বিকিকিনি

মেঘ,বৃষ্টি আর 
সবুজের রাজ্য পাটনিটপ

যেখানে সাদা মেঘের ভেলার মাঝে অনায়াসে হারিয়ে ফেলতে পারেন নিজেকে, সেই স্বপ্নের দুনিয়ার বর্ণনায় তনুশ্রী কাঞ্জিলাল মাশ্চরক।

পাটনিটপের পথে যেতে যেতে রবীন্দ্রপ্রেমী হলে যে গান আপনি গুনগুন করবেনই করবেন— ‘মেঘ বলেছে ‘যাব যাব’ রাত বলেছে ‘যাই’/ সাগর বলে ‘কূল মিলেছে— আমি তো আর নাই’।  অথবা গাইতে পারেন ‘মেঘেরা দল বেঁধে যায় কোন দেশে ও আকাশ বল আমারে...!’ 
কাটরা থেকে বৈষ্ণোদেবী দর্শন করে ঠিক হল এবার পাটনিটপে যাওয়া হবে। দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার।
যাত্রাপথের সৌন্দর্য অতুলনীয়। পাহাড়ি পথের পাকদণ্ডী পেরিয়ে ঘুরে ঘুরে চলেছে গাড়ি। আর গাড়ির জানালা দিয়ে যখনই উঁকি দিচ্ছি তখনই চোখে পড়ছে একরাশ সবুজে মোড়া পাহাড়ি ঢাল। তা কখনও উপরে উঠেছে, কখনও নীচে নেমে গিয়েছে। চারদিক কেবলই সবুজ আর সবুজে ছাওয়া। রাস্তার দু’ধারে লাল টুকটুকে অ্যালপাইন ফুল যেন পর্যটকদের সাদর আমন্ত্রণ জানানোর জন্যই দলবেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে আর যাবেন কোথায়? মন ফুরফুরে হয়ে যাবে শুধু পথের শোভা দেখেই।  
পাটনিটপ যাওয়ার রাস্তা মাত্র পঞ্চাশ কিমি পেরনোর পরেই এল উধমপুর। আরও ত্রিশ কিলোমিটার দূরে কুদ। এই কুদ গ্রামটি আবার মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। আমাদের সারথি লাকি সিংয়ের মুখে জানলাম সেই কথা। আর জানলামই যখন তখন গাড়ি তো একটু থামাতে হয়। আমরা মিষ্টিপ্রিয় বাঙালি বলে কথা। ব্রেকফাস্টের ছুতোয় তৃপ্তি করে মিষ্টি খেয়ে আবার গাড়ি ছুটল। তিন ঘণ্টার মনোরম দৃশ্যপটকে সঙ্গী করে আমরা চলেছি পাটনিটপ। 
হালকা বৃষ্টি মাখা দুপুরে তুলতুলে মেঘের চাদরে আষ্টেপৃষ্ঠে মোড়া এই শৈলাবাসে যখন পৌঁছলাম পাটনিটপের মেঘমুলুক আমাদের  সহৃদয় অভ্যর্থনা জানাল।  
হোটেলে পৌঁছনোর আগেই আমাদের ড্রাইভার লাকি সিং বললেন, সামনে একটা পার্ক আছে, সেটা দেখে যান। অগত্যা ছুটলাম। একটু এগিয়েই দেখি চোখের সামনে আঁকার বইয়ের পাতা যেন কেটে বসানো। ছবির মতো একটা বাগান। কী যে অপূর্ব, বলে বোঝানো ভার। 
ছোট ছোট সবুজরঙা কটেজ আর মখমলি সবুজ গালিচা পাতা বিস্তীর্ণ মাঠ। সুন্দর বসার জায়গা রয়েছে। আর রয়েছে স্কিইংয়ের ব্যবস্থা। চোখজুড়ানো মনভরানো। যেদিকেই তাকাই সেদিকেই দেখি পাইন আর দেবদারুদের সারি। মেঘের চাদরে মুখ লুকিয়ে চলছে তাদের আমোদ আহ্লাদ বিনিময়। এই পার্কের নাম ‘প্যাডোরা চক।’
