বিকিকিনি

রেশম পথের বাঁকে বাঁকে 

সিল্ক রুট। পথটি ছিল বাণিজ্যের পীঠস্থান। এখন সেইসব বিকিকিনি বন্ধ। তবু পথের অপার্থিব সৌন্দর্য আজও রয়েছে। আছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ রূপের মহিমা। বর্ণনায় তাপস কাঁড়ার।

এবারের পথ সিল্ক রুট। শিলিগুড়ি থেকে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়া পূর্ব সিকিমের রেশম পথে। যাত্রাপথে প্রথম রাত্রিবাসের ঠিকানা ঋষি খোলা। বাংলা সিকিম সীমানা ভাগ করে তিরতির করে বয়ে চলেছে ঋষি নদী। নদীর উপর বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে সবুজে মোড়া ঋষি খোলার হোম স্টে-তে রাত্রিবাস এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বিকেলের মেঘলা আলোয় বোঝা গেল জায়গাটা দারুণ। পাখিদের স্বর্গরাজ্য। পাথরে নূপুরের শব্দ তুলে কুলকুল বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী। স্রোতে সে পাগলপারা। বাকিটা নিস্তব্ধ। সেই নির্জনতার মাঝে শুধু পাখিদের কলকাকলি। এদিক সেদিক ছড়িয়ে রয়েছে কয়েকটা হোম স্টে। সব মিলিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় আঁকা ছবি।
পরের দিন ঋষি নদী পেরিয়ে ঢুকে পড়ুন সিকিম। পরবর্তী গন্তব্য আরিতার।  রেশম পথের এক ছোট্ট গঞ্জ এই আরিতার। মুখ্য আকর্ষণ লামপোখরি হ্রদ বা আরিতার লেক। লম্বা লম্বা পাইনের সারি ঘিরে রেখেছে হ্রদটিকে। টলটলে জলে সবুজ ও নীলের ছায়া। শান্ত নিরিবিলি আরিতার। হ্রদের জল পবিত্র বলে মনে করে স্থানীয়রা। ইচ্ছাপূরণের জন্য হ্রদের কাছে প্রার্থনা জানায় তারা। হ্রদের স্বচ্ছ  জলে দেখা যায়  মাছদের জলকেলি। পাশেই মনাস্ট্রি। চারপাশে  রঙিন লুংটাগুলো পতপত করে ওড়ে। দেখতে দেখতে  সময় বয়ে চলে।
আরিতার পর্বের পর মানখিম। নেপালের রাই সম্প্রদায়ের বসবাস এই অঞ্চল জুড়ে। মানখিম গ্রাম থেকে মেঘমুক্ত আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে মনে হয় ছোঁয়া যাবে। কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে রাইদের মন্দির। গুটিকয় মানুষের বাস। কয়েকটা হোম স্টে রয়েছে। সুন্দর ভিউ পয়েন্টও। চা নিয়ে ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মুখোমুখি  বসে থাকা যায় যতক্ষণ খুশি। মানখিমে  রাত্রিবাস করলে কিন্তু সূর্যোদয়ের আগে উঠে পড়তে হবে। না হলে সকালের দৃশ্যাবলি মিস! প্রথম দৃশ্যে সূর্যদেব তাঁর  হালকা লালচে আভা কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরে ছোঁয়াবেন। দ্বিতীয় দৃশ্যে শুরু হবে আকাশের হোলিখেলা। গোলাপি থেকে কমলা, সোনালি হবে চারদিক। বাতাসের শীতল স্পর্শ শিহরিত করবে। সে এক অপার্থিব অনূভুতি।
প্রাতঃরাশের পর মনকেমন করলেও মানখিম ছেড়ে রংলি পথ ধরতে হবে। সিল্ক রুটের এন্ট্রির আগে পারমিশন নেওয়ার পালা। জমজমাট রংলিতে কিছুটা সময় কাটিয়ে অনুমতিপত্র নিয়ে লিংথাম হয়ে জুলুকের পথে। চলতে চলতে ক্ষণিকের বিরতি কিউ খোলায়। হুড়মুড় করে নেমে আসা ঝরনার শীতল জলে  সিক্ত হয়ে চলুন লিংথামের পথে। সে পথেও মনাস্ট্রি। তারপর পাহাড়ি পথ ধরে ছোট ছোট জনপদ ফেলে এগনো জুলুকের উদ্দেশে।
