আড্ডা, রাত জেগে ঠাকুর দেখা, যা প্রাণ চায় খাওয়া। রুটিনের দফারফা করে কেটেছে উৎসব পর্ব। শীত সামনে। পিকনিক, বিয়েবাড়ি, পার্টির মরশুমও। এখন সুস্থ থাকতে মানতে হবে কিছু শর্ত। লিখেছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।
উৎসবের মরশুম এল, প্রথম পর্ব ঝড়ের মতো চলেও গেল। সঙ্গে নিয়ে গেল আপনার সাধ করে মেদ ঝরানো ছিপছিপে চেহারাখানা। যেটুকু বাড়তি মেদ কষ্টেসৃষ্টে বাদ দিতে পেরেছিলেন, লাগাতার অনিয়মে তা ফের থাবা বসিয়েছে শরীরে। জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত ধরলে বলা যায়, উৎসবের প্রথম পর্ব সবে পেরিয়ে এসেছেন। এরপর শীতের হাওয়ায় ভর করে বাঙালির বিয়েবাড়ি অভিযান আছে। তার সঙ্গে যোগ হবে নানা ছোট-বড় পার্টি, পিকনিক, বেড়াতে যাওয়ার তোড়জোড়। কাজেই নিয়মমাফিক রুটিন জীবনে ফিরতে এখনও মাস দুই। তবে এত অনিয়মের পর এখনই কিছু নিয়ম চালু না করলে এই দু’টি মাস খুব একটা সুখের হবে না। তাই বাড়তি অনিয়মকে কব্জা করতে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।
‘তবে উদ্যোগের প্রথম ভাগে ভারী কিছু দিয়ে শুরু করলে শরীর বিদ্রোহ করবে’, জানালেন জিম প্রশিক্ষক ও ফিটনেস বিশেষজ্ঞ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘পুজোর সময় কমবেশি অনিয়ম সকলেরই হয়। তাতে মেদ জমার প্রবণতাও বাড়ে। কিন্তু সেই সমস্যা শুরু হলেই যে হঠাৎ ভারী ভারী এক্সারসাইজ বা জিমে ওয়েট ট্রেনিং শুরু করে দিতে হবে এমন নয়। এই সময় মেদের কারণে ও শরীরচর্চার দীর্ঘ অনভ্যাসে পেশি স্টিফ হয়ে থাকে। তাই সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই পেশিতে টান, খিঁচ লাগা এসব সমস্যা আসতে পারে। তাই এই সময় সুস্থতার লক্ষ্যমাত্রাকে বানাতে হবে সহজ থেকে জটিল ক্রমানুসারে। যদি শরীরচর্চার অভ্যেস থাকে, মাঝে শুধু কয়েক মাস বন্ধ থাকে, তাহলে জিমে গিয়ে হালকা এক্সারসাইজ দিয়ে ওয়ার্ক আউট শুরু করুন। খালি হাতের ব্যায়ামে জোর দিন। আর যদি পুজোর পরেই এই সুঅভ্যেস চালু করেন, তাহলে ‘ধীরে চলো’ নীতিই নিতে হবে।’
কেমন হবে তাহলে বাড়তি মেদ ছেঁটে ফিট থাকার মিশন? জানালেন বিভিন্ন প্রশিক্ষক ও ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা।
হাঁটা: প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে কার্যকর ও সহজ ব্যায়াম হাঁটা। জিমে যাওয়ার সময় না পেলে বা মেশিন ব্যবহার করতে না চাইলে আস্থা রাখুন হাঁটায়। ঘড়ি ধরে অন্তত ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটলে হাত-পা ও কোমরের পেশি মজবুত হয়। উরুর মেদ ঝরে। সারা শরীর টোনড হতে শুরু করে। এক্সারসাইজের দুনিয়ায় সাঁতারের পরেই হাঁটার স্থান। পুজোয় যেটুকু মেদ পেটে বা শরীরে জমা হয়েছে, তা ঝরাতে হাঁটাহাঁটিকেই প্রাথমিক এক্সারসাইজ হিসেবে ধরুন।
