ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
ছবির প্রথমার্ধ যদি নায়িকার অপাপবিদ্ধ কৈশোরের উচ্ছ্বল প্রদর্শনী হয়, দ্বিতীয়ার্ধ তাহলে প্রেমহীন পৃথিবীর শুষ্ক মাটিতে তার হিসেবি পদসঞ্চার। বেশ কিছু প্রতীকী দৃশ্যভাবনার মাধ্যমে জীবনের এই দুটি স্তরের সার্থক বিন্যাস ঘটানো হয়েছে। কৈশোরের অবুঝ ও একতরফা প্রেমের ভিত একটু নড়ে যেতেই নায়িকা চুলের বেণীর লাল ফিতে খুলে ছুঁড়ে ফেলে। ফিতের সঙ্গেই সে বিসর্জন দেয় তার কৈশোর এবং কৈশোরের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা সব অভ্যাস, বিশ্বাস ও আবেগকে। প্রথমার্ধের অকপট কিশোরীর মুখ সম্পূর্ণ মেক-আপহীন। দ্বিতীয়ার্ধে অভিজ্ঞতার ধুলো-মাখা যুবতীর মুখে চড়া ফাউন্ডেশন। টাইপ রাইটারের যান্ত্রিক শব্দকে এড়িয়ে যেতে কানে তুলো গুঁজে নেয় সে। বহির্জগতের অবাঞ্ছিত কোলাহল থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার কৌশল তখন তার করায়ত্ত। এমনকী চশমার ভিজে কাচের ভিতরে শুকনো চোখও প্রমাণ করে, পৃথিবীর সব আন্দোলনে সে আর নিজে আন্দোলিত হয় না। বইয়ের না-পড়া পাতারা দমকা হাওয়ায় বারবার ফড়ফড় করে উড়তে থাকে সমগ্র ছবি জুড়ে। আমাদের চেতনায় জায়গা না পাওয়া এক একটা জ্ঞানবিন্দু ওরা।
কেরিয়ারের এই পর্যায়ে এসে স্কুল-ছাত্রীর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে মাত্রাজ্ঞানের সামান্যতম ভুলচুকেই প্রবল সমালোচিত হতে পারতেন শুভশ্রী। কিন্তু তা হয়নি। আবার পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ছবিতে এত ডিটেলিং প্রায় অবিশ্বাস্য। বাণিজ্যিক হিসেব-নিকেশের বাইরেও শুধুমাত্র উৎকর্ষের গুণে এই ছবি রাজ ও শুভশ্রী দু’জনের জন্যই একটি মাইলস্টোন হয়ে থাকবে। টলিউডে ঋত্বিক এখন সম্পূর্ণ ‘ডিফারেন্ট লিগ প্লেয়ার’। স্বপ্নাহত স্বপ্নদর্শী থেকে দায়মুক্ত মৃতদেহ, প্রতিটি দৃশ্যে ঋত্বিকের তুলনা তিনি নিজেই।
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছবির মেজাজের সঙ্গে মানানসই। অর্কপ্রভ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় তাঁরই গাওয়া ব্যথাতুর রোম্যান্টিক আবেগের গান ‘সেই তুমি’। শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে ‘তোমাকে’ গানটিতে আবার চিরন্তন অবুঝ প্রেমের খরস্রোতা প্যাশন। এই গানটির ‘মেল ভার্সন’ গেয়েছেন অর্ক।
ঝাঁ-চকচকে বিদেশি লোকেশন ছাড়াই ঘিঞ্জি তিলোত্তমার ঘরবাড়ি, অলিগলি ও আকাশরেখাকে পরম যত্নে সাজিয়েছেন সিনেমাটোগ্রাফার মানস গঙ্গোপাধ্যায় ও সম্পাদক সংলাপ ভৌমিক। পদ্মনাভ দাশগুপ্তের চিত্রনাট্য ও সংলাপ সপ্রতিভ। ‘ওই বাড়িতে আমার একটা না হওয়া সংসার পড়ে আছে।’ এই সংলাপটি দর্শকের মনের গভীরে রেখাপাত করে। তবে প্রিয়াঙ্কা পোদ্দার ও অর্ণব ভৌমিকের মূল গল্পের কিছু জায়গায় কার্য-কারণ সম্পর্কগুলো বেশ আলগা।