পূর্ব সিকিমের প্রায় দশ হাজার  ফুট উচ্চতায় রেশম পথের এক সুন্দর ছোট্ট গ্রাম জুলুক। কালিম্পং থেকে তিব্বতের চুম্বি ভ্যালি পর্যন্ত দীর্ঘ ব্যবসায়িক এই পথ  জুলুক দিয়ে  প্রবাহিত ছিল। ব্যবসায়ীরা জেলেপ লা হয়ে তিব্বতে প্রবেশের আগে এখানে রাত্রিবাস করতেন। রেশম পথ ধরে আজ আর বাণিজ্য হয় না, তবু সেই পথ পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ সমৃদ্ধ জুলুকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণ জিগ-জ্যাগ রাস্তা। পাহাড়ের পর পাহাড় একে অপরের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। যোগসূত্র আঁকাবাঁকা পথ। জুলুকে পাহাড়ের আড়ালে সূর্য মুখ লুকানোর আগে কীরকম  মায়াবী হয়ে ওঠে, তা প্রত্যক্ষ না করলে বোঝা দায়। তারপর ঠান্ডা হাওয়ার নিরন্তর আক্রমণ শুরু হয়। ধীর লয়ে বদলে যায় আকাশের রং। একে একে বেরিয়ে আসে নক্ষত্ররাজি। সারা আকাশ জুড়ে বিন্দু আলোর মায়াজাল। সে সব দেখতে আকাশের স্কেচ খাতায় চোখ মেলে বসে থাকা। হিম ঠান্ডা হলেও।
জুলুক থেকে ১৪ কিমি দূরে থাম্বি ভিউ পয়েন্ট। জুলুক খ্যাত ‘জিগ জ্যাগ’ রাস্তা ধরে ১১,২০০ ফুট উচ্চতায় থাম্বি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পরিবারের সকল শৃঙ্গ দৃশ্যমান। থাম্বি আসার পথে ছোট্ট গ্রাম লুংথুতে দাঁড়াতে পারেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা কোলে করে যেন আঁকড়ে রেখেছে গ্রামটাকে। প্রাচীন এই রেশম পথে হেঁটে যেতে যেতে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠবে মন। এই পথে আরও গিয়ে ঐতিহাসিক টুকলা। ১৯০৩ সালে ব্রিটিশ কর্নেল ফ্রান্সিস ইয়ং হাজব্যান্ড সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে এখান থেকে  তিব্বত আক্রমণ করেন। বহু তিব্বতির মৃত্যু হয় সেই যুদ্ধে। টুকলার স্মৃতিসৌধে খোদিত আছে সে সব নাম। টুকলা থেকে বাঁ দিকে নাথাংয়ের রাস্তা। নাথাং থেকে জেলেপ লা হয়ে তিব্বতের দিকে গিয়েছে পথ। নাথাং আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট। শীতে বরফের চাদরে ঢাকা। নাথাং থেকে পুরনো বাবা মন্দির, কুপুপ লেক, যা এলিফ্যান্ট লেক নামেও পরিচিত, মেমেঞ্চু লেক হয়ে গ্যাংটকের গিয়েছে পথ। গ্যাংটক না গেলে ফিরে আসা যায় জুলুকে।
জুলুক ও নাথাং মিলিটারি বেস। সাঁজোয়া গাড়ির আনাগোনা। তাই পূর্ব সিকিমের এই সব অঞ্চলে যেতে সাধারণ নাগরিকদের অনুমতি লাগে। তার জন্য সিকিমের রংলিতে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে  প্রয়োজনীয় অনুমতির কাগজ তৈরি করে নিতে হয়। পুরো পথে চেকপোস্ট আছে নানা জায়গায়। সর্বত্র দেখাতে হয় পরিচয়পত্র।
কীভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। তারপর গাড়ি নিয়ে ঋষি খোলা, আরিতার, মানখিম, রংলি,  লিংথাম, পদমচেন হয়ে জুলুক। সিকিমের গাড়ি নেওয়ার চেষ্টা করবেন, যাতায়াতে সুবিধে হবে।
কোথায় থাকবেন: এই পথে প্রতিটি জায়গায় হোম স্টে আছে।
প্রয়োজনীয় তথ্য: রেশম পথের অনুমতি নিতে পাসপোর্ট ছবি, সচিত্র পরিচয়পত্র আসল ও ফোটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে।                          
ছবি: লেখক
17Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মের প্রসার ও উপার্জন বৃদ্ধির যোগ। গৃহ পরিবেশে চাপা উত্তেজনা। পেশার প্রসার।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা