আজও লাহোর কিংবা করাচির কারও ঘরে ঢুঁ মারলে মিললেও মিলতে পারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্র। একফালি একটা রংচটা বাদামি কাগজ। হাতে ধরলে হয়তো ঝুরঝুর করে খসেও পড়তে পারে! তবুও এটুকু জানান দেবে, একদা এখানকার ছেলেরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন! তৎকালীন রেঙ্গুন অথবা মায়ানমারে যান। খোঁজ করলে বিশ্ববিদ্যালয় সেনেট প্রণীত দু’একটা কাগজ-ঐতিহ্য ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। আসলে আজকের যে ভবনটি কলেজ স্ট্রিটের ল্যান্ডমার্ক, তার কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ছিল ঠিক এতটাই!

ব্রিটিশ যুগের মধ্য গগন। ভারতের গভর্নর জেনারেলের কুর্শিতে লর্ড ক্যানিং। পশ্চিমী শিক্ষা প্রসারে নবযুগ আন্দোলনের সময়কাল। রাজা রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার, উইলিয়াম কেরি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর...কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন। কিন্তু সবটাই কেমন যেন বিক্ষিপ্ত, পঠন পাঠনের স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। শিক্ষা প্রসারে নীতি গঠনের ভীত নেই। এভাবে চললে তো গোড়ার গলদই ভবিষ্যতের ভাবনা বানচাল করে দেবে! প্রয়োজন পড়ে আগোছাল শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটা সংগঠিত রূপ দেওয়ার। ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাসচিব ডঃ ফ্রেডরিক জোন একটা আইডিয়া বের করলেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যদি একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায়। ১৮৫৪ সালের জুলাই মাস। কোম্পানির কাছে ভারতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রস্তাব পাঠালেন ফ্রেডরিক। ভূমিষ্ঠ হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি দু’টি বোম্বে ও মাদ্রাজ। এবার প্রয়োজন পড়ল নীতি নির্ধারণ করার লোকজনের। ভারতীয় ও ব্রিটিশ শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠিত হল ৪১ জনের কমিটি। নাম দেওয়া হল সেনেট। গোড়ার দিকে কমিটির সদস্যরা কখনও মেডিক্যাল কলেজের কাউন্সিল রুমে, কখনও উপাচার্যের বাড়িতে, আবার কখনও রাইটার্স বিল্ডিংয়ে আলোচনায় বসতেন। কিন্তু, এভাবে কতদিন! ব্রিটিশরা ঠিক করলেন একটা ভবনের দরকার। জায়গা ঠিক হল, কলেজ স্ট্রিটের সংস্কৃত কলেজের দক্ষিণ দিকের পুকুরপাড়। জায়গাটি কিনতে ও বাড়ি নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ করলেন গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিল। ছ’বছরের মধ্যে মাথা তুলল অপরূপ স্থাপত্যশৈলীর একটা ভবন। ১৮৭৩ সালের ১২ মার্চ এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হল দ্বারোদ্ঘাটন। আজকের প্রজন্ম যাকে চেনে ঐতিহাসিক সেনেট হাউস নামে। লাহোর, করাচি থেকে রেঙ্গুন ছিল যার ছাদের তলায়!