১৯৫২ সাল। নয়াদিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বসেছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর। সেতার-সরোদের যুগলবন্দি। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর এবং উস্তাদ আলি আকবর খান। তবলায় পণ্ডিত কণ্ঠে মহারাজ, কিষাণ মহারাজ। শ্রোতারা অনুষ্ঠান শুরুর অপেক্ষা করছেন। এমন সময় সেতার হাতে মঞ্চের সামনে উপস্থিত এক সুপুরুষ যুবক। পরনে কালো পাঞ্জাবি। তিনি ইমদাদখানি ঘরানার অন্যতম সেতার শিল্পী উস্তাদ বিলায়েত খান। কেউ কিছু বোঝার আগেই বলে উঠলেন, ‘এই মঞ্চে অনেক সুন্দর ফুল রয়েছে। এই সন্ধ্যায় রবুদা এবং আলুদার সঙ্গে অনুষ্ঠান করে আমিও একটু সুবাস ছড়াতে চাই।’ সকলে তো অবাক। সামনেই বসেছিলেন রবিশঙ্কর এবং আলি আকবরের গুরু উস্তাদ আলাউদ্দিন খান। তৎক্ষণাৎ অনুষ্ঠান না করার আর্জি জানালেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে দুই সেতার শিল্পীকে নিয়ে শ্রোতাদের উচ্ছ্বাস সপ্তমে উঠেছে। তাই ফিরে দেখার কোনও উপায় ছিল না। মাঝখানে বসলেন আলি আকবর। দু’দিকে রবিশঙ্কর এবং বিলায়েত। সকলের থেকে অনুমতি নিয়ে রবিশঙ্কর ধরলেন রাগ মাঝ খামাজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলে বুঝতে পারলেন, দুই সেতার শিল্পীর মধ্যে লড়াই জমে উঠেছে। এক সময় ঝালা অংশে তার সপ্তকে মোহময় আবহ তৈরি করলেন রবিশঙ্কর। সঙ্গে সঙ্গে ধাতব বাক্সের ঢাকনার সাহায্যে সেতারে এক অদ্ভূত সুর সৃষ্টি করলেন বিলায়েত। শুনেই উস্তাদ হাফিজ আলি খান বলে উঠলেন, ‘মার ডালা!’ বন্ধ হল সুরসৃষ্টি। কিছু না বলে মঞ্চ ছাড়লেন রবিশঙ্কর। সেই সন্ধ্যায় জয়ী হলেন বিলায়েত। গত ২৮ আগস্ট ছিল তাঁর জন্মদিন। এই অনুষ্ঠান থেকেই বিলায়েত-রবিশঙ্কর ডুয়েলের সূত্রপাত। দুই সেতার শিল্পীকে নিয়ে বিভাজন তৈরি হয়েছিল ভক্তদের মধ্যেও। ঠিক যেন ইস্ট বেঙ্গল-মোহন বাগান। আর কখনও একসঙ্গে বাজাননি দু’জনে।

ধানবাদে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন মান্না দে। সঙ্গী গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান শেষে পুলক জানালেন, সেখানেই তাঁর শ্যালিকার বাড়ি। দীর্ঘদিন খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। একবার সেখানে যেতে চান। রাজি হলেন মান্না দে। গাড়ি নিয়ে চললেন শ্যালিকার খোঁজ নেওয়ার জন্য।