বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
ঝিনুক বা দুধ মাশরুম বিক্রি করে ভালো টাকা লাভ ঘরে তুলছেন কৃষক থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যারা। মাশরুম চাষের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মাশরুম উৎপাদন করে ৫০ শতাংশ লাভ ঘরে তোলা যায়। মুর্শিদাবাদের সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনে মাশরুম ট্রেনিং সেন্টার সহ আরও কয়েকটি জায়গায় স্পন উৎপাদন করা হচ্ছে। মোটামুটি চারশো গ্রাম স্পন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। ওই পরিমাণ স্পন দিয়ে মাশরুমের দুটি বেড তৈরি করা যায়। এক মাসের মধ্যে একটি বেড থেকে অন্তত দেড় কেজি মাশরুম মিলবে। খড় ও স্পন দিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের মধ্যে মাশরুমের বেড বানানো যায়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার শস্য শ্যামলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের শস্য সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ ড. অভিজিৎ ঘোষাল জানিয়েছেন, বর্তমানে মাশরুম চাষে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, তার দু’টি নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এক, মাশরুম চাষে পুঁজি খুবই কম লাগে। সিলিন্ডার প্রতি খরচ হয় ২২-২৪ টাকা। আর আয় হয় কমপক্ষে ১১০-১২০ টাকা। দুই, মাশরুম বাজারজাত করতে সময় লাগে মাত্র এক থেকে দেড় মাস। মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতিও অত্যন্ত সহজ। বর্তমানে যেকোনও কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র বা ব্লক সহকারি কৃষি অধিকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে মাশরুম উৎপাদন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আগ্রহীরা। মাশরুম চাষে সাধারণত তেমন কোনও সমস্যা দেখা যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে সবুজ ছত্রাকের আস্তরণ ও কালো ছত্রাকের আস্তরণ পড়ে। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বাদামি রস ঝরা রোগও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ ফটকিরি জল বিশেষ উপকারি। বর্তমানে মাশরুম চাষ মহিলাদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছে। ছোট ছোট উদ্যোগী গোষ্ঠী গঠন করে এগিয়ে আসছে যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ প্রয়োজনীয়। বর্তমানে মাশরুমের স্পন বা বীজের একটু সমস্যা রয়েছে তবে গত দু-তিন বছরের মধ্যে যেভাবে মাশরুম চাষে উল্লেখযোগ্য সাড়া পড়েছে তাতে মাশরুমের বীজের চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। ফলে মাশরুমের স্পন উৎপাদনের ব্যবসায়িক ভিত্তিতে অনেক যুবক, প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে আসছে। মাশরুমের স্পন পেতে বিভিন্ন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কৃষকরা রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম নরেন্দ্রপুরের মাশরুম ইউনিট বা বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ বায়ো টেকনোলজি, নিমপীঠে যোগাযোগ করতে পারেন।
কীভাবে মাশরুমের বেড বানাতে হবে?
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ছোট করে খড় কাটতে হবে। তার পর সেই খড় জীবাণুমুক্ত করতে হবে। খড়কে গরম জলে ফুটিয়ে তার পর চুন বা ফটকিরি জলে ডুবিয়ে নিয়ে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব। ফরমালিন কিংবা ব্যাভিস্টিন দিয়েও খড় জীবাণুমুক্ত করা যায়। খড় ও স্পনের স্তর তৈরি করে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের মুখ বেঁধে দিতে হবে। ওই ব্যাগের (সিলিন্ডার) গায়ে একাধিক ছিদ্র করে দিতে হবে। দরজা-জানালা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরের মধ্যে প্যাকেটগুলিকে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ২০-২৫ দিন পর দেখা যাবে, প্ল্যাস্টিক ব্যাগের ছিদ্র দিয়ে কুঁড়ি বেরিয়েছে। এই অবস্থায় প্যাকেটের গায়ে জল স্প্রে করতে হবে। চার-পাঁচদিনের মধ্যে মাশরুম বেরিয়ে যাবে। একবার মাশরুম কেটে নেওয়ার এক সপ্তাহ পর আবারও একই ব্যাগ থেকে মাশরুম মিলবে। এভাবে একটি ব্যাগ থেকে তিনবার মাশরুম পাওয়া যায়।
মাশরুম তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে। ঝিনুক মাশরুম চাষের জন্য ২৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা ও ৭০-৮০ শতাংশ আর্দ্রতা প্রয়োজন । দুধ মাশরুমের জন্য একই আর্দ্রতার প্রয়োজন হলেও তাপমাত্রা লাগে ৩৫ ডিগ্রি। বোতাম মাশরুমের জন্য অপেক্ষাকৃত অনেক কম তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রি লাগে। মাশরুম ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এতে খনিজ লবন, মিনারেল, প্রোটিন, ভিটামিন রয়েছে। একশো গ্রাম মাশরুমে ৪ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। মাশরুমের প্রোটিন খুবই সহজপাচ্য। তাছাড়া কোলেস্টরল, ফ্যাট একেবারেই কম। দুধ মাশরুম ও বোতাম মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। এই দুই প্রজাতির মাশরুম সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। স্বাদে মাংসের মতো।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ব্যাপক হারে মাশরুম চাষ করছেন। তাঁরা রেকর্ড উৎপাদন পাচ্ছেন। দুধ ও বোতাম মাশরুমের চাষ করছেন তাঁরা। বাড়ির আনাচে-কানাচে বা পরিত্যক্ত ঘরে মাশরুমের পরিচর্যা করছেন তাঁরা। স্বল্প খরচে ভালো দাম পেয়ে এখন তাঁরা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর। সহযোগিতায় রাজ্য কৃষি দপ্তরের আতমা প্রকল্প। আতমা প্রকল্পে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তাঁদের মাশরুম চাষের বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হচ্ছে।
মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নেওয়া মহিলারা জানিয়েছেন, ৫-৬ মাসের পুরনো ধানের খড় কেটে তাকে সিদ্ধ করে এর পর ঠাণ্ডা করে সেই খড়ে জিপসাম মেশাতে হবে। পলিথিনের প্যাকেটে একেবারে নীচে থেকে এক ইঞ্চি খড় তার পর মাশরুমের বীজ বা স্পন সাজাতে হবে। এভাবে দশটি স্তর সাজিয়ে তৈরি হবে একটি বেড। এবার বেডের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। দশদিন বাদে মাশরুম বের হলে বেডের মুখ খুলে দিতে হবে। ২০ দিন বাদে স্প্রে করে দুই দিন অন্তর জল দেওয়া দরকার। দুধ মাশরুমে জৈবসার হিসেবে কেঁচো সার আর বালি দেওয়া যেতে পারে। বোতাম মাশরুমে কিছুই লাগবে না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রতিটি বেড থেকে ২ কেজি করে তিনবার অর্থাৎ ৬ কেজি দুধ মাশরুম বা বোতাম মাশরুম পাওয়া যায়। বাজারে দেড়শো টাকা করে কেজি, অর্থাৎ ৬ কেজি মাশরুম বিক্রি করে ৯০০ টাকা আয় হতে পারে। বিভিন্ন স্কুলে এখন মিডডে মিলে মাশরুম দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রাজ্য সরকারের সুফল বাংলার স্টলে মাশরুম বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে।