পক্ষে
কুন্তল চক্রবর্তী, মার্কেটিং ম্যানেজার
‘শুধু একদিন ভালোবাসা মৃত্যু যে তারপর, তাও যদি পাই/আমি তাই চাই/ চাই না বাঁচতে প্রেমহীন হাজার বছর...।’এখন এই বাস্তবতা পেরিয়ে আমরা ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র হুজুগে মেতে উঠেছি। বর্তমান সমাজ প্রেমহীন। ভালোবাসার নির্দিষ্ট দিন হয় না। প্রেম আসতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। ভ্যালেন্টাইন’স ডে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের দিন। সারা বছর অবিক্রিত পণ্য বিক্রির সহজ মাধ্যম। প্রকৃত প্রেমের দিন তো রোজই। ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন ভালো মন আর স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি। সোশ্যাল মিডিয়া ও বিজ্ঞাপন হুজুগকেই প্রেম বলে চালাতে চায়।
দিশা পালনদার, ফিজিওলজি অনার্স, দ্বিতীয় বর্ষ
আধুনিক ভার্চুয়াল যুগে কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে অধিকাংশ ‘প্রেম’ই মুঠোফোনে সমর্পিত। ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র দিন দেখা যাবে প্রেমময় ক্যাপশন সহ ‘হ্যাপি কাপল’-এর ছবি, অথবা লাল গোলাপের ছবি। অথচ সেই কাপল-এর ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি দিলে বোঝা যাবে সম্পর্কটা হোয়াটসঅ্যাপ, বা একদিনের দেখা হওয়াতেই সীমাবদ্ধ। সম্পর্কে ভার্চুয়াল প্রচার বেশি। অথচ বিগত উনিশ বছর ধরে মা-বাপিকে দেখছি। ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে বাপি মায়ের জন্য চকোলেট অথবা লাল গোলাপ আনেনি। কিন্তু ওদের ভালোবাসায় মরচে ধরেনি এতটুকু। গেরস্থালির টুকিটাকির ছোঁয়ায় চিরসবুজ ওদের প্রেম। ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র হুজুগে প্রকৃত প্রেম অন্তরালে লুকিয়ে।
ঋদ্ধি ভট্টাচার্য, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস, তৃতীয় বর্ষ
জেনারেশন জেড-এর অংশ হয়েও মেনে নিচ্ছি, ১৪ ফেব্রুয়ারি মানেই কে কত উপহার পেয়েছে। সঙ্গে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘চকোলেট ডে’, ‘রোজ ডে’ ইত্যাদি। ছাত্রজীবনে প্রেম আসতেই পারে। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন’স ডে এখন যেন অন্যরকম। দু’দিন আগে যে বন্ধু ছিল, সে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেমিক! কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখাতে হবে। এই বস্তুবাদী ভাবনায় হারিয়ে যায় প্রেমের নরম আচ্ছাদন। কার প্রেমিক বেশি উপহার দিল, কত দামি উপহার দিল, তুলনা হয়। শুধুমাত্র দেখাতে হবে বলে কাউকে কিছুদিনের জন্য ‘প্রেমিক বানিয়ে’ ভুলে যাওয়া। এখন হাতে লেখা চিঠি, গোলাপ, হাত ধরে হাঁটা— এর মূল্য নেই।
সৈকত ভড়, ইংরেজি অনার্স, তৃতীয় বর্ষ
কাজের চাপে কোথাও যেন নিজের প্রিয় মানুষটির জন্য একটু সময় বের করে ঘুরতে যাওয়া, কথা বলা, আলাদা করে সময় কাটানো— এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বেশিরভাগ জুটি তাদের সম্পর্কের প্রতিই উদাসীন। একে অপরকে সন্দেহ করছে, একজন ফোন করলে অপরজন বিরক্ত হচ্ছে। তাদের কাছে ভালোবাসার গুরুত্ব আর নেই। ভালোবাসা দিবসে গোলাপ দেওয়া যেন একটা ফর্মালিটি। হুজুগে মেতেই যেন পুরো দিনটা কাটিয়ে দিচ্ছে। আবার সেদিনেরই কোনও ছোটখাট বিষয় নিয়ে পরে অশান্তি তুমুলে উঠছে! ভুলে যাচ্ছে প্রেমের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত আন্তরিক আবেগ ও ভালোবাসার কথা।
বিপক্ষে
অরিজিৎ লস্কর, একাদশ শ্রেণি, আগরপাড়া মহাজাতি বিদ্যাপীঠ
ভ্যালেন্টাইন’স ডে বছরের আর পাঁচটা দিন থেকে সামান্য হলেও আলাদা। সেটাকে হুজুগ বলে মনে করি না। ভালোবাসা একটি পবিত্র সম্পর্ক এবং তা উদযাপনের জন্য বছরের একটা বিশেষ দিন থাকলে ক্ষতি কী! বরং এই দিন থেকেই শপথ নেওয়া উচিত সারা বছর প্রিয় মানুষটাকে আগলে রাখার এবং একসঙ্গে কাটানোর। সুতরাং, ভালোবাসা উদযাপনের দিন হিসেবে দিনটার গুরুত্ব আছেই।
সমৃদ্ধি পাত্র, দ্বাদশ শ্রেণি, কারমেল স্কুল
এই বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য আমি হয়তো অনেকটাই ছোট। তবু বলি সবকিছুর জন্যই তো বিশেষ দিন হয়। যেমন জন্মদিন করি, তেমনই ভালোবাসার দিন উদযাপন করলে ক্ষতি কী? আর প্রেম নেই কে বলেছে? ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চড়া দামে গোলাপ কেনা থেকে শুরু করে দু’জনে দু’জনের জন্য সময় বের করে ঘুরতে যাওয়া— এ কি লোকদেখানো? সততা ও ভালোবাসা অনেকটাই কমে যাচ্ছে। তার মধ্যে একটা দিন কেউ যদি প্রিয় মানুষের সঙ্গে কাটাতে চায় বিশেষভাবে, তাহলে কি সেটা হুজুগ? বরং এত ভাবনাচিন্তা মানুষ তখনই করে, যখন সেটা তার মন থেকে করতে ভালো লাগে।
অনিমেষ মণ্ডল, বর্ধমান রাজ কলেজ, বাংলা দ্বিতীয় বর্ষ
ভ্যালেন্টাইন’স ডে ভালোবাসার দিন। ভালোবাসার মানুষগুলো এই দিনটাকে উদযাপন করে তাদের মতো করে। প্রেমের টানেই তারা ছুটে আসে প্রিয় বা প্রিয়তমার কাছে। প্রেম আছে বলেই তারা ভ্যালেন্টাইন। তা ছাড়া ভ্যালেন্টাইন’স ডে যে কোনও কাছের মানুষদের নিয়েই উদযাপন করা যায়। এর মধ্যে খারাপ কিছু দেখি না।
দীপা দে, গৃহবধূ
শুধু হুজুগ আছে, প্রেম নেই— এটা ভুল ধারণা। ষাট, সত্তর, আশি এমনকী নব্বইয়ের দশকেও প্রচলিত কথা ছিল, প্রেম নাকি হুজুগ। নতুন প্রজন্মের ভালোবাসা প্রকাশের ধরনে নতুনত্ব তো থাকবেই। একেই যুগ-যুগ ধরে লোকে ভেবেছে ‘হুজুগ’। এই হুজুগের কারণেই অনেক গতিহীন প্রেম ফিরতে পারে মূল-স্রোতে। একে স্বাভাবিক চোখেই দেখা উচিত।