চন্দন রায় সান্যাল দিল্লিবাসী বাঙালি। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর দু’টি ছবিতে অভিনয় করার পরে তিনি আরও একটি বাংলা ছবির শ্যুটিংয়ে কলকাতায়। আগস্টে মুক্তি পাচ্ছে তাঁর বলিউডের ছবি ‘জাবারিয়া জোড়ি’। এছাড়া বেশ কিছু ওয়েব সিরিজে তাঁকে দেখা যাবে। তিনি জীবনবোধ থেকে শুরু করে অভিনয় নিয়ে কথা বললেন। শুনলেন সোহম কর।
 আপনার ফেসবুক জুড়ে তো এখন শুধু কলকাতার অলি-গলির ভিডিও।
 (হাসি) হ্যাঁ। যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছিলাম। আসলে আমার ‘ডিপ সিক্স’ ছবির পরিচালক মধুজা মুখোপাধ্যায় যাদবপুরের ফিল্ম স্টাডিজের প্রাক্তনী। সেই আমায় নিয়ে গিয়েছিল।
 আপনি তো বেশ অন্যরকমের চরিত্র করেন। এই ছবির চরিত্র কতটা আলাদা?
 এই চরিত্রটা তার প্রাক্তন স্ত্রীকে এখনও ভীষণ ভালোবাসে। এককথায় ছেলেটি লুজার। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুমহলে ছেলেটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। এখন সে একটি হেরে যাওয়া জীবন কাটায়।
 চরিত্রের কোন বিষয়টা আপনাকে সবচেয়ে আকর্ষণ করেছে?
 একটা মানুষ তার প্রাক্তন স্ত্রীকে অসম্ভব ভালোবাসে। অনেক সময় দেখবেন, আপনি একজনকে খুবই ভালোবাসেন কিন্তু সেই মানুষটা আপনার থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। আপনার জীবনটা ওখানেই আটকে আছে। এক্ষেত্রে আপনি অসহায়। আসলে একসঙ্গে কেউ কাউকে ছেড়ে চলে যায় না। যে কোনও একজনকে কষ্ট পেতে হয়।
 শ্যুটিং কতদিন চলছে?
 মোটামুটি আট দিন মতো। ছবিতে আমার সঙ্গে তিলোত্তমা সোম অভিনয় করছেন। ওঁর সঙ্গেই বেশিরভাগ দৃশ্য।
 বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবি ‘উড়োজাহাজ’ তো বিশ্বের সমালোচকদের কাছে প্রশংসা পাচ্ছে। আপনার চরিত্র নিয়ে কীরকম মন্তব্য শুনছেন?
 গত মাসে তো এই ছবি নিয়ে নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলাম। ওখানে আমি সেরা অভিনেতা বিভাগে নমিনেটেড হয়েছিলাম। লন্ডনে ভারতীয় চলচ্চিত্র উত্সবে দেখানো হয়েছে। বুদ্ধদেববাবুর ছবির তো আলাদারকমের দর্শক আছে। অনেক মানুষ ‘আর্ট হাউজ’ ছবি দেখতে চান। মুম্বইয়ে ‘উড়োজাহাজ’ তিনটে শোতে দেখানো হয়েছিল এবং তিনটেই হাউজফুল ছিল। অনেক দর্শক তো দু’বার করে দেখেছেন।
 আপনি ‘টোপ’ ছবিতে একটা অদ্ভুত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যে গাছে থাকে। আবার ‘উড়োজাহাজ’-এ একজন মেকানিক, আবার একটি ওয়েব সিরিজে অটোচালক। ‘মান্টো’র মতো ছবিতেও ছিলেন। প্রতিটা চরিত্রের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। নিজেকে কতখানি অধ্যাবসায়ের মধ্যে রাখতে হয়?
 এই চরিত্রগুলো করার জন্য আমায় সারাক্ষণ একটা চাপের মধ্যে থাকতে হয়, সারাক্ষণ নিজের আবেগ বিনিয়োগ করতে হয়। আজ আমায় অটো চালাতে হচ্ছে। তার আগে ঝাড়খণ্ডের একটা জঙ্গলে ভাঙা প্লেনে বসে আছি আবার গাছে বাঁদরদের সঙ্গে থাকছি। আমায় বিভিন্ন পরিচালক নানা রকমের চরিত্র অফার করছেন। অনেকে তো সব ছবিতেই হিরো কিংবা ভিলেন হচ্ছে। মানে একটা টাইপকাস্ট। আমি কিন্তু সেই বিষয়টা ভাঙতে সক্ষম হয়েছি। আমি চাই ভালো কাজ করতে। একজন অভিনেতা হিসেবে আমি আমার স্কিল দেখাতে চাই। নানারকমের চরিত্র করাটাই এখন আমার উদ্দেশ্য।
 একটা জীবনে অনেকগুলো জীবন দেখার স্বাদ উপভোগ করছেন। যখন অভিনয়ে আসবেন বলে ঠিক করেছিলেন তখনই কি সচেতনভাবে এটাকেই উদ্দেশ্য করেছিলেন?
