‘শিবের দুহিতা তুমি, আস্তিক জননী/জরুৎকারু মুণির পত্নী, বাসুকি ভগিনী/দেবী আয় মা, আয় মা ঝাঁপানের আসরে…’
শ্রাবণ মাস। নদীনালা, খালবিল সব পরিপূর্ণ। চারদিকে সাপের উপদ্রব। পল্লি-বাংলার ঘরে ঘরে তাই মনসাপুজোর আয়োজন। এমন সময় গ্রামের মনসার থানে বসেছ ঝাঁপান গানের আসর। সাপুড়িয়ারা ডালা খুলে বিষহরির বন্দনা গেয়ে সাপ খেলাতে শুরু করেন। তাঁদের শরীরের দোলা লক্ষ্য করে দুলতে থাকে সাপ। আর ঝাঁপান গানের সুরে দুলতে থাকে কৃষিজীবী পরিবারের বউ-ছেলে-মেয়ের মন। মনসামঙ্গলের চিরাচরিত কাহিনির উপর আধারিত হয় ঝাঁপান গানের পালা। কোনওটির নাম দংশন, কোনওটি ভাসান, কোনও পালার নাম আবার বেহুলার বাসরসজ্জা। মূল গায়েন আসর শুরু করেন মনসা-বন্দনা গেয়ে। তারপর কথায়, গানে, অভিনয়ে এগিয়ে যায় মূলত করুণ রসের কাহিনি। সর্পদংশনে মৃত লখিন্দরের শোকে বেহুলার হাহাকার কোথাও গিয়ে মিলে যায় গ্রামের সেই কৃষক রমণীর নিষ্ঠুর নিয়তির সঙ্গে, যাঁর স্বামী চাষের জমিতে গিয়ে সাপের কমড়ে পৃথিবী ছেড়েছে। 
মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, নদীয়া, পূর্ব বর্ধমান ইত্যাদি কৃষিপ্রধান জেলায় আজও মহা ধুমধামের সঙ্গে হয় ঝাঁপান উৎসব। ওপার বাংলারও বগুড়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙা ইত্যাদি এলাকায় ঝাঁপান গান বেশ জনপ্রিয়। লোক গবেষকরা বলেন, বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার মতো রাঢ়বঙ্গে মা মনসাকে সর্পদেবীর পাশাপাশি বৃষ্টি, চাষবাস ও সমৃদ্ধির দেবী হিসেবেও পুজো করা হয়। সেই মতো বদলে যায় গানের কথা-কাহিনি। ঝাঁপান উৎসবের অন্যতম অঙ্গ সাপের খেলা। কিন্তু পরিবেশ সংক্রান্ত আইনকানুন কড়া হওয়ায় বেশিরভাগ জায়গায় তা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। তবু বাংলার নিজস্ব লোকধারার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গ্রামবাংলায় আজও অমলিন ঝাঁপান গান। 

১৮৯৮ সাল। তখন জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজের গবেষণাগারে কাজ করতেন। সেই সময় লর্ড র‌্যালে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য ইংল্যান্ড থেকে সিংহল গিয়েছিলেন। ফেরার পথে লর্ড রিপনের ডাকে কয়েকদিনের জন্য কলকাতায় আসেন।