বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এবার অন্য একটা নমুনা দেওয়া যাক। এই প্রার্থীটি রাজ্যের এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করে সবে ঢুকেছে এক বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়। প্রতিবেদকের কাছে ফোন এল প্রার্থীর কাকার (প্রতিবেদকের পরিচিত)। প্রার্থীটির কাকার আবদার ভাইপোর সঙ্গে যারা কাজে ঢুকেছিল, তাদের অনেকেই প্রজেক্ট নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে। ভাইপোরও খুব বিদেশ যাওয়ার শখ। একটু ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিককে বলে ব্যবস্থাও হল মার্কিন মুলুকে কিছুদিন কাটিয়ে আসার আকাঙ্ক্ষা। তার বছর দুয়েক পরে আবার কাকার ফোন এই প্রতিবেদককে। একটা উপকার করে দিতে হবে। কী উপকার? কাকার উত্তর এল আমার ভাগ্নেও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ওই বহুজাতিক তথ্য সংস্থাতেই চাকরি পেয়েছে। আর, ওকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তার মন মোটেই টিঁকছে না। কোনওক্রমে যেভাবেই হোক ভাগ্নেকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
উপরের ঘটনাগুলিকে এবার যদি পোস্টমর্টেম করা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে, চাকরি যখন নেই বা মরিয়া চেষ্টা চালিয়েও চাকরি পাচ্ছে না, তখন প্রার্থীর মানসিকতা একরকম। আবার যেই চাকরি পেয়ে গেল তখনই মানসিকতার দ্রুত পরিবর্তন। চাকরি না থাকলে এক রূপ আর চাকরি হাতের মুঠোয় থাকলে এক রূপ। মানসিকতার এই পরিবর্তন প্রমাণ করে চাকরির প্রতি বা সংস্থার প্রতি ভালোবাসা বা আকর্ষণ মোটেই নেই। মাস গেলে মাইনেটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে কিনা সেটাই উদ্দেশ্য। এটা ঠিকই যে অর্থ উপার্জনের জন্যই তো চাকরি করা, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার হোক বা রাজ্য সরকার বা কোনও কর্পোরেট সংস্থা কাজের পরিবর্তে মাইনে দিচ্ছে। এখানে নিজের ইচ্ছে-অনিচ্ছেকে জলাঞ্জলি দিতেই হবে। বিসর্জন দিতে হবে নিজের সুবিধে-অসুবিধেকে। বিশেষ করে বেসরকারি সংস্থাকে কর্তৃপক্ষের নেকনজরে থাকার জন্য কাজের প্রতি ‘প্যাশন’ থাকাটা তো আরও জরুরি। আরেকটা বিষয় মনে রাখা বিশেষভাবে দরকার আজকের প্রতিযোগিতার বাজারে যে আপনার মতো পারদর্শী, কর্মক্ষম একটি সংস্থাতে হয়তো আরও সাতজন আছে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ সবাইকে ছেড়ে আপনাকে বাড়তি দায়িত্ব বা পদোন্নতি কেন দেবে? এখানেই কাজ করে প্যাশন অর্থাৎ কাজে নিজেকে সঁপে দেওয়ার ক্ষমতা কার বেশি। যারা চাকরি প্রার্থী বা এখন চাকুরিরত তারা নিশ্চয় বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজ, ছাঁটাইয়ের বহর সম্পর্কে নিঃসন্দেহে ওয়াকিবহাল। যে কোনও মুহূর্তেই ছাঁটাইয়ের খাঁড়াটা নেমে আসতে পারে ঘাড়ে। সেটা সবসময় মনে রাখতে হবে।
তাই চাকরি এখন যাদের হাতের মুঠোয় তারা নিশ্চিন্ত হয়ে, গাছাড়া দিয়ে, নিজের শর্তে কাজ করার কথা ভুলে যান। প্রত্যেকটি পদে প্রমাণ করতে হবে আমিই সেরা। যে কাজের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে, আমার চেয়ে ভালোভাবে সেই কাজ কেউ উতরোতে পারবে না।