পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
২০০৬ সালে বিক্রম চন্দ্রের বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। গত বছর প্রথম সিজন শেষ হয়েছিল অনেক প্রশ্ন নিয়ে। পৌরাণিক কাহিনী, মুম্বইয়ের ৪০ বছরের রাজনীতি, আন্ডারওয়ার্ল্ড, দাঙ্গা ঘুরে তা শেষ হয়েছিল বড় কোনও হামলার ছকের কাছে এসে। গত ১৫ আগস্ট দ্বিতীয় সিজন ঝড় তুলে দিয়েছে ওয়েব দুনিয়ায়। এবারে আগের সিজনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির সূত্র ধরে ধরে জোড়া হয়েছে।
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি এবং সইফ আলি খান। গোপাল মঠের ভগবান গণেশ গাইতোণ্ডে এবং পুলিস অফিসার সরতাজ সিং। একজনের গল্প এগিয়ে আসছে অতীত থেকে বর্তমানের দিকে। আর একজনের এগিয়ে চলেছে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে। হলিউড পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের কায়দায় যেভাবে গল্প এগিয়েছে, তাতে মাঝেমধ্যেই সময় গুলিয়ে যেতে বাধ্য। এমন দুরন্ত সম্পাদনার যাবতীয় কৃতিত্ব অবশ্য এডিটর আরতি বাজাজের।
প্রথমটির মতো দ্বিতীয় সিজনেও রয়েছে আটটি পর্ব। প্রতিটি পর্বের নাম হিন্দু-মুসলিম-ইহুদিদের কোনও না কোনও পৌরাণিক চরিত্রের নামে। শুধু শেষ পর্বটি ভারতের ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ এক বিদেশির নামে। প্রতিটি পর্বের সঙ্গে এই নামগুলির সংযোগ রয়েছে। গল্প শুরু হচ্ছে ১৯৯৪ সাল থেকে, যখন গাইতোণ্ডে মুম্বই থেকে অনেক দূরে মাঝ সমুদ্রে একটি নৌকায় রয়েছে। আর সরতাজের গল্পে হামলা হতে আর ১২ দিন বাকি। গাইতোণ্ডের ‘তিসরা বাপ’ গুরুজিকে আগের সিজনে অল্প দেখা গিয়েছিল। এবারে তিনিই এই খেলার কাণ্ডারি। যতক্ষণ পর্দায় রয়েছেন খারাপ পরচুল সত্ত্বেও পঙ্কজ ত্রিপাঠির (গুরুজি) দিক থেকে চোখ সরবে না। তিনি সত্যযুগ ফেরানোর স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু তার জন্য যে বলিদান দিতে হবে! ২৫ বছর ধরে তিনিই প্ল্যান করছেন হামলার। যে হামলার সেনাপতি বাছা হয়েছে গণেশ গাইতোণ্ডেকে। কেনিয়ায় ব্যবসা গুটিয়ে শেষমেষ গুরুজির ক্রোয়েশিয়ার আশ্রমে শান্তি ফিরে পায় সে। আশ্রমে গুরুজির দৈহিক সান্নিধ্যও কামনা করে গাইতোণ্ডে। আর পায় গোচির নেশা। যে নেশায় সে হারিয়ে যায়। ওদিকে, সরতাজ জানতে পারে মুম্বইতে পরমাণু হামলা হতে চলেছে। যার পরিকল্পনা করছে পাক কমান্ডার শাহিদ খান। যাকে সাহায্য করে ম্যালকম, ভোঁসলে এবং খানিকটা পারুলকর। গুরুজির আশ্রমে এই পরিকল্পনার অংশ ছিলেন ভোঁসলে, ত্রিবেদি, বাতিয়া, ম্যালকম, এমনকী সরতাজের বাবা দিলবাগও। কী সব গুলিয়ে গেল তো? এ তো সবে শুরু। এবার মূল গল্পে অন্তত ১২টি সাবপ্লট রয়েছে। র এজেন্ট যাদব ম্যাডাম, জোজো, ত্রিবেদি, বাতিয়া, মাজিদ, পারুলকর ও ভোঁসলে, মুত্থু, ম্যালকম, পাকিস্তানি কমান্ডার শাহিদ খানদের গল্পগুলোর অধিকাংশই শেষ হয়নি।
নিজের শহর মুম্বই ধ্বংস হয়ে যাবে, এই ভয়ে গাইতোণ্ডে শেষে এই প্ল্যানের বিরোধিতা শুরু করে। নিজেকে অশ্বত্থামা দাবি করে সে। অথচ গুরুজির লেখা বইতে অশ্বত্থামা হলেন সরতাজের বাবা। সবদিক থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয় গাইতোণ্ডের সঙ্গে। তাই সে পুরো পরিকল্পনা বলে দেয় সরতাজকে। এর মধ্যে শুরু হয় সরতাজের মানসিক সমস্যা। শান্তি খুঁজতে সেও হাজির হয় গুরুজির আশ্রমে বাতিয়ার কাছে (কল্কি কেঁকলা)। গোচির ফাঁদে পড়ে যায় সরতাজও। শেষে পড়ে থাকে গল্পের শেষ পাঁচ মিনিট। শেষপর্যন্ত কী হল সে উত্তর অবশ্য মেলে না। কিন্তু এখানেই মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন নীরজ। খোদ নোলানও যে ফাঁদে পা দিয়েছেন, সেটিকে সযত্নে এড়িয়ে যেতে পেরেছেন এই পরিচালক। জিইয়ে রেখেছেন তৃতীয় সিজনের আশা-নিরাশার দোলাচল।
এখানে কয়েকটি কথা না বললেই নয়। এক, গুরুজি এবং বাতিয়ার চরিত্র অনেকটাই ওশো এবং মা আনন্দ শীলার অনুকরণে তৈরি। আশ্রম, নেশা, যৌনতা এবং সন্ত্রাসবাদী যোগ— সব মিলই দেখা যায়। গোচি অনেকটা আমাজন অববাহিকায় মেলা হ্যালুসিনেশন ড্রাগ আয়াহুয়াসকার আদলে তৈরি। এবারের সিজনের সেরা আবিষ্কার র এজেন্টের চরিত্রে অম্রুতা সুভাষ এবং জোজোর চরিত্রে সুরভীন চাওলা। পর্দায় স্বল্প সময় উপস্থিতির জন্যই সম্ভবত ছাপ ফেলতে ব্যর্থ হয়েছেন রণবীর শোরের মতো দক্ষ অভিনেতা। প্রথম সিজনের তুলনায় এবার গাইতোণ্ডে অনেকটাই নিষ্প্রভ। অনুরাগ কাশ্যপ স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে শুরু করেও গতি হারিয়ে ফেললেন এখানে। তুলনায় সরতাজ অনেক বেশি গতিশীল। সেই কারণেই দর্শক তুলনা টেনে সমালোচনা শুরু করেছেন। মোট কথা গতবারের মতো শুরু থেকে টানটান ব্যাপারটা নেই। কিন্তু গুরুজি না গাইতোণ্ডে কে শেষ হাসি হাসল, তৃতীয় সিজন না আসা পর্যন্ত সেই কৌতূহলের বলিদান অবশ্য আপনাকে দিতেই হবে। অতএব, জপ করুন অহম্ ব্রহ্মাস্মি!