সাঁতার: এই মরশুম সাঁতার কাটার নয়। তবুও কেউ কেউ এখনও দিনের একটা সময় জলে নামতে পছন্দ করেন। পুজোয় শরীরে জমা মেদ ঝরাতে সবচেয়ে কার্যকরী এই সাঁতার। একে বলে ‘কমপ্লিট অ্যাক্টিভিটি’। সাঁতার এমন একটি কার্ডিওভাস্কুলার এক্সারসাইজ যে এতে মাথা থেকে পায়ের পাতা অবধি এক্সারসাইজ হয়। তাই সাঁতার কাটার অভ্যেস থাকলে তা শুরু করতে পারেন।
সাইক্লিং ও যোগাসন: শরীরে মেদ জমার সঙ্গে ফ্লেক্সিবিলিটি কমে যাচ্ছে বুঝলে সাইক্লিং ও যোগাসনের উপর ভরসা করতে পারেন। এতে শরীর আগের ফ্লেক্সিবিলিটি ফিরে পাবে। তবে এক্ষেত্রেও ভারী এক্সারসাইজের বদলে হালকা যোগাসন দিয়ে শুরু করুন।
ডিটক্স পানীয়: উৎসবের মরশুমে এন্তার আজেবাজে জিনিসে পেট ভরিয়েছেন। সঙ্গে শরীরচর্চার নামগন্ধও ছিল না। ফলে সবক’টি অনিয়মই কিছু না কিছু ক্ষতি করেছে। সেসব পুষিয়ে নিতে দিন শুরু করুন ডিটক্স ওয়াটার দিয়ে। নানা রকম বীজ ও লেবুর রস, জিরে, মেথি, শসা ইত্যাদি নানা উপকরণ ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের ডিটক্স পানীয় প্রস্তুতিতে। ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে আপনার শরীর, ওজন ও নানা অসুখবিসুখের উপর নির্ভর করে এই পানীয় প্রস্তুত করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে অন্তত রোজ এক গ্লাস করে জল বাড়িয়ে দিন নিজের রুটিনে। রাতারাতি চার লিটার জল খেতে না পারলেও এক গ্লাস জল বাড়াতে খুব একটা অসুবিধা হবে না।
স্বাস্থ্যকর খাবার: দীর্ঘ অনিয়মের পর প্রথমেই খুব কড়া ডায়েটে ফিরতে যাবেন না। মাঝপথে উদ্যম হারিয়ে আরও আজেবাজে জিনিস খেয়ে ফেলার প্রবণতা এতে বাড়ে। বরং খাবারের পাত সাজান স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে। সকালে গ্রিন টি বা গ্রিন কফি, পাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন, অল্প ফ্যাট ও খুব সামান্য কার্বোহাইড্রেট থাকুক। টক দই, মিল্ক শেক, কলা, ডাবের জল ইত্যাদি থাকুক পাতে। সাদা ভাত খাওয়ার বদলে শুরু করুন ব্রাউন রাইস। নুনের পরিমাণ কমান। একেবারে ছেড়ে দিন চিনি। ময়দাও বাদ থাকুক আপাতত। অতিরিক্ত ক্যাফিন শরীরকে ডিহাইড্রেট করে। তাই ক্লান্তি কাটানোর জন্য কফি এখন বাদ থাক। নিষেধের তালিকায় পড়বে ঠান্ডা পানীয়, চিপস, মিল্ক চকোলেট।
পর্যাপ্ত ঘুম: শুধু বাইরে খাওয়াই নয়, উৎসবের মরশুমে রাত জাগা, হইহল্লা, ঠাকুর দেখা, নতুন ওয়েব সিরিজ— বাদ যায়নি কিছুই। ফলে ঘুমের সঙ্গে আপস তো করতেই হয়েছে। তাই এই সময়টা মন দিয়ে ঘুমোন। রাত জেগে গল্প, আড্ডা ও ওয়েব সিরিজ দেখায় আপাতত তালা পড়ুক। উৎসবের পর অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক।
খাওয়া ও এক্সারসাইজ এই দুইয়ের যৌথতা নিয়েই ফিটনেস গোল পূরণ করা সম্ভব। তবে দিনকয়েক পালন করে কোনওকিছুই মাঝপথে ছাড়া চলবে না। নিয়ম মেনে একটানা মাস তিনেক চললেই হারিয়ে ফেলা ছিপছিপে চেহারা ধরা দেবে আপনার হাতের মুঠোয়!