বুদ্ধদেব গুহর সৃষ্টি ‘বাবলি’ এবার রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় আসছে বড়পর্দায়। ছবি মুক্তির আগে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়।
চরিত্রের জন্য ওজন বৃদ্ধি কি কেরিয়ারে প্রথমবার?
হ্যাঁ, প্রথম। তবে ‘ধর্মযুদ্ধ’র ‘মুন্নি’ চরিত্রের জন্যও ওজন বাড়িয়েছিলাম। কারণ তার আগে ‘পরিণীতা’র জন্য অনেকটা রোগা হয়ে গিয়েছিলাম। তবে উপন্যাসে যেভাবে ‘বাবলি’ চরিত্র বর্ণনা করা হয়েছে, তেমন ওজন আগে কখনও বাড়াতে হয়নি।
দ্বিতীয়বার সন্তানসম্ভবা হওয়ার সময়টা কাজে লেগেছিল?
আসলে সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময়টাতে মেয়েদের সাধারণ ভাবেই ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে আমাদের মেয়ে ইয়ালিনির সময় আমার যে খুব ওজন বেড়েছিল তা নয়। আবার ওর জন্মের পর খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমিয়েও ফেলছিলাম। রাজ তখন বলেছিল, তাহলে তো তুমি ছবিটা করতে পারবে না। তখন আবার প্রচুর খাওয়াদাওয়া করে ওজন বাড়িয়েছিলাম (হাসি)।
ইন্ডাস্ট্রিতে নির্দিষ্ট ধাঁচে নায়িকাকে ভাবার অভ্যেস বদলেছে। সেটা কীভাবে দেখছেন?
এখন আমাদের দেশে গল্প বলার যে ধরন, সেখানে কনটেন্টই রাজা। নায়ক, নায়িকাকে যে ধাঁচে ফেলে দেওয়া হতো এতদিন, সেগুলো এখন আর নেই। সে কারণেই এখনও নীনা গুপ্তা অনেক ছবিতে হিরোইন। গল্প প্রধান ছবিতে আমি অভিনেত্রী হিসেবে চরিত্রই হতে চাই। পরিচালক চাইলে চরিত্রের জন্য আমি সব কিছু করতে পারি।
গল্প, উপন্যাসের চরিত্রে অভিনয় করা কি তুলনামূলক ভাবে কঠিন?
সব চরিত্রই নিজের মতো করে কঠিন। একটা চরিত্রকে আমার অভিনীত আগের সব চরিত্র থেকে আলাদা করাটাই আমার কাজ। তাছাড়া কোনও চরিত্রে যেন শুভশ্রীর ছোঁয়া না থাকে, সেটাই চেষ্টা করি। দর্শক যাতে পর্দায় চরিত্রটিকেই দেখতে পান। হ্যাঁ, এটা ঠিক সাহিত্যের চরিত্রের ক্ষেত্রে পাঠক বা দর্শকের নিজস্ব কল্পনা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে পরিচালক যেমন কল্পনা করেছেন, সেটা আমি পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছি। তাছাড়া স্রষ্টা অর্থাৎ বুদ্ধদেব গুহ নিজেই আমাকে ‘বাবলি’ হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। সত্ত্ব নেওয়ার সময় রাজকে বলেছিলেন, শুভশ্রীকেই বাবলি করো। রাজ বলেছিল, শুভশ্রী তো খুব রোগা। উনি বলেছিলেন, মোটা করে নিও। ওঁকে দেখানোর খুব ইচ্ছে ছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য সেটা আর হল না।
এই ধরনের চরিত্রে ডিটেলিংও গুরুত্বপূর্ণ তো?
অবশ্যই। একটা কথা বলি, লুক এবং প্রোডাকশন ডিজাইন রাজের ছবিতে রাজ নিজে করে। বাবলি যে পার্পল রঙের শাড়ি পরেছে, তার সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ডের রং কী হবে বা গাড়ির রংটাও কাস্টমাইজ করেছে। যেখানে গাড়ি থামবে, সেখানে ব্যাকড্রপ কোন রঙের হবে, ঘরের ভিতরের দৃশ্য হলে চরিত্রের পোশাক কোন রঙের হবে, তার সঙ্গে কোন রঙের বিছানার চাদর মানাবে বা পর্দার রং কী হবে, এটা পরিচালকের সিদ্ধান্ত। তার সঙ্গে আর্ট বা কস্টিউম বিভাগের ঘুম উড়ে যায় (হাসি)। কারণ রাজ খুব পার্টিকুলার। রাজের ছবিতে তিন, চারবার করে লুক সেট হবেই।
প্রেমের সংজ্ঞা এখন বদলেছে অনেকটাই। সেই প্রেক্ষিতে এই ছবি কতটা প্রাসঙ্গিক?
প্রেমের সংজ্ঞা বদলে গেলেও প্রেম কখনও বদলাবে না। আমার মনে হয় যে প্রজন্মই আসুক, যতই মানুষ ইন অ্যাটেনটিভ হয়ে যাক, তাদের প্রেমের ইচ্ছে, অনুভূতি বদলাবে না। সেটা এই ছবিতে রয়েছে। জঙ্গল, পাহাড়, নদীর মধ্যে দিয়ে দুটো অচেনা মানুষ যাচ্ছে। গাড়ি খারাপ হয়ে যাচ্ছে, জঙ্গলে রাত কাটাতে হচ্ছে— ফলে এই প্রেমে অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে। হয়তো এই প্রেমটা দর্শক নিজেদের জীবনে অ্যাপ্লাই করবে না। কিন্তু আমি নিশ্চিত দর্শক এমন একটা রাত নিজেদের জীবনেও চাইবে।
স্বরলিপি ভট্টাচার্য