বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
প্রথমত, যাঁরা কষ্টের উপার্জনের খানিকটা জমাতে চান ভবিষ্যতের জন্য, তাঁরা সোনা কিনুন। টাকা জমানো বা সম্পত্তি বাড়ানোর বেশ কিছু উপকরণ থাকে। তার মধ্যে যেমন আছে সরকারি ফিক্সড ডিপোজিট, বিমা, শেয়ার বাজার বা মিউচ্যুয়াল ফান্ড, তেমনই আছে সোনা। ব্যক্তিগত বিনিয়োগের সাধারণ নিয়ম হল, তা এক জায়গায় নয়, ছড়িয়ে রাখতে হয় নানান ক্ষেত্রে। ঝুঁকির পরিমাণ কমানো বা বলা ভালো ব্যালান্স করার জন্যই তা করতে হয়। সেই কারণেই মোট জমা টাকার একটি অংশ সোনায় বিনিয়োগ বুদ্ধিমানের কাজ। সাধারণত শেয়ারবাজারের উল্টোদিকে হাঁটে সোনার দর। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরের অভিজ্ঞতা তারই জ্যান্ত প্রমাণ। চীন ও আমেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ চরমে ওঠায় যখন শেয়ার বাজার টালমাটাল ছিল, তখন সোনার দাম আকাশ ছোঁয়। এর অর্থ, যদি শেয়ারবাজারে কোনও ক্ষতির মুখে পড়েন সাধারণ বিনিয়োগকারী, তাহলে সোনার দাম তাতে খানিকটা মলম দেয়।
দ্বিতীয়ত, অনেকেই ছেলে-মেয়ের বিয়ের জন্য বহু বছর ধরে একটু একটু করে সোনা কেনেন। এটি অত্যন্ত বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ ইতিহাস বলছে, যে কোনও কারেন্সি, তা সে টাকা হোক, বা ইউরো বা ডলার— তার ক্ষয় হয়। অর্থাৎ আজ এক টাকায় যা কিনছি, আগামী বছর এক টাকায় তার চেয়ে কম জিনিস পাব। কারেন্সি বা মুদ্রার সেই ক্ষয় সোনার মূল্যের ক্ষয়ের চেয়ে বেশি। তাই ধীরে ধীরে সময় নিয়ে সোনা জমালে, তা মূল্যবৃদ্ধির আঁচ গায়ে লাগতে দেয় না।
তৃতীয়ত, যদি বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে লগ্নি করেন এবং যদি তাঁর আচমকা টাকার দরকার হয়, তাহলে তিনি যখন খুশি শেয়ার বেচতে পারেন। মুশকিল হল, যেহেতু শেয়ার লগ্নিতে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, তাই সবসময় ভালো দাম পাওয়া যাবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। সোনায় বিনিয়োগ করলে, তা যখন তখন বিক্রি করা যায়। দাম কম পেলেও বড় ঝুঁকি এড়ানো যায়। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাভবানও হওয়া যায়। সরকারি ফিক্সড ডিপোজিট বা বিমায় বিনিয়োগ করলে নির্দিষ্ট বছর ধরে তা ধরে রাখার বাধ্যবাধকতা নেই সোনায়।
চতুর্থত, সোনায় লগ্নি হল সবচেয়ে নিরাপদ লগ্নি। একটু বুঝিয়ে বলা যাক। সোনা এখন সবচেয়ে বেশি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গোটা বিশ্বে গৃহীত। যদি কোনও দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, যদি সেদেশের নিজস্ব মুদ্রার দর ক্রমশ পড়তে শুরু করে, তাহলেও সোনা থেকে রিটার্ন পেতে পারেন মানুষ। কারণ সোনা গোটা বিশ্বে গ্রহণ করা হয়। আবার অনেকেই রিয়েল এস্টেট বা আবাসনে বিনিয়োগ করেন। এক্ষেত্রে যদি অর্থনীতিতে সমস্যা হয়, তাহলে রিয়েল এস্টেট ব্যবসাও মুখ থুবড়ে পড়ে। যদি মানুষের হাতে টাকা না থাকে, যদি ফ্ল্যাট কেউ কিনতেই না চায়, তাহলে তা বিক্রি করা হবে কাকে? তার দামই বা কে দেবে? এক্ষেত্রে সোনা বিক্রির করার সুযোগ খোলা থাকে সবসময়।
এখন প্রশ্ন হল, এত চড়া দামেও কি সোনা কেনা বুদ্ধিমানের কাজ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাঁ, সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, প্রথমত, সোনার দাম যদি চড়া থাকে, তাহলে ক্রেতাদের মধ্যে এই আস্থা জন্মাবে, তিনি যে অ্যাসেট বা সম্পদটি কিনছেন, তার বাজারদর আছে। সেটি হেলাফেলার নয়। অর্থাৎ সেটি অসময়ে তাঁর কাজে লাগতে পারে। আজ যা দামি, তা আগামী দিনে আরও দামি হবে না, এ কথা কে বলতে পারে। দ্বিতীয় কারণটি হল, সোনার দাম যে রাতারাতি কমে যাবে, এমন কথা হলফ করে বলতে পারছেন না কেউ। অর্থাৎ এখন দাম বেশি বলে কিনব না, পরে কমলে কিনব, এমন চিন্তাভাবনার খুব একটা জায়গা নেই। কারণ, সোনার দাম বৃদ্ধির মূল কারণ দু’টি।
প্রথমত, আমেরিকা এবং চীনের বাণিজ্যিক যুদ্ধের পাশাপাশি আরও হরেক দেশে নানা আর্থ-রাজনৈতিক ডামাডোল চলছে। তার জেরে শেয়ার বাজারে জোর দোলাচল। মানুষ চাইছেন নিরাপদ জায়গায় বিনিয়োগ করতে। তাই সোনার দাম চড়া। অন্যদিকে ভারত সরকার সোনার উপর আমদানি শুল্কে লাগাম টানার বদলে, তা আরও বাড়িয়ে চলেছে। তার দাম শেষ পর্যন্ত চোকাতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাকেই। এই দু’টি ক্ষেত্রই রাতারাতি বদলে যাবে এবং সোনার দাম হু হু করে নীচের দিকে নামবে, এটা বড় কষ্টকল্পনা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সেইসব কথা আপাতত সরিয়ে সোনা কিনলে ক্রেতা ঠকবেন না, এইটুকু আশ্বাস দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।