নিজস্ব প্রতিনিধি: গ্রামে স্বনির্ভরতার দিশা দেখাতে পারে ব্রয়লার মুরগি পালন। এই মুরগির প্রচলিত জাতগুলি হল, চাব্রো, বি-৭৭, ভেনকব, হুবার্ড, গিরিরাজা, ক্যাসিলা, ক্যাবিব্রো-৯১ প্রভৃতি। ব্রয়লার মুরগি প্রতিপালনে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এই মুরগির ঘর উঁচু, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় করতে হবে। ঘরে যেন আলো-বাতাস ঢোকে। মুরগির ঘরের মুখ পূর্বদিক বা দক্ষিণ দিকে হলে ভালো। সহজেই আলো-বাতাস ঢুকতে পারবে। ব্রয়লার মুরগি আংশিক ছেড়ে বা পুরোপুরি আটকে রেখে পালন করা যায়। আবদ্ধ পদ্ধতিতে ব্রয়লার মুরগিকে খাঁচায় বা গাদায় পালন করা যেতে পারে। তবে খাঁচার চেয়ে গাদায় পালন করা ভালো। মুরগির ঘরের মেঝেয় খড়, কাঠের গুঁড়ো, ধানের তুষ দিয়ে ৩-৫ ইঞ্চি উঁচু করে বিছানা করে দিতে হবে। ঘরের উচ্চতা হবে ৬-৭ ফুটষ মেঝে থেকে দেড় ফুট উঁচু পর্যন্ত বাঁশ বা কাঠের দেওয়াল দিতে হবে। তার পর ৫ ফুট উঁচু পর্যন্ত তারজালি দিতে হবে। অনেকে বাঁশ বা কাঠের পরিবর্তে ইটের দেওয়াল দিয়ে থাকেন। খড়, টালি বা অ্যাসবেসটস দিয়ে ঘরের ছাদ করতে হবে। নির্দিষ্ট স্থানে খাবার ও জলের পাত্র রাখতে হবে। গাদা শুকনো জীবাণুমুক্ত থাকা বাঞ্ছনীয়। ঘরের মেঝে শুকনো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘরের প্রস্থ উচ্চতার দেড়গুণ হলে ভালো হয়। প্রতি ১০ বর্গফুটে ১.৫ বর্গফুট খোলা জানালা রাখা উচিত। প্রতিটি মুরগির জন্য ১-৩ বর্গফুট জায়গা রাখতে হবে। মুরগির ঘরে ডিমপাড়ার বাক্স, ধুলো স্নানের পাত্র, ঝিনুকের খোলা বা ক্যালশিয়াম দেওয়ার পাত্র রাখতে হবে। ব্রয়লার মুরগি পালনে ৭০ ভাগ খরচ হয়ে থাকে খাবারের জন্য। ম্যাস বা গুঁড়ো জাতীয় খাবার, গুটি বা প্যালেট জাতীয় খাবার, দানা জাতীয় খাবার দেওয়া যেতে পারে। বয়স অনুসারে খাবার দেওয়া উচিত। ১দিন থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত দিয়ে ব্রয়লার স্টার্টার। ৫-৭ সপ্তাহ পর্যন্ত দিতে হবে ফিনিশার। মুরগি পিছু ১.৮ কেজি স্টার্টার ও ২ কেজি ফিনিশার খাবারের প্রয়োজন হয়। ব্রয়লার দ্রুত বাড়ে। সেকারণে এদের খাবারে ২০-২২ শতাংশ প্রোটিন, ৩২০০ কিলোক্যালরি শক্তিযুক্ত খাবার প্রয়োজন। খামারে প্রথম ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা আলো জ্বেলে রাখতে হবে। রাতে জিরো পাওয়ারের বাল্ব জ্বেলে রাখলে ভালো। প্রথমদিকে ১ঘণ্টা আলো জ্বেলে রেখে, ৩ ঘণ্টা ঘর অন্ধকার রাখলে ব্রয়লারের বৃদ্ধি ভালো হয়। ব্রয়লার পালনে কৃত্রিমভাবে ইনকিউবেটর যন্ত্র দ্বারা ডিম ফোটানো হয়। এই যন্ত্রে ২১ দিনে ৯৯.৫ ফারেনহাইট উষ্ণতায় ৬০-৭০ শতাংশ আর্দ্রতায় ৫০-৫৫ গ্রাম ওজনের ডিম ফোটানোর জন্য আদর্শ। রোগব্যাধি ব্রয়লার পালনের অন্যতম অন্তরায়। ব্রয়লার মুরগির একটি অন্যতম রোগ রানিখেত। এটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। সব বয়সের মুরগির ক্ষেত্রে এই রোগ হতে পারে।
এই রোগে মৃত্যুর হার ১০০ শতাংশ। ডায়ারিয়া, ক্ষুধামান্দ্য, শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে জল পড়া, খোঁড়ানো, স্নায়বিক বিকার অন্যতম লক্ষণ। নির্দিষ্ট সময়ে টিকা দিয়ে এই রোগ প্রতিহত করা যায়। ম্যারেক্স মুরগির আরও একটি ভয়ানক রোগ। এটিও ভাইরাস ঘটিত রোগ।