কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
এক বলে ২২ রান বাকি’র সেই স্কোরবোর্ড প্রতীকী ছবি হয়ে রয়েছে। ঠিক যেমন এবারও প্রতীকী ছবি হয়ে রয়ে গেল জস বাটলারের স্টাম্প ভাঙার দৃশ্য। প্রাণপণ মরিয়া চেষ্টা করেও ক্রিজে পৌঁছতে পারলেন না মার্টিন গাপ্টিল। সেই গাপ্টিল, সেমিফাইনালে যাঁর থ্রোয়ে রান আউট হন ধোনি আর স্বপ্নভঙ্গ হয় ভারতের। কিন্তু এবার বাউন্ডারি বেশি মারার সুবাদে বিশ্বকাপটাই জিতে নিলেন মর্গ্যানরা। আর যা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব সেলিব্রিটিরা। পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের রসিক ট্যুইট,‘বৃষ্টির জন্য আমাদের শ্যুটিংও অনেকসময় ক্যান্সেল হয়ে যায়। আমরা কিন্তু তখন ডাকওয়ার্থ লুইস মেথড ব্যবহার না করে পরের দিন পুনরায় শ্যুটিং করি।’
ইংল্যান্ড ইনিংসের শেষ ২ বলে ২টো রান আউট ম্যাচ টেনে নিয়ে গিয়েছিল সুপার ওভারে। সুপার ওভারে শেষ বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ২ রান। আর্চারের বলটা চালিয়েই ২ রানের জন্য ছুটলেন গাপ্টিল, কিন্তু রান আউট হয়ে গিয়ে ম্যাচ টাই হল। কিন্তু পুরো ম্যাচে কম বাউন্ডারি মারায় স্বপ্নভঙ্গ হল নিশামদের। ইংল্যান্ডের ২২ বাউন্ডারির পাশে নিউজিল্যান্ড ১৬টি বাউন্ডারি মারায় জয়ী ঘোষণা করা হল ইংল্যান্ডকে। আর এই নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশিষ্টরা তুলোধনা করছেন ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি’কে। ‘সুপার ওভারে একটা দেশ যদি বেশি বাউন্ডারি মেরেছে বলে ম্যাচ জিতে যেতে পারে, তাহলে কেন একটা দেশকে জয়ী ঘোষণা করা হবে না যারা আসল ম্যাচটায় কম সংখ্যক উইকেট হারিয়ে রানটা করল? নিয়ম নিয়ে সত্যিই গুরুতর সমস্যা রয়েছে আইসিসি-র’, যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য অনুরাগের। আইসিসি’কে সরাসরি ‘জোক’ বলছেন প্রাক্তন কিউই অলরাউন্ডার স্কট স্টাইরিশ। বিরক্ত প্রাক্তন অজি ব্যাটসম্যান ডিন জোন্সও। নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে জোন্স এই নিয়মকে ‘আনফেয়ার’ বলে প্রশ্ন তুলেছেন,‘ডাকওয়ার্থ লুইস সিস্টেম তো রান আর উইকেট হারানোর হিসেবে হয়। সেখানে ম্যাচের নিষ্পত্তি কীভাবে বাউন্ডারি মারার নিরিখে হল?’ প্রাক্তন ব্ল্যাক ক্যাপস অলরাউন্ডার ডিওন ন্যাশের মনে হচ্ছে তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। ‘একদম খালি খালি লাগছে। মনে হচ্ছে প্রতারিত হয়েছি। এটা যেন টস করে ভাগ্য নির্ধারনের মতো’, বলছেন ন্যাশ। পরে কিছুটা শান্ত হয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, এখন অবশ্য অভিযোগ করে লাভ নেই। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই নিয়ম ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আসলে কেই বা ভেবেছিল মূল ম্যাচ টাই হয়ে যাওয়ার পরে আবার সুপার ওভারও টাই হবে! তবে গতবার প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও হেরে যাওয়া নিউজিল্যান্ড দলের সদস্য কাইল মিলস মনে করেন, ক্রিকেট যেমন রান আর উইকেটের খেলা তাতে রান সংখ্যায় টাই হলে কে, কটা উইকেট হারিয়েছে সেটা দিয়েই জয়ী ঠিক করা উচিত। ক্রিকেটের এহেন নিয়মে ক্ষুব্ধ গৌতম গম্ভীরও। ‘এরকম একটা নেল-বাইটিং ক্রিকেট ম্যাচ কীভাবে বাউন্ডারি বেশি মারার নিরিখে ফয়সালা হতে পারে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। জঘন্য নিয়ম’, রাখঢাক না করেই বলছেন ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতীয় দলের সর্বাপেক্ষা রানসংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান। আবার সেই বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট যুবরাজ সিংহের গলায় অন্য সুর। নিয়মটা পছন্দ হয়নি ক্যান্সারজয়ী ক্রিকেটারেরও। তবে তিনি সতীর্থ গম্ভীরের মতো অতটা আক্রমণাত্মক নন। যুবরাজ বলছেন, ‘নিয়মটার সঙ্গে আমিও সহমত নই। কিন্তু নিয়মটা নিয়মই। নিউজিল্যান্ডকে সমর্থন করছিলাম, ওরা শেষপর্যন্ত দারুণ লড়লও। ইংল্যান্ডকে অভিনন্দন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য।’ নিয়ম বদলের পক্ষে সওয়াল করছেন এবারের বিশ্বকাপে সেরা রানসংগ্রাহক রোহিত শর্মাও। ট্যুইটারে ‘হিটম্যান’ লিখেছেন, ‘ক্রিকেটের কিছু নিয়ম নিয়ে এবার সিরিয়াসলি ভাবা উচিত।’ রোহিতের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন অভিনেতা অনুপম খের সহ বহু বিশিষ্ট। আবার অভিনেতা শাহিদ কাপুর মনে করছেন দুই দলকেই জয়ী ঘোষণা করা উচিত ছিল। ট্যুইটারে কবীর সিং লিখছেন, ‘ইংল্যান্ড যদি বেশি বাউন্টারি মেরে থাকে তাহলে নিউজিল্যান্ড তো বেশি উইকেট নিয়েছে। তাহলে কেন একটা দলকে বাছা হবে?’ শাহিদের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন পরিণীতি চোপড়া, অর্জুন কাপুররা।
অন্যদিকে কালকের এই নিয়ম বিতর্কে ক্ষুব্ধ টলিউডও। বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে যারা নিয়মিত খেলা ফলো করেন তাদের মধ্যে অগ্রণী পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ‘টেনিস বলের পাড়া ক্রিকেটেও এই ধরনের হাস্যকর নিয়ম হয় না’, সাফ বলছেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপের নির্ণায়ক পদ্ধতিই শুধু নয় আইসিসি’র সেরা খেলোয়াড় বাছাই নিয়েও আপত্তি রয়েছে জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালকের। এবার বিশ্বকাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট বাছা হয়েছে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে, যেটা সঙ্গত কারণেই পছন্দ হয়নি তাঁর। ট্যুইটারে ক্ষোভ উগরে দিয়ে সৃজিত লিখেছেন, ‘শাকিবকে (বাংলাদেশের অলড়াউন্ডার শাকিব আল হাসান) টপকে কেন? এটা কী মস্করা হচ্ছে! ঠিক করতে পারছি না কোনটা বেশি খারাপ—এটা, নাকি বাউন্ডারি বেশি মারার জন্য বিশ্বকাপ জিতে নেওয়াটা?’
বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন আইসিসি আম্পায়ার সাইমন টাফেল। আসল ম্যাচে শেষ ৩ বলে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৯ রান। বোল্টের বল ডিপে ঠেলে দ্বিতীয় রান নেওয়ার সময় গাপ্টিলের ছোঁড়া বল বেন স্টোকসের গায়ে লেগে বাউন্ডারি হয়ে যায়। মাঠের আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা আর মারিয়াস এরাসমাস ইংলযান্ডকে ৬ রান দেন। যেটাকেই ‘পরিষ্কার ভুল’ বলছেন টাফেল। এমসিসি আইনের সাব-কমিটির সদস্য প্রাক্তন অস্ট্রেলিয় আম্পায়ার টফেল স্বীকার করছেন, ৬ রানের বদলে ইংল্যান্ডের পাওয়া উচিত ছিল ৫ রান। ‘ইংল্যান্ডকে ৫ রান দেওয়া উচিত ছিল, ৬ রান নয়। এটা একটা পরিষ্কার ভুল। জাজমেন্ট এরর’, একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন পাঁচবার আইসিসি আম্পায়ার অব দ্য ইয়ার পুরস্কারজয়ী টফেল। যদি সেটাই হতো, তাহলে মূল ম্যাচের শেষ বলের আগের বলটায় স্ট্রাইক নিতেন আদিল রশিদ, কোনওভাবেই বেন স্টোকস নন। তাহলে কিন্তু ফলাফল বদলে গেলেও যেতে পারত!
জোরে বোলারদের সহায়ক পিচ। সেইসঙ্গে সুইং বোলারদের চনমনে করে দেওয়ার মতো আবহাওয়া। রবিবার সকালের লর্ডসে যখন মর্গ্যান আর উইলিয়ামসন টস করতে যাচ্ছেন, তখন আকাশ কালো করে এসেছে। হাড় হিম করা সবুজ পিচে টস জিতে উইলিয়ামসন বললেন ‘আমরা ব্যাটিং করছি।’ সকলে অবাক। এটা কী করলেন উইলিয়ামসন? হাতে ভালো ভালো বোলার থাকা সত্ত্বেও এই উইকেটে ব্যাটিং নিয়ে বসলেন? তার ওপর আগের ম্যাচেই ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে ধরাশায়ী করে এসছে? উইলিয়ামসন কিন্তু তখনই তাঁর সিদ্ধান্ত ব্যাক করে বলেছিলেন, ‘কে প্রথমে ব্যাট করল আর কে পরে, তা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেবে না। আসল হল কারা ভালো চাপ নিতে পারবে। ফাইনালে সেটাই পার্থক্য গড়ে দেবে।’ লর্ডসে যতই ম্যচ এগচ্ছিল, উইলিয়ামসনের ‘সাহসী’ মন্তব্যই যেন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল। চাপ নিয়েও অবশ্য শেষে জেতা হল না তাঁর। ভাগ্যজয় বোধহয় সবক্ষেত্রে সাহসীদের হয় না!