 প্রথমে তো আমার কাছে অপশন ছিল না। তখন যেটাই পেয়েছি মনে হয়েছে ভালো করে করি। তারপর ধীরে ধীরে প্রশংসা পেয়েছি। এখন একটা চিত্রনাট্য হাতে পেলে এইসব ভাবি, এই গল্পের দর্শক আলাদা হতে পারে কিংবা এই গল্প নিয়ে বেশ অন্যরকম কিছু করা যেতে পারে। সাধারণত একজন অভিনেতাকে দেখে দর্শক পর্দায় চিনতে পারে। আমি চেষ্টা করি চরিত্রের মধ্যে এমনভাবে মিশে যেতে যাতে কেউ চিনতে না পারে। সেদিন আমায় একজন পরিচালক বলছিলেন, রাতে আমি তোমার একটা ছবি দেখছি আর ভাবছি এই ছেলেটা কে, খুব চেনা লাগছে। পরে দেখি, আরে এর সঙ্গে তো বিকেলেই দেখা হল, এ তো চন্দন।
 আপনি তো বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর দুটো ছবিতে কাজ করলেন। অন্য পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কখনও মনে হয়েছে যে, আমি তো বিশ্বখ্যাত একজনের ছবিতে কাজ করে এসেছি। আমার আর কী জানার আছে!
 বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত নিজে একটা ফিল্ম স্কুল। ওই ফিল্ম স্কুলে অ্যাডমিশন পেয়ে বেরনো খুবই চাপের বিষয়। একটা ছবির পরেই আরও একটা ছবিতে অভিনয় করা আমার কাছে খুবই চ্যালেঞ্জের। যাঁরা সিরিয়াস ছবি বোঝেন, তাঁরা এই বিষয়টা নিয়ে খুবই বাহবা দিয়েছেন। আর নিঃসন্দেহে এটা আমার কাছে খুবই গর্বের। সবারই আলাদা চিন্তাভাবনা থাকে। এরকম কিছু আমার কখনওই মনে হয়নি। আমার কাছে মূল বিষয় হল গল্প। বিশাল ভরদ্বাজ, ইমতিয়াজ আলির মতো পরিচালক ডাক পাঠালে তো হ্যাঁ বলবই।
 বাংলা ছবি দেখেন?
 খুব একটা দেখা হয় না। আমি তো পুরনো ছবিই দেখে শেষ করতে পারছি না। (হাসি) সেদিন রবি ঘোষের কথা হচ্ছিল। আমি কিন্তু জনপ্রিয় ছবি ছাড়া রবি ঘোষের অভিনয় দেখিনি। সেগুলো দেখছি।
 আগামী দিনে কী কাজ করছেন?
 এখন তো ‘ডিপ সিক্স’ করছি। তারপরে বেশ অনেকগুলো ওয়েব সিরিজের অফার এসেছে। আমি চিত্রনাট্য পড়েছি তবে এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। কিছু চিত্রনাট্য বেশ ভালো। কথা চলছে। ‘জাবারিয়া জোড়ি’ তো আগস্ট মাসে মুক্তি পাচ্ছে। জানেন তো, আমি একটা জিনিস লক্ষ করলাম হিন্দি ছবির প্রোডাকশন অনেক কমে গিয়েছে তার কারণ ইন্টারনেট। মুম্বইতে তো ছবির হোর্ডিংয়ের থেকে ওয়েব সিরিজের হোর্ডিং বেশি থাকে। আগে আমায় প্রতি মাসে দু-তিনজন লোক স্ক্রিপ্ট পাঠাত। এখন সেটা কমে গিয়েছে। এখন প্রত্যেক তিন দিনে আমায় একটা ওয়েব সিরিজ অফার করা হয়।
 মানে আপনি বলছেন ওয়েবই ভবিষ্যত্?
 আপনি দেখুন না, ভেঙ্কটেশ, যশরাজ, ধর্মা এই বড় বড় হাউজগুলো ছাড়া যারা ছবি করছে তারা কেন থিয়েটারে রিলিজ করতে যাবে? যেখানে মাত্র দু’সপ্তাহ দেখা যাবে। তার চেয়ে ভালো ইন্টারনেট।
 বিপুল সংখ্যায় লোক যখন একটা জিনিসের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে যেখানে আবার কোনও বাধা-নিষেধ নেই, তার ফলে কি মধ্যমেধার চর্চা শুরু হচ্ছে না?
 হচ্ছে। কিন্তু বিষয়বস্তু যদি ভালো হয় তাহলেই সেটা মানুষের কাছে পৌঁছবে। ইন্টারনেটে তো মানুষ কোনটার কত ভিউ দেখতে পায়। কাজেই ভালো জিনিসটাই এগিয়ে থাকবে। মধ্যমেধার জায়গা কম।