উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
আরইআইটি কী?
এটি এমন একটি সংস্থা যাদের মালিকানায় বাণিজ্যিক বা বসবাসের জন্য আবাসন রয়েছে, অথবা তারা এই ক্ষেত্রে অর্থলগ্নি করেছে। মূলত অফিস স্পেস বা বসবাসের জন্য জায়গা ভাড়া দিয়েই এই সংস্থাগুলি আয় করে। সেক্ষেত্রে আরইআইটি-তে বিনিয়োগ করে কেউ সরাসরি কোনও আবাসনের মালিক না হয়েও সেখান থেকে ভাড়া বাবদ আয় করতে পারেন। বিদেশে এই ধরনের সংস্থা এবং শেয়ার বাজারে তাদের ইস্যু জনপ্রিয় হলেও, ভারতে গত মার্চ মাসের ইস্যুটিই প্রথম। সেবি ২০১৪ সালে প্রথম আরইআইটি ইস্যুর বিধি এবং নিয়মকানুন ঠিক করলেও, এর প্রায় ৩ বছর পরে, ২০১৭ সালে বেঙ্গালুরুর সংস্থাটি এর জন্য সেবিতে রেজিস্টার করে এবং ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তারা আইপিও-র জন্য আবেদন করে। উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রথমে সেবি ঠিক করেছিল, আরইআইটি-তে ন্যূনতম বিনিয়োগ করতে হবে ২ লক্ষ টাকা। এরপরে এই বছরের শুরুতে তারা এই নিয়মের পুনর্বিবেচনায় ঠিক করে, ন্যূনতম বিনিয়োগ ৫০ হাজার টাকা হলেই চলবে। কিন্তু এই নতুন নিয়ম চালুর আগেই বেঙ্গালুরুর সংস্থাটি প্রথম আরইআইটি-র জন্য আবেদন করেছিল বলে তারা নতুন নিয়মের সুযোগ নিতে পারেনি। ফলে তাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিনিয়োগের পরিমাণ ২ লক্ষ টাকাই রয়েছে।
অনেকেই বলে থাকেন, আবাসন বা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা বেশ লাভজনক। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, দামে পোষাচ্ছে না। সাধারণ ছাপোষা মানুষের কথা ছেড়েই দিলাম, অনেক ডাকসাইেটে ধনী ব্যক্তির পক্ষেও কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই বা বেঙ্গালুরুর মতো বড় শহরের ‘প্রাইম লোকেশন’-এ কোনও অফিস স্পেস কেনা এবং সেখান থেকে ভাড়া বাবদ আয় করা সম্ভব হয় না। প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগের পরিমাণটা খুবই বেশি হয়ে যায়। এছাড়া আবাসনে বিনিয়োগ খুব একটা ‘লিক্যুইড’-ও নয়। হঠাৎ টাকার দরকার হলে আপনি চাইলেই খুব সহজে কেনা আবাসন বিক্রি করতে পারবেন না।
তার জন্য ক্রেতা খোঁজা থেকে রেজিস্ট্রি করা পর্যন্ত একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া লাগে। আরইআইটি-র ক্ষেত্রে কিন্তু এই অসুবিধাগুলি থাকছে না। এখানে আপনি মাত্র ৫০ হাজার টাকা ঢেলেও ভাড়া বাবদ আয় করতে পারবেন। আবার ঘরের টাকা ঘরে ফেরানোর দরকার পড়লে দ্রুত শেয়ার বেচেও দিতে পারবেন। দরকার শুধু একটি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট। এছাড়া, দেখা গিয়েছে, বাণিজ্যিক আবাসন থেকে বছরে প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ সুদ মেলে। এখানে ৮ শতাংশ তো বটেই, বিশেষজ্ঞদের মত, অনেক ক্ষেত্রে আরও বেশি, প্রায় ১২ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া সম্ভব। আরইআইটি-তে বিনিয়োগ একটু দীর্ঘমেয়াদি বলেই ধরতে হবে। তবে শেয়ার বাজার অথবা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা দেখা যায়, তার তুলনায় অনিশ্চয়তা এখানে কম হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের অনুমান।
আরইআইটি-তে কর ছাড়ের সুবিধা
আগেই বলেছি, আগামী দিনে বাজারে আসতে চলেছে আরও বেশ কিছু এমন ইস্যু। সেবির নিয়ম হল, আরইআইটি ইস্যু করা সংস্থাটির মোট ‘ক্যাশ ফ্লো’, অর্থাৎ ভাড়া, সুদ বা অন্য ক্ষেত্র থেকে তারা বছরে যা আয় করবে তার ৯০ শতাংশ ডিভিডেন্ড বাবদ তাদের শেয়ার হোল্ডারদের হাতে তুলে দিতে হবে। আর এই ডিভিডেন্ড বাবদ আয় হল করমুক্ত।
তবে আরইআইটি থেকে ডিভিডেন্ড ছাড়াও ভাড়া এবং সুদ বাবদও আয় করা সম্ভব। কিন্তু এই দুটি ক্ষেত্রে আয়ের উপর কর দিতে হবে।
আরইআইটি-তে ঝুঁকি
এই ক্ষেত্রে মার্চ মাসের ইস্যুটিই এদেশে প্রথম। ফলে আরইআইটি-তে বিনিয়োগে ঝুঁকি কী কী, তার তুলনামূলক বিচারের জন্য যথেষ্ট তথ্য আমাদের হাতে নেই। তবে প্রথম দাঁত উঠলে শিশুদের মাড়িতে যেমন ব্যথা হয়, তেমন কিছু ‘টিথিং প্রবলেম’ হবে বলে আশা করাই যায়। এছাড়া বেশ কিছু সাধারণ সমস্যার কথাও বলা যেতে পারে। মনে রাখা দরকার, ভারতে আবাসন ক্ষেত্র কিন্তু মাঝেমধ্যেই মামলা-মোকদ্দমার ধাক্কায় খেই হারিয়ে ফেলে। এছাড়া ‘রেট অফ অকুপেন্সি’ বা কোনও বাণিজ্যিক আবাসনে এই মুহূর্তে ভাড়াটে কত রয়েছেন, সেটা সব সময়েই মাথাব্যথার বিষয়। হয়তো এখন ভাড়াটের সংখ্যা ভালোই, কিন্তু নতুন, এবং আরও ভালো আবাসন তৈরি হলে সেই সংখ্যা ঝপ করে কমে যেতে পারে। ফলে তখন আরইআইটি ইস্যুকারী সংস্থার ভাড়া বাবদ আয় মার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।