মহোৎসবের সাজগোজটি হতে হবে জমকালো। শেষবেলায় চেক লিস্ট মিলিয়ে নিন একবার। লিখছেন স্বরলিপি ভট্টাচার্য।
ঢাকের বোলে ঘুম ভাঙছে এখন। বছরের এই সময়টার জন্যই তো আজন্মের অপেক্ষা বাঙালির। সপ্তমী পুজোয় বসেছেন ঠাকুরমশাই। কলাবউয়ের স্নান শেষ। আচার মেনে চলছে মায়ের আরাধনা। কোনও কোনও অফিস ষষ্ঠী হয়ে ছুটি পড়েছে। কেউ বা পুজোয় ছুটি পাবেন সপ্তমী পেরিয়ে। আবার কারও আপৎকালীন পরিষেবায় দায়িত্ব। কিন্তু পুজো সকলের। এই চারটে দিনের অক্সিজেনে ভর করে চলতে হবে গোটা বছর। প্রেম পাবে মনে রাখার মতো ফ্রেম। সাজের তালিকা তৈরি তো বটেই। কিন্তু ওই পরীক্ষা হলে ঢোকার আগে যেমন একবার বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে নেওয়া ছোটবেলার অভ্যেস। বার্ষিক মাঞ্জা দেওয়ার আগেও চেক লিস্ট আরও একবার চেক করে নিতে ক্ষতি নেই।
সপ্তমীটা তোলা থাকে বন্ধুদের জন্য। সকাল বিকেল প্যান্ডেলে ঘোরা, সঙ্গে ইচ্ছেমতো পেটপুজো। শাড়ি, সালোয়ার স্যুট, জিন্স টপ, কাফতান— যে কোনও পোশাক বেছে নিন। সকালের জন্য সুতি, হ্যান্ডলুম আদর্শ। হালকা রং পরুন। ঘন করে কাজল আর ন্যুড লিপস্টিকেই নজর কাড়তে পারেন। রাতের জন্য সিল্ক বা টিস্যুর পোশাক বেছে নিতে পারেন। বেস মেকআপ ভালো করে বসিয়ে নিন। এর উপর কমপ্যাক্ট বুলিয়ে নিলেই আপনি তৈরি। জুতো যদি একেবারে নতুন হয়, তাহলে মনে করে সঙ্গে ব্যান্ডেড রাখুন। নতুন জুতোয় ফোস্কা পড়বে এবং ব্যান্ডেড লাগিয়ে হাঁটতে হবে। এটা নাহলে তো দুর্গাপুজোর একটা নিয়ম পালনই হয় না!
এবার অষ্টমীর দিকে মন দিন। লাল পেড়ে সাদা শাড়ির চিরন্তন সাজ হতে পারে। ঢাকাই, গরদ, কাঁথার সাজে আমার আমিকে বাঙালিয়ানার মোড়কে চিনে নেওয়ার এ তো সুবর্ণ যোগ। আবার একটু পরীক্ষামূলক সাজতেও ক্ষতি নেই। শার্টের উপর হ্যান্ডলুম শাড়ি পরতে পারেন। মাথায় খোঁপা বেঁধে কাঁটা বা বাগান লাগাতে পারেন। খোলা চুল ভালো করে ব্রাশ করে নিয়ে কানের পাশে একটা জারবেরা লাগালেও দেখতে ভালো লাগবে। অথবা চিরচেনা ঘাড় খোঁপা সাজ সম্পূর্ণ করবে। অষ্টমীতে সোনার গয়নার সাবেকি সাজ মানাবে ভালো। দুপুরে ভোগ খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিন। তবে তো সন্ধেবেলা আগে থেকে কিনে রাখা পৈঠানি বা পচমপল্লীর সাজে জেল্লা ফিরবে আপনার।
নবমীর দিনটা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন অনেকে। নবমী শুরুর মুখে সন্ধিপুজোর বিশেষ আয়োজনে শামিল হতে চাইলে তার আবার আলাদা প্রস্তুতি। মাহেশ্বরী সিল্ক, অসম সিল্ক, গাদোয়াল, টিস্যু কাঞ্জিভরম, তসর আজরাখ ট্রাই করুন নবমীতে। পাড়ার প্যান্ডেলে বসে টানা আড্ডা হোক অথবা বাড়ির পুজোর কাজ সেরে ঠাকুর দেখতে বেরনো, সবেতেই মানাবে ভালো। পোশাক অনুযায়ী গয়না নির্বাচন করুন।