ছোট সবুজ কটেজগুলো জম্মু কাশ্মীর পর্যটন দপ্তরের। চমৎকার ব্যবস্থাপনা। এখানে থাকতে চাইলে রান্নার লোকও পেতে পারেন অথবা মেঘের পর্দায় চোখ রেখে  নিজেরাই উদরপূর্তির ব্যবস্থা করতে পারেন। অথবা খাবার কিনেও খেতে পারেন। পার্কের বাইরেই রয়েছে হরেক কিসিমের খাবারের দোকান। 
এই থাকার জায়গাগুলো ভারি সুন্দর। কাঠের  কটেজগুলোর সামনেই রয়েছে বারান্দা। সেখানে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে উন্মুক্ত প্রান্তর, দূরে পাহাড় আর গাছেদের মিছিল। 
পাটনিটপের পার্কের সামনেই ঘোড়াচালকরা থাকেন। ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে ঘুরে দেখে আসতেই পারেন কাশ্মীর ভ্যালি, আপেল বাগান ইত্যাদি। আরও একটা মস্ত আকর্ষণ রয়েছে এই পার্কে, তা হল অ্যাডভেঞ্চারের ব্যবস্থা। রাইফেল শ্যুটিং, জিপ লাইনিং খুব উপভোগ্য।
আর রয়েছে পার্ক জুড়ে বিকিকিনির মেলা। হরেক রকমের পসরা সাজিয়ে বসেছেন কাশ্মীরি বিক্রেতারা।  সেখানে শাল, দুর্দান্ত সালোয়ার স্যুট, অপূর্ব সুতোর কারুকাজ করা বিছানার চাদর, বৈচিত্র্যময় ব্যাগ ও নকশাদার সোয়েটার সহ নানা কিছু কেনার সুযোগ পাবেন। রকমারি পণ্যের পসরা দেখে আপনাকে দু’কদম থমকাতেই হবে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই মানুষ পাটনিটপে ছুটে আসেন। নৈসর্গিক শোভার মায়াকানন যেন এই শৈলাবাস। পাহাড়ি শৈলাবাসের মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করবেন বলে এলাকার কাছের লোকজনও  সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে আসেন এখানে। আশপাশে দেখার জায়গার মধ্যে রয়েছে, শিবগড় রাজাজি ফোর্ট, শিবগড় করোলি মাতা মন্দির, শিবগড় ছোটি মাতা মন্দির ইত্যাদি। 
কিন্তু জায়গাটার নাম পাটনিটপ কেন? আমাদের সারথি বললেন, ‘পাটনি দা তালাও’ থেকে পাটনিটপ নামটি এসেছে। অর্থাৎ রাজকন্যার পুকুর। এই নিসর্গমণ্ডিত এলাকায় একসময় এক সুন্দর জলাশয় ছিল। এর সৌন্দর্যে বিমোহিত রাজকন্যা তাঁর রাজ অন্দরমহলের বিলাসবহুল স্নানাগার ছেড়ে এখানে আসতেন স্নান করতে। লোকমুখে ধীরে ধীরে ‘পাটনি দা তালাও’ পাটনিটপ হয়ে গিয়েছে।
এই অঞ্চলে রয়েছে ২০০ বছরের পুরনো সুপ্রাচীন নাগমন্দির। জনশ্রুতি, জাগ্রত এই নাগদেবীর মন্দিরে মনস্কামনা জানিয়ে সুতো বাঁধলে নাকি তা সহজেই  পূরণ হয়। এবং সেটা পূরণ হলে আবারও মন্দিরে এসে সেই সুতোর গিঁট খুলে যেতে হয়। না হলে নাকি দুর্ভোগ নিশ্চিত। এমনই বিশ্বাস এলাকাবাসীর।
