গান, গিটার। কয়েক মাস ধরে জনপ্রিয়তার জমজমাট হুল্লোড়। মঞ্চ মাতানো মেহেফিল। নতুন গানের প্রচার, প্রকাশ। তারপর আচমকা বেশ কিছুদিনের জন্য সবকিছু থেকে আবার উধাও সাম্প্রতিক সময়ের উজ্জ্বল সঙ্গীতশিল্পী উজ্জ্বয়িনী মুখোপাধ্যায়। কেন এমন আত্মগোপন? দমফাটা হেসে উজ্জ্বয়িনীর উত্তর, ‘আমি এমনই। একটানা এতকিছুর মধ্যে থাকতে ভালো লাগে না। মনে হয়, অনেক কাজ করে ফেলেছি। কিছুদিন বিশ্রাম নিই। পরেরটা আবার কয়েকদিন পরে ভাবব। আমার প্রচুর কিছু লাগে না। আমি লোভী নই। অল্পেতেই সন্তুষ্ট।’
তাঁর নামের পাশে ইন্ডাস্ট্রির ‘আইটেম সিঙ্গার’-এর বিশেষণ লাগিয়ে দেওয়ার প্রয়াসে উজ্জ্বয়িনী অসন্তুষ্ট। বিরক্ত গায়িকার ক্ষোভ, ‘একটা সময় দেখলাম আইটেম গান গাওয়ার প্রচুর অফার আসছে। যেগুলো রুচিসম্মত, সেগুলো গাওয়াই যায়। কিন্তু চটুল নাচের সঙ্গে, কিছু অশালীন শব্দ বসিয়ে আইটেম নম্বর বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার মনে হয়, এখন আমার ‘না’ বলার একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। আমি আইটেম সিঙ্গার হিসেবে নিজেকে ভাবতে ও ভাবাতে রাজি নই।’ বরং এখন নিজের সৃষ্টিশীলতা নিয়েই মেতে থাকতে চান শিল্পী। পুজোর জন্য তৈরি করছেন নতুন ফোক- ফিউশন। উৎসাহী উজ্জ্বয়িনীর দাবি, ‘এটা খুব ইন্টারেস্টিং কম্বিনেশন। আশা করি শ্রোতাদের ভালো লাগবে।’
দু’দশকের সঙ্গীত সফরে যে স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করেছেন, সেই নিরিখে উজ্জ্বয়িনীর মূল্যায়ণ, ‘মনে হয়, যেটা হতে চেয়েছিলাম, সেটাই হচ্ছি।’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘আমরা যারা রিয়ালিটি শো জিতে ফেলেছিলাম, ভেবেছিলাম হাতে চাঁদ পেয়ে গিয়েছি, আসলে তারপরেই কেরিয়ারের শুরু হয়। সোশ্যাল মিডিয়া জনপ্রিয় হওয়ার পর সবই অন্যরকম হয়ে গিয়েছে।’ ২০০০ সালে যখন উজ্জ্বয়িনী তাঁর সঙ্গীত জীবনের প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রাথমিক পর্বে, তখন সমাজমাধ্যমের এত রমরমা ছিল না। ‘আমরা তখন ভাবতেই পারিনি সোশ্যাল মিডিয়ার উপর ভিত্তি করে কাজ তৈরি হবে’, বললেন তিনি। গত কুড়ি বছরে সঙ্গীত জগতে প্রযুক্তির বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত নিজেকে, নিজের শিল্পের উপস্থাপন ভঙ্গি বদলানো উজ্জ্বয়িনী অকপটে বলেন, ‘প্রথম দিকে সোশ্যাল মিডিয়া বোঝাটা আমার কাছে একটা কালচার শক ছিল বলা যেতে পারে।’
সংস্কৃতি জগতের এই দ্রুত দিক বদলের সাক্ষী উজ্জ্বয়িনীর পর্যবেক্ষণ, ‘রুচি বদলেছে। দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। এখন আগে গান দেখা, পরে শোনা।’ এই পরিবর্তনের পথ ধরেই গানের জগতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর অনুপ্রবেশ। ‘এআই-এর সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের আছে বলে মনে হয় না। তবে গানের মধ্যে একজন শিল্পীর অনুভব আনতে অপারগ এআই’, প্রযুক্তির সামনে কার্যত নিরুপায় শোনাল উজ্জ্বয়িনীর মত।
স্বর্ণযুগের গান এখনও সকলের কানে বাজে। কিন্তু এই সময়ের গানের ভবিষ্যৎ কী?
এই প্রসঙ্গে শিল্পীর বক্তব্য, ‘আমাদের প্রজন্মে কি সোনার কণ্ঠ নেই? অবশ্যই আছে। আসলে আমাদের স্ট্রাগল, দৈনন্দিন জীবনের যন্ত্রণা, যাই থাকুক না কেন, সবটাকে নিয়ে আমরা হাসি মুখে কাজ করে চলেছি। তার উপর আছে ট্রোলিং। স্বর্ণযুগে কাউকে ট্রোলড হতে হয়নি।’
প্রিয়ব্রত দত্ত