কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
রামশাই কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের মৎস্যবিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল ঘোষ বলেন, উত্তরের নদীগুলি থেকে নদীয়ালি মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। এর জন্য আমরা নিজেরাই অনেকটা দায়ী। মৎস্যচাষীদের মধ্যে অনেকেই নদী থেকে মাছ ধরতে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করেন বা বিষ প্রয়োগ করেন। এর ফলে নদীতে বা জলাশয়ে মাছের প্রজনন হ্রাস পায়। বিষ প্রয়োগে অনেক সময় নদীতে মাছের মড়ক দেখা দিতে পারে। নদীতে বিষ প্রয়োগ করলে ছোট-বড় মাছ মরে যায়। আবার ডিমযুক্ত মাছগুলিরও মৃত্যু হয়। অপরদিকে, একটু লাভের আশায় নদী থেকে ডিমওয়ালা মাছ ধরে ফেলেন অনেক মৎস্যজীবী। এর ফলে মাছের ঘাটতি দেখা দেয় নদীতে। এছাড়া কৃষিজমিতে যে হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়, সেসব কোনওভাবে নদীতে মিশে গেলে মাছের প্রজনন বাঁধা পায়। অনেক সময়ে জমিতে কীটনাশক দেওয়ার পরে সেই কীটনাশকের প্লাস্টিক বা পাত্র নদীতে ধোয়া হয়। এর ফলেও মাছের বংশবিস্তার ব্যাহত হয়। প্রায়ই থার্মোকল, প্লাস্টিক সহ নানারকমের আবর্জনা বিভিন্ন নদীতে ফেলা হয়। সেসব থেকেও দূষণ ছড়ায় এবং মাছের মৃত্যু ঘটে। এখন তাই নদীতে জেলেরা জাল ফেললেও মাছের দেখা মেলে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন দিন তিস্তা, জলঢাকা সহ ময়নাগুড়ির জর্দা, খুকশিয়া প্রভৃতি নদী থেকে নদীয়ালি মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় এই সমস্ত নদী থেকে মৎস্যচাষিরা মাছ ধরে সেই মাছ ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, জলপাইগুড়ি সহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরো বাজারে বিক্রয় করতেন। কিন্তু সেই মৎস্যজীবীরাই বলছেন, আগের তুলনায় বর্তমানে নদীয়ালি মাছের দেখা মেলাই ভার।
ময়নাগুড়ি পুরাতন বাজারের মৎস্য বিক্রেতারা বলেন, আগে বর্ষাকালে নদী থেকে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। নদীয়ালি মাছের বাজার মূল্য একটু বেশি হলেও ক্রেতারা কিন্তু সেই মাছ কেনেন। কিন্তু দিন দিন নদীয়ালি মাছের জোগান কমে যাচ্ছে। এর ফলে নদী থেকে মাছ ধরে যাঁদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়, তাঁরা আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছেন। খাদ্যরসিক বাঙালিরও থালায় আর উঠছে না নদীয়ালি মাছ।
ময়নাগুড়ির একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সম্পাদক নন্দুকুমার রায় বলেন, এই নদীয়ালি মাছ যে নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য তো আমরাই দায়ী। সামান্য লাভের আশায় ছোট মাছ তুলে ফেলা হচ্ছে। ডিমযুক্ত মাছ ধরা হচ্ছে। চুপিসারে নদীতে মশারি জাল নামানো হচ্ছে। পাশাপাশি জলের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে মাছ ধরা এবং বিষপ্রয়োগের মতো ঘটনা তো আছেই। জলে বিষ দিয়ে মাছ মারলে সেই মাছের মধ্যেও বিষ ঢুকে যেতে পারে। সেই মাছ খাোয়া কিন্তু বিপজ্জনক। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীগুলিতে নজরদারি চালানো উচিত। না হলে এমনটা চলতে থাকলে অচিরেই একেবারে লুপ্ত হয়ে যাবে নদীয়ালি মাছ।