয়েরা বলিউড ট্রেন্ডটাও খুব ফলো করে। সেটা থেকে অনুপ্রেরণা পায়। যত তারকার ইদানীংকালে বিয়ে হয়েছে, সেই ট্রেন্ড অনুযায়ী দেখা যাবে চোখে বেশি ফোকাস করা হলে লিপ বা ঠোঁটের রং থাকবে অত্যন্ত হালকা। অনেকেই চায় নো মেক আপ লুক। অর্থাৎ যে যেমন, তাকে যেন তেমনটাই দেখতে লাগে। চোখে হয়তো একটু ব্রাউন বা ব্ল্যাক শেড, স্মোকি আইজ আর তার সঙ্গে সেমি ন্যুড কালারের লিপস্টিক। আবার সবাই হয়তো ট্রেন্ড ফলো করে না। নিজের পছন্দ মেনেই লুক ঠিক করে।’ 
সাজের ক্ষেত্রে অবাঙালিরাও এখন যথেষ্ট সূক্ষ্মতায় বিশ্বাসী, জানালেন অভিজিৎ। তাঁর কথায়, ‘ওরা ফ্যাশনেবল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিদের মতোই লাউড মেকআপ থেকে সরে আসছে। বাঙালি মেয়ের মধ্যে আমি যাঁদের সাজিয়েছি, তাঁদের বেশিরভাগই স্মার্ট লুক চায়। তবে তার মধ্যে হয়তো কারও ক্ষেত্রে মেকআপ একটু বাড়াতে হয়, ট্র্যাডিশন মেনে। যেমন চন্দন আর লাল টিপ জুড়লেই মেকআপ অনেকটা বদলে যায়। এর সঙ্গে জরুরি সংযোজন ফুল। কার্নেসিয়া বা গোলাপ সবাই ব্যবহার করে আজকাল। মরশুম মেনে ফুল খুঁজতে হয়। শীতকালে জুঁই বা বেল পাওয়া যায় না, তখন মরশুমি ফুল ব্যবহার করতে হয়। শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ফুল বেছে নেওয়া হয়।’ 
ব্রাইডাল সাজে হেয়ারস্টাইলে কতটা বদল হয়েছে? অভিজিৎ বলছেন, ‘ব্রাইডালের ক্ষেত্রে চুল নিয়ে খুব পরীক্ষানিরীক্ষা করা যায় না। যেহেতু খোঁপা করতেই হয় বিয়ের দিন। তবে খোঁপার মধ্যে কেউ চায় মেসি বান, কেউ চায় জেল খোঁপা। কেউ আবার হালকা পাফি খোঁপাও করেন। মুখের আকৃতি অনুযায়ী খোঁপা করা উচিত। ওভাল ফেস হলে যেমন খুব বেশি টানটান করে খোঁপা বা জেল খোঁপা মানায় না। তাতে মুখটা আরও বেশি গোল লাগে। এক্ষেত্রে হালকা পাফি খোঁপা ভালো লাগে। একটু লুজ খোঁপা, ঘাড়ের কাছে ফুল। এটা ভালো লাগে দেখতে। আর যাদের খুব শার্প ফিচার, চোখমুখ কাটা কাটা, তাদের ক্ষেত্রে নিট বান খুব ক্লাসি এবং স্মার্ট লাগে দেখতে।’ রিসেপশনের লুক ইদানীং একেবারে অন্যরকম হয়ে গিয়েছে? অভিজিৎ জানালেন, ‘রিসেপশনে অনেক বেশি এক্সপেরিমেন্ট করা হচ্ছে। পোশাক থেকে শুরু করে লুক, সব কিছু নিয়েই। বাঙালি হলেও অনেকে রিসেপশনে লেহেঙ্গা পরছেন। রঙের ক্ষেত্রে প্রাধান্য থাকছে প্যাস্টেল শেডে। আগে রিসেপশনেও সোনার গয়না পরতেই হবে এই ভাবনাটা বেশি কাজ করত। আজকাল সেটা ভেঙেছে। রিসেপশনের লুক তৈরির জন্য শুধু অনেকে কস্টিউম জুয়েলারি বেছে নিচ্ছেন। এতে বাড়ির লোকও আপত্তি করছে না। আগে এই চাপটা থাকত। এখন অনেক বেশি সাজকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ লেহেঙ্গার সঙ্গে সোনা সবসময় যায় না। তবে আজকাল গয়নার ক্ষেত্রেও অনেক বদল এসেছে। সোনা ছেড়ে কনে বিয়ের দিনেই পুরোপুরি রুপোর গয়না পরেছে, এমন উদাহরণ অসংখ্য। একেবারে আলাদা স্টেটমেন্ট। ভীষণ সুন্দর লুক। অনেকেই এভাবে সাহসী হচ্ছে। আগেকার মতো গতানুতিক ধারা অনুসরণ না করে নিজের মর্জিমতো সেজে উঠতে চাইছে। এটা খুবই ইতিবাচক।’
(ছবি অভিজিৎ পালের ইনস্টাগ্রাম পেজ থেকে)
গ্রাফিক্স  : সোমনাথ পাল
12Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

যে কোনও কাজকর্মে সকালের দিকে বিশেষ উন্নতির যোগ। বিকেলের দিকে অবশ্য কিছু বাধা আসতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.৭৩ টাকা৮৫.৪৭ টাকা
পাউন্ড১০৫.৮৫ টাকা১০৯.৬১ টাকা
ইউরো৮৭.৮২ টাকা৯১.২১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
1st     December,   2024
দিন পঞ্জিকা