তিনি সাহিত্য সম্রাট। কিন্তু অনেকেই জানেন না, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম প্রেম ছিল কবিতা। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময় থেকেই কবিতা লেখার শুরু। ১৮৫৩ সালে ১৫ বছর বয়সেই লিখে ফেলেছিলেন বেশ কয়েকটি কবিতা। এমনকী, তিন বছর পর মাত্র ১৮ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতার বইও প্রকাশিত হয়। নাম, ‘ললিতা।’ প্রচ্ছদে লেখা ছিল আরও কয়েকটি কথা, ‘পুরাকালিক গল্প। তথা মানস।’ এটাই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত প্রথম গ্রন্থ, ‘দুর্গেশনন্দিনী’ নয়। ‘দুর্গেশনন্দিনী’ তাঁর লেখা প্রথম উপন্যাস। সংস্কৃত ভাষাটির প্রতি ছোট থেকেই অমোঘ আকর্ষণ ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের। বঙ্কিম-সাহিত্যেও তার প্রভাব উজ্জ্বল। কিন্তু ‘ললিতা’ প্রকাশের সময়ও সেভাবে গদ্য লেখা শুরু করেননি সাহিত্য সম্রাট। সেটার সূত্রপাতও এই কবিতার বইটি ঘিরেই। ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় ‘ললিতা’র বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। সেই বিজ্ঞাপনের বয়ান লিখেছিলেন সদ্য আঠারোর গণ্ডি টপকানো বঙ্কিম। কী লেখা ছিল তাতে? ‘সু কাব্যালোচকমাত্রেরই অত্র কবিতাদ্বয় পাঠে প্রতীতি জন্মিবেক যে ইহা বঙ্গীয় কাব্য রচনা রীতি পরিবর্তনের এক পরীক্ষা বলিলে বলা যায়। তাহাতে গ্রন্থকার কতদূর সুত্তীর্ণ হইয়াছেন তাহা পাঠক মহাশয়েরা বিবেচনা করিবেন। তিন বৎসর পূর্বে এই গ্রন্থ রচনা কালে গ্রন্থকার জানিতে পারেন যে তিনি নূতন পদ্ধতির পরীক্ষা পদবিরূ‌ঢ় হইয়াছেন। এবং তৎকালে স্বীয় মানস মাত্র রঞ্জনাভিলাষজনিত এই কাব্যদ্বয়কে সাধারণ সমীপবর্তী করিবার কোন কল্পনা ছিল না কিন্তু কতিপয় সুরসজ্ঞ বন্ধুর মনোনীত হইবার তাহাদিগের অনুরোধানুসারে এক্ষনে জন সমাজে প্রকাশিত হইল।’ বলাই বাহুল্য এ লেখা পড়লেই বোঝা যায় তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কবিতার বইটি অবশ্য পাঠক সমাজে তেমন সাড়া ফেলেনি। আজ এই মহান সাহিত্যিকের ১২৭ তম প্রয়াণবার্ষিকী।