দশমীতে লাল-সাদা যেন বাঙালির ড্রেসকোড। মাকে বরণ, সিঁদুর খেলা এই রং ছাড়া মানাবে না। হালকা কোনও ফ্যাব্রিকের পোশাক বেছে নিন। আরামে না থাকলে আনন্দটাই মাটি। নো মেকআপ লুক দশমীর জন্য পারফেক্ট। কারণ সিঁদুরে রাঙানো মুখই এদিনের মেকআপ। ত্বকের অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে যে নির্দিষ্ট ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিম বছরভর ব্যবহার করেন সেটাই পুজোর সময়ও সঙ্গে রাখুন।
পোশাক এবং মেকআপ দুই ক্ষেত্রেই আপনার আরাম প্রাধান্য পাবে। এমন কোনও পোশাক পরে ফেলবেন না যাতে অস্বস্তি হয়। ফ্যাশন আর স্টাইলের সংজ্ঞা যেন গুলিয়ে না যায়। চারদিনের পোশাক গুছিয়ে রাখুন। কোন শাড়ির সঙ্গে কোন ব্লাউজ পরবেন, তাও বেছে রাখা ভালো। ফিটিংস না হলে দেখতে ভালো লাগে না। চুলের কাঁটা, সেফটিপিন, টিপ, আইব্রো পেন্সিল, লিপ লাইনারের মতো ছোট অথচ প্রয়োজনীয় জিনিস সাজের সময় খুঁজে পান না অনেকে। সব কিছু একসঙ্গে একটা বাক্সে রাখতে পারেন। যদি অষ্টমীর অঞ্জলি বা দশমীর দিন বরণের সময় সোনা বা হীরের মতো দামি গয়না পরবেন বলে ভাবেন, তা যত্ন করে সাবধানে তুলেও রাখতে হবে। অ্যাক্সেসরিজ সাজের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ব্যাগ, সানগ্লাস, ছাতা, জুতো কোন দিন কোনটা পরবেন তা ছকে রাখুন। রোদ্দুরে বেরলে সানস্ক্রিন মাখতেই হবে। আর বাড়ি ফিরে ক্লান্তিকে দূরে সরিয়ে রেখে মেকআপ তোলার কথা ভুললে চলবে না। যে কোম্পানির প্রোডাক্ট ব্যবহারে আপনি অভ্যস্ত, পুজোতেই তাকেই সঙ্গী করুন। নতুন কোনও প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে তা আপনার ত্বকের উপযুক্ত নাও হতে পারে। ফলে চেনা রাস্তায় হাঁটাই শ্রেয়। পুজোর চারদিন খাওয়ার অনিয়ম হবেই। তাই হাতের কাছে রাখুন প্রয়োজনীয় ওষুধ। পরিমাণ মতো জল খেতেই হবে। দিনভর ডিটক্স ওয়াটার সঙ্গে রাখুন। নিয়ম মেনে ঘুম তো পুজোয় নৈব নৈব চ। তাই একটানা ঘুম না হলেও সামান্য বিরতি দিয়ে বিশ্রাম নিয়ে নিন।
এই মেয়েটা পুজোয় প্রথম শাড়ি পরবে। ওই মেয়েটার পুজোয় আসবে প্রথম প্রেম। নিজের জমানো টাকায় সেই মেয়েটা পুজোয় করে ফেলবে সোলো ট্রিপ। সকলেরই দুর্গা সহায়। মাতৃরূপে, দেবীরূপে, বন্ধুরূপে, কর্মীরূপে এই প্রাণ ঢালা উৎসবে ভালো থাকুক সব প্রাণ।