গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
রাজ্য কৃষি দপ্তরের তন্তু ফসল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি অধিকর্তা (সদর) রামপ্রসাদ ঘোষ জানিয়েছেন, কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করলে অনয়াসেই পাটচাষকে লাভজনক করে তোলা যায়। যেমন, পাটের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে মুগ ডাল চাষ করা যেতে পারে। এতে কৃষকের বাড়তি আয় হবে। জমির আগাছা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এক্ষেত্রে পাটের রানি (এনজে ৭০১০) এবং মুগের টিএমবি-৩৭ জাতটি উপযুক্ত। কৃষকের জমিতে হাতেকলমে চাষ করে দেখা গিয়েছে যে, এই পদ্ধতিতে পাটের উৎপাদন একই রেখে বিঘা প্রতি ৬০-৮০ কেজি মুগ উৎপাদন করা সম্ভব।
পাটচাষে সমস্যা সমাধানে জমির অবস্থান ও বোনার সময় অনুযায়ী জাত নির্বাচন করতে হবে। সুরেন জাতটি খুবই ভালো। সেন্ট্রাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর জুট অ্যান্ড অ্যালাইড ফাইবার্স (ক্রাইজাফ)-এর বহু সারি বীজ বপন যন্ত্র দিয়ে সারিতে পাটবীজ বুনতে পারলে ভালো। এতে হেক্টর প্রতি ৩০-৩৫ কেজি বীজ লাগবে, যা অনেকটাই কম। বীজ বোনার আগে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা ১০ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে বুনতে হবে। এতে রোগের প্রকোপ কমবে।
মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সুষম সার (জৈবসার সহ) এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জলসেচ দিতে পারলে ফলন বাড়ে। ক্রাইজাফ নেল উইডার মেশিনের সাহায্যে প্রাথমিক অবস্থায় পাটের আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে খরচ কমে, ফলন বাড়ে। পাট বোনার ৪-৮ দিনের মধ্যে সারিতে বোনা পাটের জমিতে সারির মধ্যে নেল উইডারের মাধ্যমে সমস্ত আগাছা তুলে ফেলা যায়। এতে বিঘায় ১০-১২জন মজুর কম লাগবে। ছিটিয়ে বোনা পাটের ক্ষেত্রে পাটগাছ ও আগাছা যখন ২-৪ পাতা অবস্থায় থাকবে, তখন নেল উইডার যন্ত্র ব্যবহার করে আগাছা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সারি তৈরি হয়ে যাবে। এতে মাটির রস ধরা থাকবে। বাড়তি চারা উঠে যাবে। ফলে ফলন বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই লাভ বাড়বে। রোগপোকা নিয়ন্ত্রণে আইপিএম পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সঠিক সময়ে (৯০-১২০ দিন) পাট কেটে জমিতে ফেলে রাখলে পাটের পাতা ঝরে যাবে। তার পর বাণ্ডিল বেঁধে জাঁক দিতে হবে। পাট পচানোর জন্য আধুনিক প্রযুক্তি বিশেষ করে ক্রাইজাফের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে অল্প দিনেই পাট পচবে এবং আঁশের মানও ভালো হবে।
ক্রাইজাফের বিজ্ঞানী এ কে ঘোড়াই জানিয়েছেন, জলদি পাট বোনার সময় ১৫-২৫ মার্চ। উপযুক্ত জাত এনজে ৭০১০ এবং জেআরও ২০৪। সিড ড্রিল মেশিনের সাহায্যে বুনলে বিঘায় বীজ লাগবে ৩-৫ কেজি। পাট বোনার স্বাভাবিক সময় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। উপযুক্ত জাত জেআরও ২০৪, জেআরও ৫২৪, সিও ৫৮, এস ১৯ প্রভৃতি। যাঁরা একটু দেরিতে পাট লাগাতে চান, তাঁদের বুনতে হবে মে মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে। বৃষ্টির উপর নির্ভর করে মাটিতে যাতে রস থাকে, তা না হলে বীজ অঙ্কুরোদগম ভালো হবে না। বীজ বোনার আগে ১০০টি বীজ নিয়ে একটি জলের পাত্রে ২৪-৩৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। যদি দেখা যায়, ৯০টির বেশি বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে, তা হলে বাকি বীজ জমিতে বোনা যেতে পারে। নতুবা ওই বীজ বাতিল করতে হবে। জৈবসার দিয়ে জমি ভালোভাবে ২-৩ বার চাষ দিয়ে নিতে হবে। তার পর পূর্ববর্তী ফসলের গোড়া ও আগাছা বেছে জমি সমান করতে হবে। ঠিকমতো অঙ্কুরোদগমের জন্য বীজ বোনার আগে কিংবা পরে সেচ দিতে হবে। মেশিনে বুনলে বীজ ও সারির দূরত্ব নিয়ে ভাবার কিছু নেই। মেশিনেই ওসব ঠিক করা থাকে। সারের মাত্রা এনপিকে ৬০:৩০:৩০। তন্তুর পরিমাণ বাড়াতে হেক্টরে ৩০ কেজি সালফার প্রয়োগ করতে পারলে ভালো।
বীজ বোনার আগে ও পরে সেচ দেওয়া ছাড়াও আরও ২-৩টি সেচ দেওয়া দরকার। এক হেক্টর জমিতে পাটচাষ করলে ফলন মেলে ৩০-৩৫ কুইন্টাল। এক হেক্টর জমিতে পাটচাষের জন্য আনুমানিক খরচ ৬০ হাজার টাকা। হেক্টরে লাভ ৪০-৬০ হাজার টাকা।