অমৃতকথা

দুঃখ

সংসারচক্রে ঘূর্ণ্যমান অগণিত জীবনিবহের, সকলের জীবনই দুঃখভারাক্রান্ত। যাহা চাই না তাহা আসে, যাহা চাই তাহা পাই না। যদি বা কিছু পাই, তাহা আর একটা আদরের বস্তু বলি দিয়া পাই। যখন একটি আকাঙ্ক্ষিত বস্তু পাইতে গিয়া আর একটি আকাঙ্ক্ষিত ধন হারাইতে হয় তখন জীবনের মাঝে দুঃখের উদয় হয়। সত্য রাখিতে গেলে অযোধ্যা ছাড়িতে হয়, রাজাদর্শে অটল রহিতে গেলে পুত্রকে বনবাসে পাঠাইতে হয়। স্বাধীনতা পাইতে গেলে মাতৃভূমি দ্বিখণ্ডিত করিতে হয়। অভিজ্ঞতা অর্জন করিতে গেলে যৌবন চলিয়া যায়। এইরূপ ছোট বড় দুঃখময় ঘটনা আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই অগণিত। যে যত বড় মানুষ, যাহার কর্মের পরিধি যত বড়, তাহার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভূমি তত প্রকাণ্ড, বেদনা তত গভীর নির্মম, দুঃখ তত বেশী। আব্রহ্মস্তম্ব সকলেরই এই দুঃখ। এই দুঃখ এক নাই ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের, আর নাই প্রস্তরখণ্ডের। যাহা পূর্ণ চেতন, আর যাহা পূর্ণ অচেতন, এই দুই প্রান্তমধ্যে যাহারা বর্তমান, তাহাদের সকলেরই দুঃখ আছে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বিষাদযোগে আমরা এই দুঃখই অর্জুনের জীবনের মধ্যে নির্মম মূর্তিতে উপস্থিত দেখিতে পাই। দুইটি আদর্শের সংঘাতে অর্জুন বিষাদিত। একটি আদর্শ আসিয়াছে রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য হইতে, আর একটি আসিয়াছে পারিবারিক প্রীতি হইতে। রাষ্ট্রনীতি বলে, দুর্বৃত্ত আততায়ীকে বধ কর। পারিবারিক নীতি বলে, প্রিয়জনদের রক্তে হস্ত কলুষিত করিও না। দুই বিরোধী নীতির দ্বন্দে অর্জুন বিষাদযুক্ত হইয়া ভাঙিয়া পড়িয়াছেন। এমতাবস্থায় সকলেই ভাঙে। মানবমাত্রেরই দুঃখের উদয় এই আদর্শের সংঘাতে। এই প্রকার অবস্থায় পতিত মানবনিবহের শান্তিলাভের পন্থাই শ্রীগীতায় উপদিষ্ট হইয়াছে। গীতার আঠারটি অধ্যায় যেন আঠারখানা সিঁড়ি। প্রথমটি বিষাদযোগ, শেষটি মোক্ষযোগ। বিষাদিত অর্জুনকে একটির পর একটি সিঁড়িতে ধাপে ধাপে লইয়া যাওয়া হইতেছে। শেষ ধাপে একেবারে মুক্তির রাজ্যে পৌঁছাইয়া দেওয়া। এই মুক্তি শুধু মৃত্যুর পরবর্তী কোন অবস্থা-বিশেষ নহে। সেদিকে গীতার তেমন আকুল দৃষ্টি নাই। জীবন্ত অবস্থাতেই, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যস্থলেই “অসংখ্য বন্ধন মাঝে” দ্বন্দময় বিষাদভূমি হইতে দ্বন্দ্বাতীত শান্তির ভূমিতে উন্নয়নই গীতার মোক্ষ, জীবন্মুক্তিই গীতার মূল লক্ষ্য। শ্রীগীতায় যত কথা বলা হইয়াছে তাহাদের বীজ রহিয়াছে শ্রীভগবানের প্রথম উক্তিটির ভিতর। “অশোচ্যানন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে।” আর পরম রহস্যময় এই গীতা-শাস্ত্রের সকল রহস্যের অর্গল বা কীলক রহিয়াছে—
“সর্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।।”
এই চরম মন্ত্রের মধ্যে। “অশোচ্যানন্বশোচঃ” বলিয়া যিনি মুখ খুলিয়াছেন, “মা শুচঃ” বলিয়া তিনি থামিয়াছেন। উপক্রম ও উপসংহারে এই “শুচ্‌” ধাতুর প্রয়োগাত্মক একবাক্যতা চমৎকার বটে। অর্জুনের কথাগুলি জ্ঞানীর মত, কিন্তু তাঁহার কার্য তদ্বিপরীত। অর্জুন শ্রেয়স্কাম, তাঁহার কাম্যবস্তু শ্রেয়ঃই। “ন চ শ্রেয়োঽনুপশ্যামি” “যচ্ছ্রেয়ঃ স্যান্নিশ্চিতং ব্রূহি তন্মে”—তাঁহার এই সকল কথায় তিনি যে শ্রেয়ঃই অনুসন্ধান করিতেছেন, ইহা সুস্পষ্ট। এই সব কথা জ্ঞানীর মতই। অজ্ঞজন শ্রেয়ঃ চায় না, আপাত-তৃপ্তিকর প্রেয়ই খোঁজে। অর্জুনের বাক্যগুলি তাই প্রাজ্ঞজনোচিত।
মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘গীতা-ধ্যান’ থেকে
16Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

বহু প্রচেষ্টার পর আটকে থাকা কাজের জটিলতা মুক্তি। কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায় বিশেষ উন্নতি। আয় বাড়বে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৭.৭৯ টাকা১১১.৩৩ টাকা
ইউরো৯০.৯৫ টাকা৯৪.১৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা