পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
কৃষি দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, ব্ল্যাক রাইস ভাঙানোর জন্য প্রতিটি ব্লকে এক লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা কৃষকদের দিতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গাতেই বেনিফিশিয়ারি পাওয়া না যাওয়ায় এখনও পর্যন্ত ব্ল্যাক রাইস ভাঙানোর জন্য মেশিন বসানো যায়নি। তবে চেষ্টা চলছে। এনিয়ে কৃষকদের বক্তব্য, স্থির বাজার না থাকায় তাঁরা ব্ল্যাক রাইসের মেশিন বসানোর জন্য ঝুঁকি নিতে পারছেন না। তাছাড়া এখনও পর্যন্ত এ রাজ্য থেকে বিদেশে কালো চাল রপ্তানির ব্যাপারে এক্সপোর্টাররা সেভাবে এগিয়ে আসেননি। সরকারি উদ্যোগেও ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ চাষিদের একাংশের।
নদীয়ার ফুলিয়ায় অবস্থিত কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহ কৃষি অধিকর্তা ড. অনুপম পাল রাজ্যে ব্ল্যাক রাইসের প্রসার ঘটানোর কাজে যুক্ত উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি অবশ্য বলেছেন, ব্ল্যাক রাইস ভাঙানোর জন্য তাঁদের তরফে ইতিমধ্যে গড়বেতা, পুরুলিয়া, শিলিগুড়ির খড়িবাড়ি, রানাঘাটের মতো বেশকিছু জায়গায় মেশিন দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া চাষিদের জমিতে উৎপাদিত ব্ল্যাক রাইস রপ্তানি করার জন্য এক্সপোর্টারদের তাঁরা সবসময়ই বলে থাকেন। ভিনরাজ্যে ব্ল্যাক রাইস রপ্তানি শুরুও হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ব্ল্যাক রাইস চাষ করে আসছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর ব্লকের চাষি নিতাই দাস। তিনি বলেন, প্রথম বছর ১০০ টাকা কেজি দরে ব্ল্যাক রাইসের বীজধান বিক্রি করেছিলাম। চালও বিক্রি হয়েছিল ১০০ টাকা কেজি দরে। ব্ল্যাক রাইস যে উপকারি চাল তা এলাকার কৃষকদের বোঝানোয় অনেকেই এই ধান চাষে এগিয়ে এসেছিলেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে তাঁরা দেখেছিলেন, বিদেশেও এই চালের দারুণ চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও রপ্তানিকারক তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। সরকারি তরফেও তাঁদের জমিতে উৎপাদিত কালো চাল বিক্রির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের অনেকেই কালো চাল চাষে পিছিয়ে যাচ্ছেন। নিতাইবাবু বলেন, তাঁদের এলাকায় ব্ল্যাক রাইস ভাঙানোর মতো কোনও মিল নেই। ফলে ওড়িশার জলেশ্বরে যেতে হয় ধান ভাঙাতে। সেখানেও ব্ল্যাক রাইস ভাঙানোর পুরোপুরি উপযুক্ত মিল নেই। কোনওমতে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এভাবে কতদিন সম্ভব? সব কৃষকের পক্ষে পরিবহণ খরচ বহন করে ওড়িশায় ধান ভাঙাতে যাওয়া সম্ভব নয়। নিতাইবাবু গত বছর ১২ একর জমিতে ব্ল্যাক রাইস চাষ করেছিলেন। একরে ১২ কুইন্টাল ফলন পেয়েছিলেন। তাঁর কাছে ১৫ টন ব্ল্যাক রাইস মজুত ছিল। বাজার না পাওয়ায় পড়ে থেকে চাল নষ্ট হচ্ছে। অনেক চাল কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। আষাঢ় মাসে ধান বুনতে হবে। কিন্তু বাজারের যা অবস্থা, এবার আর বেশি জমিতে ব্ল্যাক রাইস চাষ করবেন না বলে ঠিক করেছেন। খুব বেশি হলে এবছর ২ একর জমিতে কালো চাল চাষ করতে পারেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের দক্ষিণ কলাপুঞ্জ গ্রামের চাষি মিলন ওঝা জানিয়েছেন, ব্ল্যাক রাইস নিয়ে তিনি এলাকায় প্রচার করেন। নিজে চাষ করার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে এর বীজধান সংগ্রহ করে গ্রামের কৃষকদের দিতে থাকেন। কৃষি মেলায় চালের নমুনা নিয়ে গিয়ে কালো চালের উপকারিতা সম্পর্কে সবাইকে বোঝাতে থাকেন। এর ফলে তাঁর গ্রামে অনেক কৃষক এই ধান চাষে এগিয়ে আসেন। ব্ল্যাক রাইস চাষের এলাকা বাড়তে বাড়তে প্রায় ৭৫ একর হয়ে গিয়েছিল। গত বছরও তিনি ২ বিঘা জমিতে ব্ল্যাক রাইস চাষ করেছিলেন।
সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে বিঘায় আড়াই থেকে ৩ কুইন্টাল ফলন পান। কিন্তু ধান ভাঙানো নিয়ে সমস্যায় পড়েন তিনি। তাঁর গ্রামের অন্য কৃষকদের মতো তাঁকেও প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে ওড়িশার জলেশ্বরে গিয়ে ব্ল্যাক রাইস ভাঙিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে।
কিন্তু ধান ভাঙিয়ে চাল করার পর তা বিক্রি করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে তাঁকে। ১০০ টাকা কেজি দরেও ব্ল্যাক রাইস বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে ঘরে পড়ে থেকে প্রচুর কালো চাল নষ্ট হচ্ছে। মিলনবাবুর দাবি, ব্ল্যাক রাইসের উপকারিতা নিয়ে এখনও বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। যাঁরা চালটির গুণ সম্পর্কে জানেন, তাঁরা মাঝেমধ্যে অল্পকিছু কিনছেন। ফলে ঠিকমতো বাজার পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই কৃষকরা এই ধান চাষে তেমন আর উৎসাহিত হচ্ছেন না।
কৃষি দপ্তরের পিংলা ব্লকের টেকনোলজি ম্যানেজার (বিটিএম) অরুণাভ সামন্ত বলেছেন, ব্ল্যাক রাইসের বাজারের অভাব আছে একথা ঠিক। তার সঙ্গে ধান ভাঙানোরও সমস্যা রয়েছে। মূলত একারণেই এবছর কালো চাল চাষের এলাকা অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে হচ্ছে। কৃষকদের অনেকে আবার জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। ফলে চালের মধ্যে বিষক্রিয়া থেকে যাওয়ায় বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ব্ল্যাক রাইসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এই চাল লোহা, জিঙ্ক ও ফাইবার সমৃদ্ধ। এবং কম শর্করাযুক্ত। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৪০-৪২। ফলে মধুমেহ রোগীরা অনায়াসেই এই চালের ভাত খেতে পারেন। ব্ল্যাক রাইস তার গুণের কারণে মানবদেহ থেকে টক্সিন নির্গমণে যেমন সহায়তা করে, তেমনই হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে, ওজন কমাতেও বিশেষ কার্যকরী।