পাটনিটপ থেকে সাইট সিইংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।  ঘুরে আসতে পারেন সানসার লেক। দূরত্ব কুড়ি  কিলোমিটার। ত্রিকোণ আকৃতির সবুজ চরাচর ঢালু হয়ে নেমে গিয়েছে হ্রদের জলে। অকৃত্রিম নিটোল মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি। এখানে পর্যটকের ভিড় খুবই কম। নরম সবুজ ঘাসের চাদর চোখের আরাম আর প্রাণের আনন্দ আনে। সানসার থেকে ইচ্ছে হলে আপনি যেতে পারেন নাথা টপ। বরফে মোড়া দূরের পাহাড়ে যেন চকচকে রুপোলি চাদরের ঘেরাটোপ। অপার নৈঃশব্দ্য, জোরালো হাওয়া, খানিক বৃষ্টি আর পাইন বন থেকে আসা অদ্ভুত মিষ্টি সুরেলা ধ্বনি—  সব মিলিয়ে এক অপার্থিব চিত্র তৈরি হবে চোখের সামনে। শীতকালে নাথা টপ পুরো বরফে ঢেকে যায়। সে সময়ের সৌন্দর্য আবার অন্যরকম।  
অনেক পর্যটক বরফের সৌন্দর্য  উপভোগ করবেন বলে শীতেই আসতে পছন্দ করেন এখানে। তবে বছরের যে সময়েই পাটনিটপে পা রাখা যাক না কেন, অপার রূপের ডালি নিয়ে স্বমহিমায় সে সুসজ্জিত থাকবে 
আপনার জন্য।
থাকার জন্য দারুণ সুন্দর হোটেল রয়েছে পাটনিটপে।  হোটেলের ঘরের ভেতর বড় বড় কাচের জানলার সামনে বসে যেদিকে তাকাবেন শুধুই পাইন দেবদারুর খুনসুটি দেখতে পাবেন। আর জানলা খুললেই ঘরের ভেতর মেঘেদের ছোটাছুটি আর এক্কাদোক্কা খেলা। নির্মল আনন্দে আপনার বেড়ানোর রংরূপ একেবারে কানায় কানায় ভরে উঠবে। রকমারি সুস্বাদু খাবারও মিলবে প্রায় সব হোটেলে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর জমাটি ঠান্ডার সঙ্গে সই পাতিয়ে মনপসন্দ খাবার উপভোগ করাও এই ভ্রমণের উপরি পাওনা। আরও একটা কথা, এখানকার লোকেদের ব্যবহার অত্যন্ত ভালো। উর্দুতে একটা কথা আছে, মেহমান নওয়াজি। বাংলা করলে হয় অতিথির অভ্যর্থনা। সেই কাজটিতে এখানকার মানুষ খুবই দড়। 
‘মন চল মুসাফির বাঁধ গাঁটরিয়া’— তাহলে আর দেরি কেন? মেঘেদের শামিয়ানায় তাদের সঙ্গে সই পাতাতে চলুন যাই পাটনিটপ। 
কীভাবে যাবেন: কলকাতা স্টেশন থেকে জম্মু তাওয়াই অথবা হাওড়া স্টেশন থেকে হিমগিরি এক্সপ্রেসে সোজা জম্মু। জম্মু থেকে ৪৮ কিলোমিটার কাটরায় মা বৈষ্ণোদেবী দর্শন সেরেও যাওয়া যায় পাটনিটপে। দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। এছাড়া জম্মু থেকেও পাটনিটপে সোজা যাওয়া যায়। দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন: হোটেল হলিডে ইন, হোটেল গ্রিন টপ, হোটেল গ্রিন টপ রেসিডেন্সি সহ নানা দামের ও মানের হোটেল রয়েছে। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী খুঁজে নিলেই চলবে। ছবি: লেখক
16Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা